দেশের ব্যাংকগুলোতে ‘টাকা না থাকার গুজব’ ছড়িয়ে একটি শ্রেণি মানুষকে ‘বিভ্রান্ত করতে চাইছে’ মন্তব্য করে সেই গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, “কিছু গুজব ছড়াচ্ছে। কী? ব্যাংকে টাকা নেই। টাকা নেই বলে অনেকে টাকা তুলে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। আমি আগেও বক্তৃতায় বলেছি, এখনো বলি যে এদের কি চোরের সাথে কোনো সখ্যতা আছে কি না যে ব্যাংকের থেকে টাকা নিয়ে ঘরে রাখে চোরের পোয়াবারো। চোর চুরি করে খেতে পারবে, সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছে নাকি কেউ কেউ, আমি জানি না।”
আজ মঙ্গলবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনে এ বিষয়ে কথা বলেন সরকারপ্রধান।
দেশের ব্যাংকগুলোতে কোনো সমস্যা নেই দাবি করে তিনি বলেন, “আমি একটা কথা স্পষ্ট জানাতে চাই- আমি গতকালকে রাতে আমাদের যেমন এসডিজি এবং উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে… সেই মিটিং করেছি। এরপরে আমি আবার অর্থ সচিব এবং আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সাথে আমি কথা বলেছি। আজকে সকালে আমি অর্থমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করেছি। আল্লাহর রহমতে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। প্রতি ব্যাংকেই টাকা আছে।”
গুজবে কান দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “কাজেই আমি বলব- গুজবে কেউ কান দেবেন না। গুজবে কান দেবেন না। এটাই আমার সকলের কাছে একটা অনুরোধ যে যারা এইসব মিথ্যা কথা বলে মানুষকে তারা ভাওতাবাজি দিয়ে বিভ্রান্ত করতে চায়, এটা একটা শ্রেণি আছে। তারা এটা করবেই আমি জানি। আর মিথ্যা কথায় তারা পারদর্শী।”
‘আওয়ামী লীগের ডিজিটাল বাংলাদেশকে’ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হচ্ছে মন্তব্য করে সকলকে এ ব্যাপারে বিশেষ নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
“স্যোশাল মিডিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে ভরে গিয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের তার ‘উপযুক্ত’ জবাব দিতে হবে। জবাব দেওয়ার বেশি কিছু না। ওরা যখন আমাদের বিরুদ্ধে যেটা লেখে তার জবাব দেওয়া লাগবে না। ওদের অপকর্মটা যদি সেখানে কমেন্টে ছেড়ে দেওয়া যায়, তাহলেই ওরা ওটা বন্ধ করে দেবে। এটাই হচ্ছে সব থেকে ভালো।
“ওরা যা বলবে… বিএনপি ক্ষমতায় থেকে কী করেছে তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, তাদের খুন, তারা কাকে কাকে মেরেছে, কী করেছে, কই কই তাদের চুরি, ভোট চুরি, ডাকাতি এগুলো তুলে ধরলেই তো যথেষ্ট। কাজেই আমার মনে হয় ছাত্রলীগ এই কাজটা করতে পারবে।”
ছাত্রলীগ কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “মেধাবী ছাত্ররা, তাদেরকে কিন্তু প্রত্যেকেই যারা মেধাবী, তাদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা যেমন নিজেরা করতে হবে, কারিগরি শিক্ষা নিতে হবে সেখানে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিতে হবে। কারণ আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হলে দক্ষ প্রশাসন ব্যবস্থাও দরকার। কাজেই প্রত্যেকেই বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা যে যেখানে পারদর্শী, সেইভাবে শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাজনীতিও যেমন দরকার, আবার সেইভাবে আমাদের প্রশাসন বা কারিগরি সব ধরনের দরকার। ছাত্রলীগ যেন প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের মেধার বিকাশের একটা সুযোগ পায় এবং সেই কাজকর্ম করতে পারে সেটাই আমি চাই।”
ছাত্রলীগের সম্মেলনে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের পড়ালেখার গুরুত্ব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “লেখাপড়া শিখে এদেশের উপযুক্ত নাগরিক হতে হবে, যেন বাংলাদেশের এই উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত থাকে। আমাদের আর কী। ৭৬ বছর বয়স, যে কোনো দিন অক্কা পেতে পারি।
“কিন্তু আমি চাই, বাংলাদেশে আমাদের যারা নেতাকর্মী, তারা সেইভাবে গড়ে উঠবে যাতে এই দেশের স্বাধীনতার চেতনা কেউ মুছে ফেলতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে না পারে, খুনি, রাজাকার, আল বদর, যুদ্ধাপরাধী– এরা যেন কোনোদিন এই দেশে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সেইভাবেই জনমত সৃষ্টি করতে হবে। যে যাই করুক না কেন লেখাপড়াটা শিখতে হবে। লেখাপড়ায় মনোযোগ দিতে হবে।”
যুব সমাজকে দক্ষ করে গড়ে তোলার ইচ্ছার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। সেখানে কাজ করতে গেলে প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ মানব শক্তি দরকার। কাজেই আমাদের এই যুব সমাজ যারা আমাদের ভবিষ্যত, আমি ২০৪১ এ উন্নত বাংলাদেশ করব, তাহলে ৪১ এর সৈনিক কারা হবে? এই আজকের যুব সমাজ তারা এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম। কাজেই তাদেরকে আমরা দক্ষ করে গড়ে তুলতে চাই।”
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের খারাপ অবস্থার কথা তুলে ধরে বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি তেলসহ সবকিছু ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “প্রত্যেকটা ছাত্র-ছাত্রীদের বলবো, হোস্টেলে থাকলেও বিল দিতে হয় না। কিন্তু ঘর থেকে বের হবার সময় ওই সুইচটা অফ করতে হবে। মোবাইল চার্জ বা ল্যাপটপের চার্জ…চার্জারের সুইচটা বন্ধ করে দিতে হবে। প্রত্যেককে এভাবে সাশ্রয়ী হতে হবে। আগামী দিনে যখন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সেই মন্দার ধাক্কা যেন বাংলাদেশে না লাগে সেদিকে সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে।”
আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টায় ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন শেখ হাসিনা। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। আর ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য উত্তোলন করেন দলীয় পতাকা।
পরে পায়রা অবমুক্ত করে ছাত্রলীগের ৩০ তম জাতীয় সম্মেরনের উদ্বোধন করেন সাগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা। এসময় ছাত্রলীগের দলীয় সংগীত গাওয়া হয়।
৩০তম জাতীয় সম্মেলনেরর আহ্বায়ক অসীম কুমার বৈদ্য ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার রেজাউল করিম সুমন পরে প্রধানমন্ত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেন।
সম্মেলন উদ্বোধনের পর ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের জন্য নতুন অ্যাপেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।