বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক চাকরিটাকে ঐচ্ছিক মনে করেন : রাষ্ট্রপতি

| রবিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২২ at ৯:৫৯ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকই মূল চাকরির দিকে মনোযোগী নয় অনুযোগ করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আক্ষেপের সুরে বলেছেন, তারা এ দায়িত্বকে ঐচ্ছিক হিসেবে নেন। এছাড়া কিছু উপচার্য ও শিক্ষকের কর্মকাণ্ডে অন্যদের মর্যাদার জায়গাটা সংকুচিত হয়ে আসছে বলেও মনে করেন তিনি। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে শিক্ষকদের মূল্যায়নে এসব কথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সবাই কৃতী ও সেরা ছাত্র। তারা যেকোনো ক্ষেত্রে সাফল্য নিয়ে আসতে পারে। তাই শিক্ষক হিসাবে পেশার প্রতি দায়িত্বশীল থাকবেন এটাই সবার প্রত্যাশা। অনেক শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটাকে ঐচ্ছিক দায়িত্ব মনে করেন। বৈকালিক কোর্স বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেওয়াকেই তারা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। ছাত্র-শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের সাথে এটি খুবই বেমানান। খবর বিডিনিউজের।

শিক্ষকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, আপনারা সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে নেতৃস্থানীয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। কিন্তু ইদানিং কিছু কিছু উপাচার্য ও শিক্ষকদের কর্মকাণ্ডে শিক্ষকদের সম্মানের জায়গাটা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। আপনাদের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা ও শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই কিছুসংখ্যক অসাধু লোকের কর্মকাণ্ডের জন্য গোটা শিক্ষক সমাজের মর্যাদা যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, একজন উপাচার্যের মূল দায়িত্ব হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমের তত্ত্বাবধান, পরিচালনা, মূল্যায়ন ও উন্নয়ন। কিন্তু ইদানিং পত্রিকা খুললেই মনে হয় পরিবার-পরিজন ও অনুগতদের চাকরি দেওয়া এবং বিভিন্ন উপায়ে প্রশাসনিক ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা নেওয়াই যেন কিছু উপাচার্যের মূল দায়িত্ব। আমরা চাই উপাচার্যের নেতৃত্বে ও ছাত্র-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও উচ্চ শিক্ষার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হোক অর্থাৎ সেন্টার অব এঙিলেন্স হিসেবে গড়ে উঠুক। শিক্ষকগণ হয়ে উঠুন সমাজে মর্যাদা ও সম্মানের প্রতীক।

শিক্ষকসহ যেকোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পরামর্শ দেন আচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার গুণগত ও গবেষণা মান বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, আধুনিকতা ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় জীবনযাত্রা গতিশীল হলেও দুঃখের বিষয় হলো গবেষণায় আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। এক সময় প্রাচ্যের অঙফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখা হত। সময়ের বিবর্তনে ক্রমেই যেন সেই ঐতিহ্য সংকুচিত হয়ে আসছে। অথচ ছাত্র শিক্ষক, ভৌত অবকাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত না হলেও কয়েকগুণ বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় শিক্ষার গুনগত মান এবং গবেষণার ক্ষেত্র, পরিমাণ ও মান কতটুকু বেড়েছে বা কমেছে সেটিও মূল্যায়ন করতে হবে। গবেষণার বিষয়ে গণমাধ্যমে যেসব খবর প্রচারিত হয়, তা দেখলে বা শুনলে অনেক সময় আচার্য হিসাবে আমাকেও লজ্জায় পড়তে হয়। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক, আর তা পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়কে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

সমাবর্তনে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরাসি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জঁ তিরোল। অনুষ্ঠানে তাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বক্তব্যে তিরল বলেন, পেশাজীবনে সফলতা অর্জনে আত্মবিশ্বাস, দায়িত্ববোধ ও ঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা থাকতে হবে। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পিত উপায়ে কঠোর পরিশ্রম করলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য ও অগ্রগতির প্রশংসা করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওটা কুয়াশা নয়, বাতাসে মিশে যাওয়া ধুলোবালি
পরবর্তী নিবন্ধবিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট আগামী মাসে কাটার আশা প্রধানমন্ত্রীর