শেষদিকে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়াল দক্ষিণ কোরিয়া। ছয় মিনিট যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে পর্তুগালের জালে বল পাঠিয়ে ফেটে পড়ল উল্লাসে। বাজল ম্যাচ শেষের বাঁশি কিন্তু অপেক্ষার শেষ নেই কারণ একই সময়ে শুরু গ্রুপের আরেক ম্যাচ যে তখনও চলছে। সেই ম্যাচের ফলও এলো পক্ষে। নাটকীয়তার নানা ধাপ পেরিয়ে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় উঠল দক্ষিণ কোরিয়া।
কাতারের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে আজ শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) বিশ্বকাপের ‘এইচ’ গ্রুপের শেষ রাউন্ডের ম্যাচে শুরুতে পিছিয়ে পড়েও পর্তুগালকে ২-১ গোলে হারিয়েছে কোরিয়া।
আল জানুব স্টেডিয়ামে আরেক ম্যাচে ঘানাকে ২-০ গোলে হারিয়েছে উরুগুয়ে।
আগেই শেষ ষোলোর টিকেট নিশ্চিত করা পর্তুগাল গ্রুপ সেরা হয়েছে ৬ পয়েন্ট নিয়ে।
দক্ষিণ কোরিয়া ও উরুগুয়ের সমান ৪ পয়েন্ট, গোল পার্থক্যও সমান। তবে বেশি গোল করায় গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে নকআউটের টিকেট পেল দক্ষিণ কোরিয়া। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের সঙ্গে বিদায় নিল ঘানাও (৩ পয়েন্ট)।
আগের ম্যাচ থেকে ছয়টি পরিবর্তন এনে খেলতে নামা পর্তুগাল পঞ্চম মিনিটে প্রথম সুযোগেই এগিয়ে যায়। অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার পেপের নিজেদের অর্ধ থেকে উঁচু করে বাড়ানো বল ধরে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন দিয়োগো দালোত। বাইলাইনের কাছাকাছি থেকে এই ডিফেন্ডারের কাট-ব্যাকে ছয় গজ বক্সের মুখ থেকে শটে ঠিকানা খুঁজে নেন রিকার্দো হর্তা।
বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই গোল করলেন ২৮ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।
সপ্তদশ মিনিটে কোরিয়ার কিম জিন-সু কাছ থেকে জালে বল পাঠালেও অফসাইডের কারণে গোল মেলেনি।
২৭তম মিনিটে সমতায় ফেরে কোরিয়া। কর্নার ক্লিয়ার করতে পারেনি পর্তুগাল। ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পিঠের ওপরে পড়ে পাওয়া বল কাছ থেকে জালে পাঠান ডিফেন্ডার কিম ইয়ং-খুয়ান।
২০১৮ বিশ্বকাপে গ্রুপের শেষ ম্যাচে জার্মানিকে ২-০ গোলে হারানোর দিনে দলের প্রথম গোলটি করেছিলেন তিনি।
দুই মিনিট পর গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি রোনালদো। তার প্রচেষ্টা এগিয়ে এসে রুখে দেন কিম সিউং-জু। ৩৩তম মিনিটে দালোতের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি।
৪২তম মিনিটে আরেকটি সুযোগ হারান রোনালদো। বক্সের বাইরে থেকে ভিতিনিয়ার শট গোলরক্ষক ঠেকানোর পর কাছ থেকে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি আন্তর্জাতিক ফুটবলের রেকর্ড গোলদাতা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ভিতিনিয়ার পাস ভালো পজিশনে পেয়ে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি রোনালদো। যদিও অফসাইডের পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান।
৬৫তম মিনিটে একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনেন পর্তুগাল কোচ। রোনালদো, রুবেন নেভেস, মাথেউস নুনেসকে তুলে মাঠে নামান আন্দ্রে সিলভা, রাফায়েল লেয়াও ও জোয়াও পালিনিয়াকে।
পাঁচ মিনিট পর একটি সুযোগ পান কোরিয়ার কিম জিন-সু। ডি-বক্সে তার শট প্রতিহত করেন ডিফেন্ডার জোয়াও কানসেলো।
এরপর যোগ করা সময়ে হাং হি-চানের ওই গোল। পাল্টা আক্রমণে নিজেদের অর্ধ থেকে বল নিয়ে এগিয়ে যান সন হিউন-মিং। প্রতিপক্ষের একজনের চ্যালেঞ্জ সামলে বক্সের সামনে থেকে তিনি পাস দেন ভেতরে, আর প্রথম স্পর্শের শটে এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ৬৬তম মিনিটে বদলি নামা চান। উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো কোরিয়া শিবির।
ম্যাচ শেষে মাঠেই একপাশে গোল হয়ে দাঁড়ায় কোরিয়া দল। চোখ ফোনের স্ক্রিনে, ঘানা-পর্তুগাল লড়াইয়ে। কেউবা দুই হাত জড়ো করে প্রার্থনায়। অপেক্ষার যেন আর শেষ হয় না। দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে ম্যাচটি শেষ হতেই আরেকবার উৎসবে মেতে ওঠেন তারা।
চার বছর আগের বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর গ্রুপের শেষ ম্যাচে জার্মানিকে হারালেও সেবার নকআউটে খেলা হয়নি কোরিয়ার। এবার পূরণ হলো তাদের সেই স্বপ্ন, ২০১০ সালের পর প্রথম।
পর্তুগালের বিপক্ষে এই নিয়ে দুইবারের দেখায় দুটিই জিতল কোরিয়া, আর দুটিই বিশ্বকাপে! ২০০২ সালে ঘরের মাঠের আসরে ১-০ গোলে জিতেছিল তারা।
সেই ম্যাচটি ছিল পর্তুগালের জার্সিতে পাওলো বেন্তোর শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সেই বেন্তো ২০ বছর পর এবার জয়ী দলে, কোরিয়ার কোচ যে তিনিই!
আগের ম্যাচে রেফারির সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ করে লাল কার্ড দেখায় এ দিন অবশ্য টাচলাইনে নিষিদ্ধ ছিলেন বেন্তো। তবে গ্যালারিতে বসে দলের জয় দেখেছেন ঠিকই।