শেষ হচ্ছে আরেকটি শিক্ষাবর্ষ। আর ক’দিন পরই নতুন বছর। নতুন বছর মানেই নতুন ক্লাস আর নতুন বইয়ের উৎসব। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। উৎসব আমেজে নতুন বই হাতে পাওয়ার লোভে বছরের প্রথম দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকে সারাদেশের কয়েক কোটি শিক্ষার্থী। যেন শুধুই নতুন বছরের প্রথম দিনের ক্ষণ গণনা। ওই দিন দেশজুড়ে চলবে বই উৎসব। নতুন বই হাতে নিয়ে নতুন স্বপ্নের বীজ বুনবে শিক্ষার্থীরা। নতুন বইয়ের গন্ধে মাতোয়ারা শিক্ষার্থীর উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে যাবে শিক্ষক-অভিভাবকদেরও। বই উৎসব ঘিরে চট্টগ্রামের স্কুলগুলোতে বেশ কয়েক মাস আগে (বিশেষ করে অক্টোবর) থেকেই আসতে শুরু করে নতুন বই। তবে এবার নভেম্বর শেষ হতে চললেও এখনো পর্যন্ত একটি বইও পায়নি চট্টগ্রাম।
এই বিলম্বের কারণে নির্ধারিত সময়ে শতভাগ বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কাও উঁকি দিচ্ছে। যদিও ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ শতভাগ বই পাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম। তিনি আজাদীকে বলেন, এখনো পর্যন্ত আমরা কোনো বই পাইনি। তবে এ নিয়ে এখনই দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কিছুদিনের মধ্যে বই সরবরাহ শুরু হবে। আর ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ অর্থাৎ ১ জানুয়ারির আগেই চাহিদার সব বই চলে আসবে বলে আমরা আশা করছি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, মহানগরীর ৬টি থানা ও ১৫টি উপজেলাসহ চট্টগ্রাম জেলায় প্রাথমিক পর্যায়ের মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৫৩টি। এর মধ্যে জাতীয়করণকৃতসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২ হাজার ২৬৯টি, বেসরকারি কিন্ডার গার্টেন (কেজি স্কুল) ১ হাজার ৬৭৭টি, এনজিও স্কুল ১৩৩টি, উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন ১২৯টি, আনরেজিস্ট্রার্ড স্কুল ১৪টি, পরীক্ষণ স্কুল ২টি, কেজি স্কুল (ইংরেজি মাধ্যম) ৮৮টি এবং অন্যান্য ৪১টি স্কুল রয়েছে।
সবমিলিয়ে জেলার ৪ হাজার ৩৫৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাক-প্রাথমিকের ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৬ জনসহ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ৮২ হাজার ৮১০ জন। এসব শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৩ সালের সম্ভাব্য চাহিদার ভিত্তিতে বরাদ্দকৃত মোট বইয়ের সংখ্যা সাড়ে ৪৭ লাখের কিছু বেশি (৪৭ লাখ ৫২ হাজার ২৯৭টি)। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মনিটরিং কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ২১ নভেম্বর (গতকাল) পর্যন্ত একটি বইও পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।
প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর অক্টোবরের দিকে স্কুলগুলোতে বই আসা শুরু হয়। ছাপাখানা থেকে বইগুলো সরাসরি উপজেলা পর্যায়ের গোডাউনে পৌঁছে দেয়া হয়। পরবর্তীতে গোডাউন থেকে বইগুলো স্কুল পর্যায়ে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে। তবে এবার নভেম্বর শেষ হতে চললেও ছাপাখানাগুলো এখনো পর্যন্ত কোনো বই সরবরাহ দিতে পারেনি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের পাশাপাশি চট্টগ্রামের দুটি এবং নোয়াখালীর একটি ছাপাখানায় পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজ চলছে। ছাপাখানাগুলোতে বই মুদ্রণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শনে আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। থানা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত এ কমিটি প্রায় প্রতিদিনই ছাপাখানা পরিদর্শন করছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সংশ্লিষ্টরা।