ক্রীড়া প্রতিবেদক ম
সেই ১৯৯০ সালে ইতালি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে যে চমক সৃষ্টি করেছিল ক্যামেরুন সেই থেকে অনেকেই ক্যামেরুনের ভক্ত। কিন্তু এরপর থেকে ক্যামেরুনের সেই পাওয়ার ফুটবল কেমন যেন আর দেখা যাচ্ছেনা। গত আসরে খেলতে না পারা ক্যামেরুন এক আসর বাদ দিয়ে আবার বিশ্বমঞ্চে। তবে শুরুটা ভালো হলো না আফ্রিকার সিংহদের। গতকাল সুইজারল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলে হেরেছে ক্যামেরুন। তবে এই গোলদাতা একজন ক্যামেরুনের মানুষ। যিনি জন্মভূমির বিপক্ষে গোল করে নিজের বর্তমান দেশকে জেতালেন। তার নাম ব্রিল এমবোলো। নিজের জন্মভূমির বিপক্ষে গোল করেছেন বলেই কিনা সেটা উদযাপন করেননি তিনি। একটু যেন ক্ষমা চেয়ে নেওয়ার ভঙ্গি করলেন। করবেন না-ই বা কেন? গোল যে করলেন জন্মভূমি ক্যামেরুনের বিপক্ষে। তার গোলেই জয় দিয়ে কাতার আসর শুরু করল সুইজারল্যান্ড।
যদিও ম্যাচে বল দখলে পিছিয়ে ছিল ক্যামেরুন। তবে গোলের জন্য শট বেশি নিয়েছে তারা। লক্ষ্যেও রাখে বেশি। কিন্তু আসল কাজ যেটা জালে বল পাঠানো, ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় সেটা করতে পারেনি পারেনি তারা। এতে অনাকাঙ্ক্ষিত এক রেকর্ডের খুব কাছে পৌঁছে গেছে আফ্রিকার দেশটি। বিশ্বকাপে তারা হেরেছে টানা আট ম্যাচে। সবচেয়ে বেশি নয় ম্যাচে হারার রেকর্ড মেক্সিকোর। প্রথমার্ধে ক্যামেরুনের দারুণ কিছু আক্রমণ রুখে দিয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অপরাজিত থাকার ধারা ধরে রেখেছে সুইজারল্যান্ড। প্রথমার্ধে তিনটি খুব ভালো সুযোগ পেয়েছিল ক্যামেরুন। সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে খেলার চিত্র ভিন্ন হতেই পারত। দ্বিতীয়ার্ধে ভাটা পড়ে তাদের গতিতে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৩ পয়েন্ট তুলে নেয় সুইজারল্যান্ড। অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতে দশম মিনিটে প্রথম সুযোগ পেয়েছিল ক্যামেরুন। ডি-বক্সের মাঝখানে আরও ভালো জায়গায় অপেক্ষায় ছিলেন এরিক ম্যাক্সিম চুপো-মটিং। তবে তাকে বল না দিয়ে দুরূহ কোণ থেকে শট নেন ব্রায়ান এমবিউমো। লক্ষ্যে রাখতে পারেননি তিনি। বল বেরিয়ে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। পাল্টা আক্রমণ থেকে ত্রিশ মিনিটে আরেকটি ভালো সুযোগ পায় ক্যামেরুন। মার্টিন হঙ্গলার ক্রস ঠিকমতো ফেরাতে পারেননি সুইজারল্যান্ড গোলরক্ষক। তার হাত থেকে ফস্কে যাওয়া বলে বিপদ হতে পারত। কিন্তু তৎপর ছিলেন না কার্ল টোকো একাম্বি। বিপদমুক্ত করেন ডিফেন্ডার সিলভান উইডমার। পাঁচ মিনিট পর আবার ত্রাতা তিনি। ক্রসে দুর্দান্ত স্লাইডে একাম্বিকে বলের নাগাল পেতে দেননি মাইন্সের এই ডিফেন্ডার। ব্যর্থ হয় ক্যামেরুনের দারুণ একটি আক্রমণ। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে সুইজারল্যান্ডকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন মানুয়েল আকনজি। কর্নার থেকে একটুর জন্য হেড দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ম্যানচেস্টার সিটির এই ডিফেন্ডার।
দ্বিতীয়ার্ধে বাড়ে খেলার গতি। দ্রুতই ভাঙে ‘ডেডলক’। ৪৮ মিনিটে এগিয়ে যায় সুইজারল্যান্ড। জেরদান শাচিরি নিখুঁত ক্রসে বল পেয়ে জালে পাঠান এমবোলো। আশেপাশে ছিলেন ক্যামেরুনের পাঁচ খেলোয়াড়। কিন্তু কেউই পাহারায় রাখেননি তাকে। ক্যামেরুনে জন্ম হলেও বয়সভিত্তিক দল থেকেই সুইজারল্যান্ডের হয়ে খেলেন এমবোলো। জন্মভূমির প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই গোল উদযাপন করেননি এই ফরোয়ার্ড। ৬৬ মিনিটে এমবিউমোর ফ্রি-কিকে সুযোগ আসে ফ্রাঙ্ক জাম্বু আঙ্গিসার সামনে। কিন্তু হেড করেন গোলরক্ষক বরাবর। পাল্টা আক্রমণে ব্যবধান দ্বিগুণ প্রায় করেই ফেলেছিল সুইজারল্যান্ড। পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে রুবেন ভার্গাসের শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা। শেষ পর্যন্ত এক গোলের ঝয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সুইজারল্যান্ড।