হঠাৎ মাছে সয়লাব কক্সবাজার শহরের পর্যটক অধ্যুষিত লাবণী পয়েন্ট সৈকত। আজ বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সকালে মহেশখালীর একটি টানা জালের বোটে প্রায় ১৪ মেট্রিক টন মাছ ধরা পড়ে কিন্তু এত মাছ ধারণের ক্ষমতা সেই নৌকায় না থাকায় অতিরিক্ত মাছগুলো স্থানীয়দের কাছেই তুলে দেয়া হয়। শত শত স্থানীয় লোক ও পর্যটক জাল থেকে খুলে সেই মাছ সংগ্রহ করেন।
স্থানীয় বীচকর্মী বেলাল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে মহেশখালীর ৯ জেলেসহ একটি টানা জালের বোট কক্সবাজার উপকূলে জাল ফেলে। সকাল ৮টার দিকে ওই জালে বিপুল পরিমাণ মাছ ধরা পড়লে জেলেরা সেই জাল তুলতে গিয়ে ব্যর্থ হয়। এরপর তারা জাল থেকে মাছগুলো খুলে নৌকা বোঝাই করার এক পর্যায়ে সেই নৌকাটি পূর্ণ হয়ে গেলে বাকি মাছগুলো স্থানীয়দের দিয়ে দেয়া হয়। এরপর শত শত স্থানীয় লোক ও পর্যটক যে যেভাবে পারে জাল থেকে খুলে ইচ্ছেমত মাছ নিয়ে যান। অনেকেই বিনামূল্যে সেই মাছ সংগ্রহ করার পর আবার খুচরা ও পাইকারি দরে অন্যত্র বিক্রি করে দেন।
তিনি জানান, ধরা পড়া মাছের মধ্যে মাত্র এক চতুর্থাংশ নিয়ে যায় জেলেরা। বাকি মাছগুলো নৌকা বোঝাই করতে না পেরেই তারা স্থানীয়দের হাতে তুলে দেয়। এই মাছের মধ্যে প্রায় ৫ টনের মতো মাছ স্থানীয় ও পর্যটকরা নিয়ে যান। আর সমপরিমাণ মাছ নাজিরারটেক শুটকি মহালের ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যান।
এদিকে, এসব মাছ দেখতে সৈকতে ভিড় করে হাজার হাজার মানুষ। তাদের সামলাতে হিমশিম খায় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও স্থানীয় বীচকর্মীরা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক শামীম হোসেন বলেন, “জেলেরা সাগরে অতিরিক্ত মাছ পেয়ে জালসহ ফেলে দেয়। আর এ মাছ কুড়িয়ে নিতে স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকরাও ভিড় করেন।”
খবর পেয়ে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বোরি) কুইক রেসপন্স টিমের বিজ্ঞানীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও রেসপন্স টিমের সদস্য তরিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “ধরা পড়া মাছের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল পোপা ও চামিলা। আর এসব মাছ অগভীর সমুদ্র উপকূলে ঝাঁকে ঝাঁকে চলাফেরা করে যাকে স্কুল অভ ফিশ বলা হয়। একটি ‘স্কুলে’ কয়েক লাখ পর্যন্ত মাছ থাকতে পারে।”
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর জানান, একেকটি টানা জালে বা বেহুন্দি জালে মাছের একেকটি ‘স্কুল’ ধরা পড়তে পারে। বেশ কয়েক বছর আগে টেকনাফের শামলাপুরে জেলেদের এক জালে প্রায় কোটি টাকার পোপা মাছ ধরা পড়েছিল।
স্থানীয়রা জানান, টানা জালে ছোট থেকে বড়, সকল ধরনের মাছ ধরা পড়ে। এসব জাল থেকে পোনা ছাড়া কোনো মাছের বের হওয়ার সুযোগ নেই।
এর আগে গত ১১ ও ১৩ নভেম্বর এবং গত ৩ আগস্ট সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, বেইলি হ্যাচারি ও দরিয়ানগর এলাকায় শত শত মরা জেলিফিশ বা ধলা নুইন্যা ভেসে এসেছিল।