চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিমের উদ্দেশ্যে মানহানিকর বক্তব্য রাখার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছারকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল চট্টগ্রামের সাইবার ট্রাব্যুনালের বিচারক মো. জহিরুল কবির শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে উচ্চ আদালতের ৬ সপ্তাহের অন্তরবর্তীকালীন জামিন শেষে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়ে আবেদন করলে বিচারক তা নাকচ করে দেন।
শুনানিতে নুরুল আবছারের আইনজীবীরা বলেন, ভবনের ভাড়ার ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে চসিকের উদ্যোগের বিরুদ্ধে আয়োজিত সমাবেশে মেয়রকে উদ্দেশ্য করে দেয়া বক্তব্য স্লিপ অব টাং ছিল। মনের অজান্তেই
করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি নুরুল আবছার সেদিন বক্তৃতায় ঐসব কথা বলেছেন। জামিন আবেদনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও আদালতের কাছে বক্তব্য তোলে ধরা হয়। বলা হয়, স্লিপ অব টাং বলে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। মার্জনা পাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। একপর্যায়ে আদালত দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে আদেশ প্রদান করেন।
ট্রাইব্যুনালের পিপি মেজবাহ উদ্দিন আজাদীকে এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, উচ্চ আদালতের ৬ সপ্তাহের অন্তবর্তীকালীন জামিন শেষে আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়ে আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে দেন এবং নুরুল আবছারকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
তিনি বলেন, আসামি পক্ষের বক্তব্য হল ঘটনার দিন নুরুল আবছারে দেয়া বক্তব্য ছিল স্লিপ অব টাং। মনের অজান্তে তিনি উক্ত বক্তব্য রেখেছিলেন। এসবের বিরুদ্ধে আমরা বলেছি, এটা কোনো কথা হতে পারে না। স্লিপ অব টাং বলে গুরুতর মানহানিকর বক্তব্যের দায় এড়ানো যায় না।
নুরুল আবছারের আইনজীবী ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সভাপতি আকতার কবির বলেন, জামিনযোগ্য ধারা হওয়ায় উচ্চ আদালত আমার মক্কেলকে ৬ সপ্তাহের জামিন দিয়েছিলেন এবং জামিনের মেয়াদ শেষ হলে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলেছিলেন। সে অনুযায়ী তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়ে আবেদন করলে আদালত তা নাকচ করে দেন। এদিকে আদালতের আদেশের পর সুরক্ষা পরিষদের নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে কদমতলীতে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয় মিছিলটি। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মুহম্মদ অমির উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
কদমতলীর সমাবেশে বক্তারা বলেন, ৭০ লক্ষ মানুষের পক্ষে কথা বলায় নুরুল আবছারকে জেলে যেতে হল। যা চট্টগ্রামবাসীর জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। এভাবে আন্দোলন সংগ্রাম স্তিমিত না হয়ে আরো বেগবান হবে। আগামীতে গৃহকর আন্দোলন ও আবছার ভাইকে মুক্ত করার আন্দোলন সমান্তরালে চলবে। সিটি মেয়র রেজাউল করিমের উদ্দেশ্য করে মানহানিকর বক্তব্য রাখার অভিযোগে গত ২০ সেপ্টেম্বর নগরীর চান্দগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি দায়ের করেন মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারী মো. মোস্তফা কামাল চৌধুরী দুলাল।
মামলার এজহারে বলা হয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর মাদারবাড়িতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নুরুল আবছার সিটি মেয়রের উদ্দেশে ‘মানহানিকর ও হুমকিমূলক’ বক্তব্য দিয়েছেন। মেয়রকে উদ্দেশ্য করে তুই–তোকারি সম্বোধন করা হয়। মেয়রকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘সাবধান হয়ে যাও তুমি, তোমাকে সাবধান বাণী দিচ্ছি, সাবধান হয়ে যাও। উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বললে তোমাকে এই চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হবে। আসামি নুরুল আবছারের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হওয়ায় একজন প্রতিমন্ত্রী মর্যাদাপ্রাপ্ত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তথা চসিক মেয়রের চরম মর্যাদাহানী হয় উল্লেখ করে এজহারে বলা হয়, এতে মেয়রের নিরাপত্তা চরম হুমকির মুখে পড়ে। স্বনামধন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান চসিকের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। একইসঙ্গে হোল্ডিং ট্যাঙ দাতাগণের মধ্যে তথা চসিকের বিভিন্ন পরিসেবা গ্রহীতা–শ্রেণিতে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।