নগরীর গোলপাহাড় এলাকায় আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের বহির্বিভাগের কার্যক্রম। গতকাল বিকেলে চমেক হাসপাতালের শাহ আলম বীর উত্তম মিলনায়তনে চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সমপ্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, হার্ট ফাউন্ডেশন যখন হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করবে সেটি যেন সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এখন থেকেই সে পরিকল্পনা করতে হবে। আমি যখন হাসপাতাল চালাবো তখন ফি দেখে হাসপাতাল চালাবো নাকি যারা গরীব তাদের জন্য হাসপাতাল চালাবো। স্বাস্থ্যসেবার দিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে। এখানে আমাদের কাজ করার সুযোগ আছে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা সকল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যদি সেবা না থাকে তবে মানুষ যাবে না। আর আমাদের চট্টগ্রামে কয়েকটি বড় বড় হাসপাতাল হয়েছে। সেখানে খরচ বেশি। তাই সাধারণ মানুষ সেখানে যেতে পারে না। আরেকটি বিষয় হলো-চট্টগ্রামের মানুষ প্রচুর গরুর মাংস খায়, মেজবান খায়। এজন্য হার্টের অসুখও বেশি হয়। ঢাকার বড় বড় হাসপাতালগুলোতে অধিকাংশ রোগী কিন্তু চট্টগ্রামের।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমাদের যে দুর্বলতা আছে তা চিকিৎসার সাথে যারা জড়িত আছেন তারা সবাই জানেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ৫৬টির মতো হেলথ কমপ্লেক্স পরিচালিত হয়। এগুলো চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। উনি স্বাস্থ্যসেবাকে খুব গুরুত্ব দিয়েছেন। একটা সময় এসব হেলথ কমপ্লেক্সের কার্যক্রম থমকে যায়। মেনন হাসপাতাল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। অথচ এই মেননে হাসপাতালে ভর্তির জন্য তদবির করতো। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর সেই মেনন হাসপাতালকে সে জায়গায় ফিরিয়ে এনেছি। একইভাবে অন্যগুলোকেও আমি সে জায়গায় নিয়ে গেছি। আপনারা জানেন- করোনা মহামারির সময় আমরা কেমন অসহায়ত্বের শিকার হয়েছিলাম। এটি মানতে হবে। তবে বিশ্বাস করি চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে।
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, একটা হাসপাতালে কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন বা বিশাল ক্যাম্পাস হলে হয় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যারা চিকিৎসাসেবা দিবেন বা যারা চিকিৎসাসেবার দায়িত্বে থাকবেন তাদের সার্ভিস সেন্টার, তাদের পেশেন্ট সার্ভিস মেন্টালিটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে ইকো সিস্টেমটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সেবার মানটাও বাড়াতে হবে। এটা যেহেতু অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হবে সেহেতু এটার আয়ও যাতে হাসপাতালে ব্যবহার করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ও হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, হার্টের রোগ একমাত্র রোগ যা আমাদের সময় দেয় না। বাকি সব রোগ কিন্তু সময় দেয়। অতএব এই জায়গাটাতে আমরা যেন অবহেলা না করি। আমি বিশ্বাস করি অর্থের অভাবে কখনো কোনো মহৎ কাজ বা উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় না। আমাকে ইতোমধ্যে ফাউন্ডেশনের জন্য অনেকে টাকা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখনো আমি কোনো টাকা নিচ্ছি না। যখন কোনো কাজ হয় না, তখন টাকা নিয়ে লাভ হয় না। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি অর্থ কখনো কোনো কাজকে বাধাগ্রস্থ করে না। আমি আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি-আপনারা সকলেই জানেন-বহু দেশ ভ্যাকসিন সংগ্রহ করতে পারেনি, বিনামূল্যে দিতে পারেনি। বাংলাদেশ কিন্তু বিনামূল্যে বুস্টার ডোজ পর্যন্ত দিয়েছে। বাংলাদেশ কিন্তু পৃথিবীতে সবচেয়ে ধনী দেশ নয়। আমাদের মনোবল ও ইচ্ছা শক্তির জন্য দিতে পেরেছি।
চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ সম্পাদক এস এম আবু তৈয়বের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি আবদুস সালাম। এছাড়া বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) অধ্যক্ষ ডা. সাহেনা আকতার। এর আগে ক্রমবর্ধমান হৃদরোগ: প্রেক্ষিত চট্টগ্রাম শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন ও চট্টগ্রাম হার্ট ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ও চমেক হাসপাতাল হৃদরোগের বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. প্রবীর কুমার দাশ।
প্রসঙ্গত, হৃদরোগের জন্য চট্টগ্রামে বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল না থাকায় গত ছয় মাস আগে উন্নতমানের একটি হৃদরোগ হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস। গত ২৬ মে এ হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। আপাতত অস্থায়ী কার্যালয়ে সেবা চালু হলেও পরবর্তী সময়ে জঙ্গল সলিমপুরের ৭ একর জায়গায় অবকাঠামো নির্মাণ করে স্থানান্তরিত করা হবে এ হাসপাতাল। সেখানেই বিশেষায়িত এ হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।