পোর্ট সিটি ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে শিক্ষা উপমন্ত্রী

শিক্ষার উন্নয়নে গুণগত মান বাড়াতে হবে জ্ঞানের জন্য হতে হবে ক্ষুধার্ত : মুখ্য সচিব

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

শুধু সুন্দর বিল্ডিং দিয়ে শিক্ষার উন্নয়ন হয় না। শিক্ষার গুণগত উন্নয়ন হতে হবে। আর শিক্ষার গুণগত উন্নয়নের জন্য উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের আন্তর্জাতিকমানের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের বেসরকারি পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দ্বিতীয় সমাবর্তনে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এসব কথা বলেন। নগরীর টাইগারপাসের নেভি কনভেনশন হলে এ সমাবর্তনের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষা উপমন্ত্রী সমাবর্তনে সভাপতিত্ব করেন।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস। তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে সমাবর্তন বক্তৃতা রাখেন। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান তাহমিনা খাতুন এবং সদস্য সাইফুজ্জামান শেখর এমপি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরল আনোয়ার। সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১০টি বিভাগের ১৩টি প্রোগ্রাম থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা ৫ হাজার ৬৪৯ জন গ্রাজুয়েটকে আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এছাড়া ১৪ জন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল ও ১৩ জন শিক্ষার্থীকে ফাউন্ডার গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়।

সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আরো বলেন, আমাদের দেশে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিতদের মাঝে সফট স্কিলের সংকট রয়েছে। আপনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হলেন, কিন্তু ভাষার দক্ষতাসহ বৈশ্বিক যে স্কিল বা দক্ষতা প্রয়োজন তার কিছুই নেই। সেক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষিত হয়েও আমাদের দেশের তরুণরা কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। তাই কেবল উচ্চ শিক্ষিত হলেই হবে না, ভাষার দক্ষতাসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। শিক্ষিত হলেও নতুন করে কিছু শেখার আগ্রহ থাকতে হবে। মোটকথা নিজেকে বৈশ্বিকভাবে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চট্টগ্রামে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান শিক্ষা উপমন্ত্রী। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে কাজ চলছে। আমাদের প্রতিটা তরুণ যাতে শোভন পেশার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে পারে এজন্য চলছে বিপুল কর্মযজ্ঞ। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হচ্ছে শিক্ষার যাত্রার সূচনা। জ্ঞানের জন্য, স্বীকৃতির জন্য, প্রজ্ঞার জন্য ক্ষুধার্ত হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ক্ষুধার্ত হতে থাকুন, তবে তৃপ্ত হবেন না। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উপায় খোঁজা চালিয়ে যান এবং সেখানেই আপনি আরও কিছু অর্জন করতে পারবেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এবং পিসিআইইউ’র প্রতিষ্ঠাতা একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, ঢাকায় উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনেক আছে। কিন্তু চট্টগ্রামে সেভাবে নেই। আমরা চট্টগ্রামে বিশ্বমানের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চাই। এর প্রেক্ষিতেই চট্টগ্রামে পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির যাত্রা শুরু। মাত্র এক দশকেই বন্দর নগরীর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সারা দেশের প্রতিটা ক্ষেত্রে সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের সেরা মেধাবী শিক্ষক, ডিজিটাল ক্লাসরুম আর বিশ্বমানের কারিকুলামের মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জনসম্পদে পরিণত হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা অর্জিত জ্ঞান আর কর্মদক্ষতা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক উন্নত বাংলাদেশ গড়তে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আসমা ইয়াসমিন এবং ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক রাইসুল ইসমাইল আপন’র সঞ্চালনায় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, পিসিআইইউ’র বিভিন্ন অনুষদের ডিন, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন বিভাগের কো-অর্ডিনেটর, চেয়ারম্যান ও শিক্ষকবৃন্দ ছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতার পর ন্যাচারাল সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক পুনম মুৎসুদ্দি ও আশরাফুল ইসলাম সুমনের সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ফোরামের শিক্ষার্থী এবং ব্যান্ড দল বে অব বেঙ্গল’র পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৭ মে মাত্র ৬ জন শিক্ষক, ৪ জন কর্মকর্তা ও ১ জন কর্মচারী এবং ছয়টি প্রোগ্রামে ৬৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সংখ্যা ১৭০ জন, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৩৩৬ এবং কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা ১৯০ জন। ৪টি অনুষদের অধীনে ১০টি বিভাগের ১৩টি প্রোগ্রাম নিয়ে এর শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর আগে ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজলাবদ্ধতার প্রত্যক্ষ ঝুঁকিতে সাড়ে ১৩ বর্গকিমি এলাকা
পরবর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পিকআপে বাসের ধাক্কা, নিহত ৩