ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডসহ তিন ব্যাংকের ঋণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন নজরে আসার পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই আদেশ দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে। চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানকেও ঋণ সংক্রান্ত কাগজপত্র দাখিল করতে বলেছে হাই কোর্ট। খবর বিডিনিউজের।
অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা মিললে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাও জানাতে বলা হয়েছে। আগামী বছরের ৫ এপ্রিল এ বিষয়ে শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখেছে আদালত। ঋণ বিতরণের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি হবে না এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না – তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করা হয়েছে। অর্থ সচিব, দুদক, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ ও সিআইডিসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ‘এসআইবিএল, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইসলামী ব্যাংক নিয়ে বেশ কয়েকটি সংবাদ ছাপানো হয়েছে। সে বিষয়ে কোর্ট আজকে সুয়োমোটো একটা রুল দিয়েছেন।’
অভিযোগ অনুসন্ধান ও প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য হাই কোর্ট বেঞ্চ ৫ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়গুলো যে পত্রিকায় এসেছে তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন, সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউকে এগুলো তদন্ত করে জানাতে বলেছেন।’
এস আলম গ্রুপকেও ঋণ সংক্রান্ত নথিপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রের এই আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি প্রতিষ্ঠান, এস আলম গ্রুপ, উনারদেরকেও এ বিষয়ে কাগজপত্র কোর্টে দাখিল করতে বলেছেন। উনাদের বিরুদ্ধে নিউজটা উঠেছে।’
আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থানের স্বার্থে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে আদালত। কোর্টে এ বিষয়গুলো উনারা বলেছেন, আমরা কোনো পক্ষ না, আমরা এটা স্বঃপ্রণোদিত হয়ে এসেছি, আমরা যাতে এটার সঠিকতা যাচাই করতে চাচ্ছি।
আমরা যেভাবে শপথ নিয়েছি বিচারক হিসাবে, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যদি কোনো ইস্যু থাকে, সেটার বিষয়েও দেখতে চাই। ইসলামী ব্যাংক থেকে শুধু নভেম্বরেই ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার তথ্য দিয়ে গত ২৪ নভেম্বর ‘ইসলামী ব্যাংকে ভয়ংকর নভেম্বর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো।
প্রথম আলো’তে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে কোম্পানি খুলে’ চলতি অর্থবছরে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে নাবিল গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানি। এসব প্রতিষ্ঠান সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকেও ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে।
এরপর গত ২৯ নভেম্বর ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার ‘ইসলামী ব্যাংকের ৭,২৪৬ কোটি টাকা ঋণের তদন্তে বাংলাদেশ ব্যাংক’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপায়।
এর মধ্যেই বছর কয়েক আগে মালিকানা বদল নিয়ে আলোচনায় থাকা ইসলামী ব্যাংক থেকে চট্টগ্রামভিত্তিক ‘এস আলম গ্রুপ একক কোম্পানি হিসেবে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে’ বলে ৩০ নভেম্বর আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ।
ঋণ নিয়ে এই তিন প্রতিবেদন দেখার পর স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ এই আদেশ দিল উচ্চ আদালত।
বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর গত ২৭ নভেম্বর সচিব সভাতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে ‘প্রকৃত চিত্র’ জানাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে নির্দেশ দেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সেদিন জানিয়েছিলেন।