ইউরিয়া সার উৎপাদনের দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের অন্যতম বৃহৎ কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে। সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি কারখানাটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং দামি যন্ত্রাংশ রি–এ্যাক্টর পাল্টানোরও প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এজন্য বিসিআইসির নিকট ১৮২ কোটি টাকা চেয়ে একটি চাহিদা পত্র প্রেরণ করেছে। সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতি মেরামতের পর নতুন করে রি–এ্যাক্টর স্থাপন করা না হলে কারখানাটিতে পুরোদমে উৎপাদন চালানো সম্ভব হবে না বলেও সংশ্লিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ সূত্র জানিয়েছে। ফলে কবে নাগাদ অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করা হবে, আবার কবে নাগাদ রি–এ্যাক্টর আমদানি করে স্থাপন করা হবে তা পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন সিইউএফএল কারখানায় গত বেশ কিছুদিন ধরে নানা সংকট চলছে। দেশের ইউরিয়া সার উৎপাদনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই কারখানাটি কৃষি খাতে অনন্য ভূমিকা রেখে আসছে বহু বছর ধরে। পার্শ্ববর্তী কাফকো কারখানায় উৎপাদিত ইউরিয়া সরকার আন্তর্জাতিক বাজারদরে ডলারে ক্রয় করলেও সিইউএফএল–এ উৎপাদিত সারের পুরোটাই সরকার
সাশ্রয়ী দরে বাজারজাত করে থাকে। এই কারখানায় দৈনিক প্রায় ১ হাজার ১০০ টন ইউরিয়া এবং ৬০০ টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন করা হয়। চট্টগ্রামে গ্যাসের চরম হাহাকারের মাঝেও সরকার কারখানাটি চালু রেখেছিল দেশের কৃষির স্বার্থেই। সার নিয়ে যেন কোনো ধরনের সংকট না হয় সেজন্য সিইউএফএল চালু রাখার সর্বাত্মক নির্দেশনা ছিল বিসিআইসির। কিন্তু গত ২২ নভেম্বর কারখানার অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের বয়লারে আগুন লাগে। কিভাবে বা কেন আগুন লাগলো তা তদন্ত করতে বিসিআইসির মেনটেনেজ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক সুদীপ মজুমদারকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করেছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি এখনো নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে সংশ্লিষ্ট একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বয়লারের যেখানে আগুন লেগেছে সেটির ভিতরের বিভিন্ন পাত পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ খোলার পর ভিতরে কি কি ক্ষতি হয়েছে সেগুলো নিরুপণ করতে হবে। ইতোমধ্যে চুয়েট থেকে বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীদের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পরিস্থিতি অনুধাবনের চেষ্টা করছে। তারা এখনো যন্ত্রাপাতি খোলা বা মেরামতের কাজ শুরু করতে পারেননি। এজন্য দীর্ঘ সময় লাগবে। নষ্ট যন্ত্রপাতি দেশে পাওয়া না গেলে বিদেশ থেকে আমদানি করে লাগাতে হবে বলেও সূত্র জানিয়েছে। এতে করে ঠিক কতদিন পর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সার কারখানাটিতে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে তা পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে রয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতির সুরাহা না হতেই নতুন আরো একটি সংকট দেখা দিয়েছে। কারখানার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রের নাম হচ্ছে রি–এ্যাক্টর। এটি সার উৎপাদনের অন্যতম প্রধান যন্ত্র। সিইউএফএল কারখানার রি–এ্যাক্টর পাল্টাতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের সাথে এই রি–এ্যাক্টর পাল্টানোর কোনো সম্পর্ক না থাকলেও একই সময় রি–এ্যাক্টর পাল্টানোর বিষয়টি সামনে চলে আসায় বিসিআইসির শীর্ষ কর্মকর্তাদের মাথায় হাত পড়েছে। রি–এ্যাক্টর পাল্টানোর জন্য ইতোমধ্যে সিইউএফএল ১৮২ কোটি টাকা চেয়েছে।
বিসিআইসির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টের বয়লারের ক্ষয়ক্ষতি সামলে উঠতে বেশ সময় লাগবে। আবার রি–এ্যাক্টর পাল্টাতে হবে। কারখানাটিকে ঠিকঠাকভাবে চালু করতে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। একই সাথে সময়ও লাগবে। তাই ঠিক কতদিনে এই কারখানা আবার চালু করা সম্ভব হবে তা অনিশ্চিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সিইউএফএল–এর বদলিকৃত (দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান গতরাতে দৈনিক আজাদীকে বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত যন্ত্রপাতি মেরামত কাজ চলছে। এটি মেরামত সম্পন্ন হলে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে মেরামত সম্পন্ন হতে কতদিন লাগবে তা বলতে পারেননি তিনি। কাজ চলছে এবং দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। রি–এ্যাক্টর পাল্টানোর ব্যাপারটির সাথে অগ্নিকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি পুরাতন হয়ে গেছে। আলাদা একটি প্রজেক্টের আওতায় নতুন রি–এ্যাক্টর স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।