হরেক রকম শীতের সবজিতে সেজেছে শঙ্খচর ও নদী তীরবর্তী এলাকা। বেগুন, মুলা, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, টমেটোসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেতে ভরে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা।
চন্দনাইশের দোহাজারী, চাগাচর, লালুটিয়া, দিয়াকুল, ধোপাছড়ি, চিরিংঘাটা, বৈলতলী, বরমা, সাতকানিয়ার খাগরিয়া, কালিয়াইশ, ধর্মপুর, বাজালিয়া, পুরানগড়, শিলঘাটা এলাকার লক্ষাধিক কৃষক শীতের সবজি চাষ করেছেন। নতুন চারা রোপণ, পরিচর্যা, সবজি তুলে বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। মৌসুমে সবজি বিক্রি করে জমির খাজনা, পূর্বের ধার পরিশোধ করার পাশাপাশি পুরো বছরের সঞ্চয় করে নিবেন অনেকে। তাই এখন বসে থাকার সময় নেই। এই শীত মৌসুমেই একই জমিতে কয়েকবার সবজির চাষাবাদ করবেন তারা। এর মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে ধনে পাতার সাথে ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচামরিচ ও বেগুন চাষ করছেন। চন্দনাইশ ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের রবি শষ্যভান্ডার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। প্রতিদিন ভোরে পাইকারি ক্রেতারা দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজি বাজার দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে ট্রাকযোগে সবজি নিয়ে যান চট্টগ্রাম নগরীসহ বিভিন্ন স্থানে। তাছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে টাটকা সবজি কিনতে প্রতিদিন ভোরে ভিড় করেন স্থানীয়রাও।
উত্তর কালিয়াইশের কৃষক আবুল কাশেম জানান, আগাম শীতকালীন সবজিতে লাভ হয় বেশি। তাই শক্সখচর ও তীরবর্তী কৃষকরা আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েন। ইতোমধ্যে আগাম শীতকালীন সবজি হিসেবে তিনি দুই বার মুলা চাষ করে বিক্রি শেষ করেছেন। শীত যত বেশি পড়বে সবজিও ততবেশি আসবে বাজারে। শীতের মাঝামাঝি সময়ে সব রকমের সবজি একই সাথে বাজারে তুলেন কৃষকরা। এতে সবজির ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায় না। তাই আগে যারা সবজি বিক্রি করতে পারেন তারাই বেশি লাভবান হন। তিনিও মুলা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেছেন। বর্তমানে তিনি একই জমিতে ৩য় বারের মতো মুলা চাষ শেষ করে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা রোপন করেছেন বলে জানান। কৃষক আবুল মনসুর সিটু জানান, শীতকালীন সবজি স্বাদে, গুণে অতুলনীয় হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা শীতকালীন সবজি চাষে বেশি মনোনিবেশ করেন। অর্থও বিনিয়োগ করেন বেশি। শক্সখচর ও তীরবর্তী এলাকায় গেলেই দেখা যায় শত শত কৃষকের ব্যস্ততা।
মো. জাহিদুল ইসলাম নামে এক এনজিও কর্মকর্তা জানান, শক্সখচরের কৃষকরা বাপ-দাদার দেখানো পথ অনুসরণ করে, নিজস্ব জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন যুগের পর যুগ। এতে কৃষকদের লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়। এক্ষেত্রে কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে গিয়ে পরামর্শ ও বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ দেয়া হলে কৃষকরা আরো বেশি উপকৃত হতো। একই সাথে সরকারিভাবে কৃষকদের যেসব প্রণোদনা দেয়া হয়, তা মাঠ পর্যায়ের কৃষকরা পান না। সঠিক কৃষকদের হাতে যদি প্রণোদনা পৌঁছে দেয়া যেতো অধিক লাভবান হতেন তারা।
চন্দনাইশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার জানান, প্রতি মৌসুমে শক্সখচর ও তীরবর্তী অঞ্চলে শীতকালীন সবজির ভালো চাষাবাদ হয়। এখানকার সবজি স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় চাহিদাও বেশি। তিনি বলেন, গত মৌসুমে চন্দনাইশে ২ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষাবাদ হয়েছিল। চলতি বছরও সমপরিমাণ জমিতে শীতকালীন সবজির চাষাবাদ হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে এখানকার কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ নানা ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হয়ে থাকে।