কারিগরি জটিলতা আর বৈরি আবহাওয়ার কারণে পরপর তিনবার বাতিল হওয়ার পর অবশেষে চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে যাত্রীবিহীন মহাকাশযান ‘ওরিয়ন’। চাঁদে ফের মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তার প্রথম ধাপ সম্পন্ন হল গতকাল বুধবার। বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৪৭ মিনিটের সফল উৎক্ষেপণ নিজের টাই কেটে উদযাপন করেছেন মিশনের লঞ্চ ডিরেক্টর চার্লি-ব্ল্যাকওয়েল থম্পসন; নাসার পুরনো প্রথা এটি। নাসার চাঁদে মানুষ পাঠানোর ‘মিশন’ সম্পন্ন হবে মোট ৩টি ধাপে। যার প্রথম ধাপ ‘আর্টেমিস ১’। এটি যাত্রীবিহীন অভিযান। যার মূল লক্ষ্য, চাঁদের মাটিতে নামার জন্য সম্ভাব্য ‘ল্যান্ডিং সাইট’গুলো চিহ্নিত করা। একই পরীক্ষা হবে মিশনের দ্বিতীয় ধাপেও। তা সফল হলে তৃতীয় ধাপের অভিযানে চাঁদে পাড়ি দেবে মানুষ। ৫০ বছর পর পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহে ফের মানুষ পাঠানোর জন্য উদ্যোগী হয়েছে নাসা।
এর আগে ‘আর্টেমিস ১’-এর উৎক্ষেপণ বারবার বিলম্বিত হয়েছে। গত ২৯ আগস্ট এই উৎক্ষেপণের দিন ধার্য করা হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ে কাউন্ট ডাউন শুরুও হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু মাঝপথে তা থামিয়ে দিতে হয়। রকেটের তরল হাইড্রোজেনের লাইনে ছিদ্র ধরা পড়ে শেষ মুহূর্তে। বহু চেষ্টা করেও সমস্যার সমাধান করা যায়নি। অভিযান বাতিল করতে বাধ্য হয় নাসা। যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে তার পরেও এই অভিযান বাতিল করতে হয়েছিল। এরপর ২ সেপ্টেম্বর উৎক্ষেপণের দিন নির্ধারিত হয়েছিল। সে বার তরল হাইড্রোজেনের ট্যাঙ্কে ছিদ্র ধরা পড়ে। আবার বাতিল হয় অভিযান। বস্তুত, ‘আর্টেমিস ১’র উৎক্ষেপণের সময়ে রকেটের নিচে থাকা ৪টি বড় ইঞ্জিনে ৩০ লাখ লিটার প্রচণ্ড ঠান্ডা তরল হাইড্রোজেন ও অঙিজেন পুড়ে বিপুল শক্তি উৎপাদিত হয়, যার সাহায্যে মহাকাশে পাড়ি দেয় রকেট। গতকালও বিপত্তি ঘটেছিল এসএলএস রকেটের কোর স্টেজে তরল হাইড্রোজেন সরবরাহের লাইনে।
উৎক্ষেপণ সাময়িতভাবে স্থগিত করার নির্দেশ আসে কন্ট্রোল রুম থেকে। সে সময় প্রশ্ন উঠেছিল, আবারও কি ভেস্তে যাবে আর্টেমিস ওয়ানের যাত্রা। সব জটিলতার সমাধান করে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ উৎক্ষেপণের সবুজ সংকেত আসে নাসার কন্ট্রোল রুম থেকে। ৪০ মিনিট বিলম্বে ১২টা ৪৭ মিনিটে গর্জে ওঠে এসএলএসের রকেট ইঞ্জিনগুলো।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, তাদের কাছে এটি একটি ঐতিহাসিক সাফল্য। এর আগে ১৯৬৯ সালে ‘অ্যাপোলো-১১’ মিশনে প্রথম চাঁদে মানুষ পাঠানো হয়েছিল। নাসার সেই অভিযানে চাঁদে পাড়ি দিয়েছিলেন নীল আর্মস্ট্রং এবং এডুইন অলড্রিন। ১৯৭২ সালে নাসার মহাকাশযান ‘অ্যাপোলো-১৭’ মহাকাশচারী জেন সারনানকে নিয়ে নেমেছিল চাঁদে। সেই ঘটনার অর্ধশতক পূর্তিতে আবার চাঁদে মহাকাশচারী পাঠানোর লক্ষ্য নিয়েছে নাসা।