ঘড়ির কাঁটা তখন সন্ধ্যা ৬টা ছুঁই ছুঁই। কালুরঘাট সেতুর পশ্চিম পাড়ে গাড়ির দীর্ঘলাইন আর শত শত পথচারীর জটলা। জটলা ঠেলে হেঁটে সেতুর উপর উঠতেই দেখা গেল, মাঝপথে দাঁড়িয়ে আছে নগরগামী একটি ওয়াগন ট্রেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ফার্নেস অয়েলবাহী ওয়াগনটি (ট্রেন) দোহাজারী পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টে তেল খালাস করে নগরে ফেরার পথে কালুরঘাট সেতু পার হতে গিয়ে হঠাৎ লাইনচ্যুত হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় মধ্যবয়সী কর্মজীবী এক নারীকে চেঁচামেচি করতে শোনা গেল। তার নাম জোসনা আকতার। কাজ করেন নগরীর সিঅ্যান্ডবি এলাকায় বেসরকারি একটি কোম্পানিতে। দিনভর কাজ শেষে পরিশ্রান্ত শরীর নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু গাড়ি করে পার হবেন দূরে থাক, হেঁটে পার হওয়ারও উপায় নেই। তাই ক্ষোভ ঝাড়ছিলেন তিনি।
এ সময় কান্না কান্না কণ্ঠে তিনি বলেন, মরার সেতুটি ভেঙে গেলেই নিস্তার পেতাম আমরা। শুধু জোসনা নন, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে কালুরঘাট সেতুর উপর ট্রেনটি বিকল হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় ঘরে ফেরা হাজারও কর্মজীবী নারী-পুরুষকে। এ সময় অনেকে জানান, কাজ শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে সেতু পার হতে গিয়ে দেখি, সেতুর উপর একটি ট্রেন বিকল হয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে আছে। উভয় পাড়ে শত শত গাড়ির জট লেগে যায়। হেঁটে সেতু পার হওয়ার উপায় নেই। কাউকে দেখা গেল নৌকা বা সাম্পানযোগে পার হতে। আবার অনেকে নতুন ব্রিজ হয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন।
স্থানীয় গোমদন্ডী পাইলট স্কুলের শিক্ষক সেলিম মাহমুদ বলেন, আমি বাইক নিয়ে সেতুর পূর্ব পাড়ে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়েছিলাম। অবস্থা বেগতিক দেখে পরে নতুন ব্রিজ হয়ে বাসায় ফিরতে হয়েছে। শুধু আমি একা নই, আমার মতো আরো অনেকে নতুন ব্রিজ হয়ে গন্তব্যে গেছে।
গোমদণ্ডী স্টেশন মাস্টার অনুপম দে বলেন, ট্রেনটি দোহাজারী পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্টে ফার্নেস তেল নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে চট্টগ্রাম ফেরার পথে কালুরঘাট সেতুর মাঝখানে গার্ড ব্রেক লাইনচ্যুত হয়। তবে ট্রেনটির অন্যান্য বগি নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। লাইনচ্যুত গার্ড ব্রেক সরিয়ে নিতে উদ্ধারকারী ক্রেন আনার প্রক্রিয়া চলছে।
সেতুর টোল অফিসে দায়িত্বরত জাহাঙ্গীর আলম নামে এক কর্মচারী গত রাত ৮টায় আজাদীকে বলেন, ট্রেনের লাইনচ্যুত বগিটি এখনো সরানো যায়নি। যান চলাচল এখনো বন্ধ আছে।