বঙ্গবন্ধু টানেলের উদ্বোধন পিছাল

সংযোগ সড়ক ও ইন্টারসেকশনসহ কিছু কাজ শেষ হয়নি চালু হবে আগামী স্বাধীনতা দিবসে ।। দুটি টিউবের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া উদযাপন চলতি মাসে

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:০২ পূর্বাহ্ণ

আগামী স্বাধীনতা দিবসে চালু হবে বহুল প্রত্যাশার বঙ্গবন্ধু টানেল। নদীর দুই পাড়ে টানেলের সংযোগ সড়ক এবং ইন্টারসেকশনসহ আনুষাঙ্গিক কাজগুলো শেষ না হওয়ায় টানেল উদ্বোধনের দিন পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে চলতি মাসে টানেলের দুটি টিউবের কাজ সম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারটি ছোট পরিসরে উদযাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল চলতি বছরেই শুরু করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে রাতে-দিনে কাজ চলছিল। করোনাকালে পিছিয়ে যাওয়ার ক্ষতি পোষাতে নানাভাবে চেষ্টা করা হয়েছিল। এর ফলে টানেলের মূল কাজ নদীর তলদেশে দুটি টিউবের নির্মাণ সম্পন্ন করা সম্ভব হলেও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা অংশের সংযোগ সড়কের কাজ শেষ হয়নি। একই সাথে পতেঙ্গা এলাকায় লিংক রোড, এয়ারপোর্ট রোড, বিচ রোড এবং স্থানীয়দের চলাচলের পথগুলো আলাদা করে একটি ইন্টারসেকশন নির্মাণের কাজও সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। গতিশীল ইন্টারসেকশন নির্মাণের জন্য গঠিত কমিটি একাধিক বৈঠক করে ডিজাইন প্রস্তুত করেছে। এখন সরকারের অনুমোদন পাওয়ার পর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হবে।

কমিটির একজন সদস্য আজাদীকে বলেন, ইন্টারসেকশনে মূলত অনেকগুলো রাস্তা এবং ওভারপাসের সমন্বয় করা হবে; যাতে পতেঙ্গা এলাকায় যান চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়। টানেলের গাড়িকে নির্ঝঞ্ঝাট রেখে পতেঙ্গা এলাকার ট্যুরিস্ট এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের যান চলাচল ঠিক রাখতে হবে। এছাড়া বিমানবন্দরের যাত্রীদের ব্যাপারটি মাথায় রেখে ইন্টারসেকশন ডিজাইন করা হয়েছে। টানেল ঘিরে পতেঙ্গা এলাকায় যানবাহনের প্রচুর চাপ হবে জানিয়ে ওই বিশেষজ্ঞ জানান, এই চাপ সামাল দেয়ার পাশাপাশি যাতে কোনো প্রতিকূলতা তৈরি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

জানা যায়, ইন্টারসেকশন ছাড়াও সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ এবং ব্যারিয়ার স্থাপনসহ বিভিন্ন কাজ এখনো বাকি রয়েছে। নানাভাবে চেষ্টা করেও আনোয়ারা এবং পতেঙ্গা অংশের কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে টানেল চালু করা হলেও সুফল মিলবে না।

অসম্পূর্ণ অবস্থায় চলতি বছরে টানেল চালু করা ঠিক হবে না উল্লেখ করে ওই বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী জানান, সব কাজ সম্পন্ন করার পর আগামী স্বাধীনতা দিবসে চট্টগ্রামবাসীকে টানেল উপহার দেয়া হবে। এ ব্যাপারে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে টানেলের দুটি টিউবের ভিতরে সড়কবাতি স্থাপন, অগ্নি প্রতিরোধ বোর্ড, সাজসজ্জার প্লেট স্থাপন, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ও পাম্প স্থাপন, বাতাস চলাচলের জন্য ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। এসব কাজ শেষ করার পর চলতি মাসে ছোট পরিসরে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে টানেলের দুটি টিউবের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারটি উদযাপন করা হবে। এই অনুষ্ঠানে অনলাইনে প্রধানমন্ত্রীর যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকল্পটি নিয়ে সরকার তাড়াহুড়ো করতে চাচ্ছে না উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, উদ্বোধনের পর পুরোদমে টানেল চালু করে দেয়া হবে। টানেল চালু করার পর যাতে কোনো প্রতিকূলতা তৈরি না হয় তা আগেভাগে নিশ্চিত করা হবে। এটি কেবল নদীর তলদেশের একটি পথ নয়, এটি লাখ লাখ মানুষের ভাগ্য বদলে দেয়ার পথ। তাই পুরো ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার অগ্রসর হচ্ছে।

উল্লেখ্য, চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলীল তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলে ১০ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থের টিউব দুটির একটি থেকে অপরটির দূরত্ব প্রায় ১১ মিটার। নদীর তলদেশ থেকে টিউবের সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৬ মিটার। টিউবের ভেতরের উচ্চতা ১৬ ফুট। দুই টিউবের প্রথম সংযোগপথের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ১৪ মিটার, দ্বিতীয়টির দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৩৪ মিটার এবং শেষটির দৈর্ঘ্য ১০ দশমিক ৭৪ মিটার। প্রতিটির ব্যাস গড়ে ৪.৫ মিটার। কোনো কারণে কোনো একটি সুড়ঙ্গের ভেতর দুর্ঘটনা ঘটলে সংযোগপথ দিয়ে নিরাপদে অন্য সুড়ঙ্গে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহুমকি-ধমকিতে লাভ হবে না
পরবর্তী নিবন্ধভণ্ডামি বন্ধ করে ইউরোপকে ক্ষমা চাইতে বললেন ফিফা প্রধান