এবারের কাতার বিশ্বকাপের এক একটি ভেন্যুর ধরন একেক রকম। কোনটির সাথে কোনটির মিল নেই। তবে একেকটির রয়েছে একেক রকমের ইতিহাস। এই যেমন ৯৭৪ স্টেডিয়াম। দূর থেকে দেখলে ঠিক স্টেডিয়াম মনে হবেনা। চারদিকে কন্টেইনারের সারি। একটার পাশে আরেকটা, উপরে আরেকটা, সারি সারি সাজানো। সমুদ্র বন্দর এলাকায় যেমন দেখা যায়। কিন্তু এর ভেতরেই সবুজ আঙিনা। কন্টেইনারগুলো হচ্ছে গ্যালারি। আর সেখানেই করা হয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের বসার জায়গা। এখানে বসে তারা নিজেদের দলকে অনুপ্রেরণা যোগান।
কিন্তু ‘স্টেডিয়াম ৯৭৪’ নামের এই মাঠটি বিশ্বকাপের পর ‘গল্প’ হয়ে যাবে। শুধু ইতিহাস হয়েই থাকবে। থাকবেনা কোন স্মৃতি। কাতার বিশ্বকাপের সাত ম্যাচের ভেন্যু ছিল এই ৯৭৪ স্টেডিয়াম। মেক্সিকো-পোল্যান্ড ড্র ম্যাচ দিয়ে শুরু। আর গত সোমবার ব্রাজিল-দক্ষিণ কোরিয়া ম্যাচ দিয়ে শেষ। এবারের আসরে এখানে আর কোনো ম্যাচ হবে না। এই স্টেডিয়ামটিও ইতিহাসে থাকবে । শুধু অস্তিত্বহীন এক নাম হয়েই থাকবে।
কাতার বিশ্বকাপের আটটি স্টেডিয়ামের মধ্যে এর নামটি বড়ই অদ্ভূত। লু্সাইল, আল জানোব কিংবা খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের মতো নাম নয় এটির। নয়শ ৭৪টি শিপিং কনটেইনার দিয়ে তৈরি বলে এর নাম স্টেডিয়াম ৯৭৪। ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসে এটিই একমাত্র স্টেডিয়াম, যেটি পুরোপুরি অপসারণযোগ্য। বিশ্বকাপের পর এই কনটেইনারগুলো সরিয়ে ফেলা হবে। পুনরায় ব্যবহার করা হবে আগের কাজে। এমন কথাও শোনা যাচ্ছে, যে দেশগুলি স্টেডিয়াম নির্মাণে অসমর্থ, চাইলে এর অংশগুলো তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হবে। সেটা হলে হয়তো এশিয়ার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে এই কনটেইনারের টুকরোগুলো।
কিন্তু ইতিহাসে ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতিতে ঠিকই ৪৪ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই মাঠ রয়ে যাবে গল্প হয়ে। কনটেইনারদের দিয়ে বানানো বলে এর গায়ে নান্দনিকতার ছোঁয়া তেমন নেই। আবার একেবারে দৃষ্টিকটুও নয় এটি দেখতে। হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কয়েক মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামের কনটেইনারের ভেতর থেকে উঁকি দিলে উপসাগরীয় উপকূল এবং পশ্চিম উপসাগরীয় আকাশচুম্বী ভবনগুলির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়। মাঠের প্রবেশপথেও আছে পানির ফোয়ারা। ব্রাজিল সমর্থকদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে এই স্টেডিয়াম। কারন এই আঙিনাতেই দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছে তারা।
পোল্যান্ডের বিপক্ষে ‘ফাইনালে’ রূপ নেওয়া গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটি জয়ের জন্য আর্জেন্টাইনদের স্মৃতিতেও অমলিন থাকবে এই স্টেডিয়ামটি। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের আলেঙিস মাক আলিস্তের, হুলিয়ান আলভারেস, ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপে, পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর, কিংবা ব্রাজিলের কাসেমিরোর স্মৃতিতে অটুট থাকবে স্টেডিয়াম-৯৭৪।
অনাগত দিনে তাই রাস দো আবুদ স্টেশনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এই প্রান্তরে চোখ পড়লে পথিকের মনে নিশ্চিত উঁকি দিবে এখানেও একদিন মাঠ ছিল। যেখানে ফুটবল খেলা হতো। বিশ্বকাপের খেলা হয়েছিল। অদ্ভূত এক শূন্যতায় হয়ত ভরে উঠবে পথিকের মন।