প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে। তিনি শনিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু টানেলের একটি টিউবের উদ্বোধন শেষে বললেন, ‘ মনটা পড়ে রয়েছে চট্টগ্রামে।’ তিনি বলেন, এখানে একটা টানেল হয়েছে দেখে এখনই উদ্বোধন করছি না। আমার ইচ্ছা ছিল দেখার যে, কেমন হলো। মনটা পড়ে রয়েছে চট্টগ্রামে। দ্বিতীয় টিউবের কাজও শেষ; সামান্য কাজ বাকি। বিরাট কাজ বলে মনে করি। টানেল নির্মাণে যারা জড়িত, সবাইকে ধন্যবাদ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেলের ফলে আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বলসহ অর্থনীতি গতিশীল হবে। আজকে বাংলাদেশকে বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে দেখা হয়। অথচ আমাদের আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা এ দেশের উন্নয়ন চায়নি। যার ফলে দেশটা এগোতে পারেনি। গত ১৪ বছরে এ দেশকে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার কাজটিই করেছি। যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি করেছি। এতে অনেক উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করেছি। কিছুদিন আগে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছি, নিজস্ব অর্থায়নে আমরা যে পারি তা দেখিয়ে দিয়েছি। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করেছি। এটা চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন সাহেবেরও দাবি ছিল।’
আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেল চট্টগ্রামের গুরুত্ব বাড়ানোর পাশাপাশি বিশ্বে বাড়াবে বাংলাদেশের মর্যাদা। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় নানা পরামর্শ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী দেশের সমুদ্র সম্পদ আহরণসহ চট্টগ্রাম-কক্সবাজারকেন্দ্রিক আরো কিছু মেগা প্রকল্পের ভাবনা তুলে ধরেন।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে স্থাপিত টানেলের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নদীর তলদেশ থেকে টানেল বিদেশে দেখেছি। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় এটাই প্রথম। চট্টগ্রাম একসময় অবহেলিত ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পর ব্যাপক কাজ করেছি। টানেল স্থাপনের ফলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরও বেড়ে যাবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, কর্ণফুলী টানেল শুধু দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে না, এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিল্প কারখানাসহ অর্থনৈতিক বিপ্লব সাধিত হবে। এছাড়া দেশের প্রধান পর্যটন এলাকাগুলোর মধ্যে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, বান্দরবানসহ পাহাড়, সমুদ্র ও নদীর এই ত্রিমাত্রিক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও মুখ্য ভূমিকা রাখবে। শুধু তাই নয় এতে কমে আসবে চট্টগ্রাম নগরীর যানজটও। তাঁরা বলেন, কর্ণফুলী টানেল যোগাযোগ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা আরো বেগবান হবে। এই টানেলে বদলে যেতে পারে চট্টগ্রামের চেহারা। অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইতিবাচক সাড়া ফেলবে।
দেশের প্রথম এই টানেল নির্মিত হচ্ছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায়। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই মেগা প্রকল্প। এখন চলছে টানেলের ভেতরে ফায়ার ফাইটিং, লাইটিং ও কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনার কাজ। পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে প্রকল্পের গাড়িও। নদীর তলদেশে হওয়ায় যেকোনও সময় পানি জমতে পারে আশঙ্কায় টানেলের মধ্যে বসানো হচ্ছে ৫২টি সেচ পাম্প। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
অর্থনীতিবিদ ড. মঈনুল ইসলাম পত্রিকান্তরে বলেছেন, মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিনড্রাইভ সড়কটি যদি সম্পূর্ণ হয়ে যায় তাহলে মেরিনড্রাইভের পাশে অনেকগুলো শিল্প এলাকা গড়ে উঠবে। অতএব লং টার্ম বিবেচনা করলে এটা গুড প্রজেক্ট। কারণ এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের দূরত্ব কমিয়ে দেবে। তবে তিনি মনে করেন স্বল্পমেয়াদে এটার আয় দিয়ে এটি নির্মাণে যে খরচ হয়েছে সে খরচ তোলা যাবে না। সেদিক থেকে এটা শর্ট টার্মে এটা বোঝা হয়ে থাকবে বাংলাদেশের উপর। আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ হবে না বলেও মনে করেন তিনি। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, কারণ আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরে এটা পর্যাপ্ত ব্যবহৃত হবে না। এতে যথেষ্ট পরিমাণ গাড়ি চলাচল করবে না। ফলে প্রথম দিকে এটি বাংলাদেশের উপরে একটি বোঝা হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, যদি চট্টগ্রাম বন্দরের কিছু জেটি কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে সরানো যায় তাহলে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে। এগুলো সম্ভাব্য সুবিধা এবং এসব চিন্তা করলে টানেলটা একটা ভালো প্রকল্প।
বঙ্গবন্ধু টানেল কর্ণফুলী নদীর পূর্ব দিকে শহরাঞ্চলকে যুক্ত করে সেখানে উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে নিঃসন্দেহে।