আবারো ‘স্যাটেলাইট টাউন’ বা উপ-শহর প্রকল্পের দিকে ঝুঁকছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। নগরীর কালুরঘাটের বিএফআইডিসি রোড সংলগ্ন জায়গায় সম্ভাব্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে চসিকের। গত সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির একটি প্রতিনিধি দল জায়গাও পরিদর্শন করে গেছে।
অবশ্য একই জায়গায় চসিকের প্রয়াত মেয়র আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দায়িত্ব পালনকালে ২০০৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় উপ-শহর গড়ার প্রকল্প নিয়েছিল চসিক। তখন প্রকল্পটির নাম দেয়া হয় ‘সাম্পান স্যাটেলাইট টাউন’। ওই সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৭০০ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত অনুমোদনও পাওয়া গিয়েছিল। ওইসময় প্রকল্পের অভিজ্ঞতা নিতে কোরিয়া ভ্রমণ করেন চসিকের তৎকালীন নগর পরিকল্পনাবিদ, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও একজন নির্বাহী প্রকৌশলী। তবে সিডিএ শিল্প এলাকায় আবাসিক স্থাপনা করতে অনুমতি দিতে রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত স্যাটেলাইট টাউন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারেনি চসিক। ২০১৩ সালে প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে বাদ দেয়া হয়।
এর আগে একই বছরের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত চসিকের সাধারণ সভায় জানানো হয়, স্যাটেলাইট টাউন নির্মাণ প্রকল্পের কিছু ফাইল বেশ আগে হারিয়ে গেছে। এ নিয়ে সাধারণ সভায় কাউন্সিলররা তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলীর সমালোচনা করে তাকে বরখাস্তেরও দাবি জানান। এর প্রেক্ষিতে ওই বছরের ১ এপ্রিল তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মোখতার আলমকে পদাবনতি দেয়া হয়। দীর্ঘদিন পর সেই একই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেন বর্তমান মেয়র। এ প্রসঙ্গে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান আমাদের জায়গায় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের বলেছি স্যাটেলাইট টাউন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে আমরা জায়গা দেব। তারা কালুরঘাটে জায়গা দেখে গেছে। এখন তারা আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে। সেটা মনঃপূত হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সিটি মেয়রের একান্ত সচিব (উপসচিব) মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, বিএফআইডিসি রোডে আমাদের যে জায়গা তার মধ্যে এক একরের বেশি জায়গায় হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। বাকি জায়গায় স্যাটেলাইট টাউন নির্মাণ করা হবে।
জানা গেছে, নগরের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি, জনসংখ্যার সঙ্গে সমানতালে বাড়তে না পারা নাগরিক সুবিধার অভাবসহ নানা বিষয়কে সামনে রেখে বিশ্বব্যাপী স্যাটেলাইট টাউন ধারণাটি গড়ে উঠে। ১৯৪৬ সলে ‘ইউকে নিউ টাউনস অ্যাক্ট’ ধারণার মাধ্যমে সূত্রপাত হয় স্যাটেলাইট টাউন ধারণার।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) থেকে আশির দশকে কালুরঘাটের বিএফআইডিসি রোড সংলগ্ন এলাকায় ১১ দশমিক ৪৮ একর জায়গা বরাদ্দ নেয় চসিক। তখন এ জায়গায় চসিক ‘যান্ত্রিক কসাইখানা’ তৈরির ঘোষণা দেয়। তবে নানা জটিলতার কারণে সেখানে আর কসাইখানা তৈরি করতে পারেনি চসিক।
মাঝখানে ‘সাম্পান স্যাটেলাইট টাউন’ প্রকল্প বাদ যাওয়ার পর চসিকের আরেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম একই ভূমিতে গার্মেন্টস পল্লী গড়ার উদ্যোগ নেন। এ বিষয়ে ২০১৩ সালের ৫ জুন তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন তিনি। কিন্তু মেয়াদকালে তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
এরপর মেয়র থাকাকালের আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে বিজিএমইএর প্রতিনিধিরা সাক্ষাতে এলে গার্মেন্টস পল্লী করার বিষয়ে আশ্বস্থ করেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৫ অক্টোবর বিজিএমইএ প্রতিনিধি দলের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে একই জায়গায় ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অ্যাপারেল জোন (কালুরঘাট) নির্মাণে একমত পোষণ করেন তিনি। ২০১৬ সালের ৩ জুন দু’পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে সমাঝোতা চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কাজও শুরু হয়নি। আড়াইশ কোটি টাকায় পুরোদমে ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন অ্যাপারেল জোন’ প্রকল্প পুরোদমে বাস্তবায়িত হলে প্রত্যক্ষভাবে ৩০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং বছরে পৌনে ১ বিলিয়ন ডলার আয় করার কথা ছিল।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ২৮ নভেম্বর মোট ভূমির এক দশমিক ৭১ এক জায়গায় ৪৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ নির্মাণ শুরু হয়।