বিশ্বের জনসংখ্যা যে নতুন আরেকটি মাইলফলক অতিক্রম করছে, পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদও সে চাপ অনুভব করতে পারছে। মানুষ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ, গতি বাড়ছে পরিবেশ ধ্বংসের। একই সঙ্গে আশঙ্কা বাড়ছে পৃথিবী আর মানবজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে।
বিশেষজ্ঞদের টিকে থাকার মন্ত্র অবশ্য বলছে, কেবল
বাড়ন্ত জনসংখ্যার দিকে নজর রাখলেই চলবে না, মনোযোগ দিতে হবে সম্পদের বেশি ভোগের দিকেও।
জানা যায়, এ বছরের ১৫ নভেম্বর বিশ্বের জনসংখ্যা ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি অতিক্রম করছে; এই হিসাবে শেষ ১০০ কোটির মাইলফলকে পৌঁছাতে পৃথিবীকে এক যুগও অপেক্ষা করতে হয়নি। বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি অভাবনীয় সফলতার কাহিনী। ১৯৫০ সালের পর থেকে গত ২৫ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য গড় আয়ু বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রজনন সেবার আওতা বাড়ায়, পরিবার পরিকল্পনা ও মেয়েদের শিক্ষালাভের অধিক সুযোগের ফলে জন্মহার কমার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ সারা হারটগ। তবে পৃথিবীকে এই ‘অভাবনীয় সফলতার’ মূল্যও চুকাতে হয়েছে। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসরণ ও পরিবেশ ধ্বংসের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যোগ হওয়া প্রতিটি মানুষ এই গ্রহের সীমিত জৈবিক সম্পদের ওপর আগের তুলনায় আরও বেশি চাপ সৃষ্টি করছে। খবর বিডিনিউজের।
ধনীদের মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ ভোগ : হারটগ বলছেন, দক্ষিণের (লাতিন আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকা ও ওশেনিয়া) উপচে পড়া জনসংখ্যার উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সম্পদের অতি ব্যবহার যে টেকসই ব্যবস্থাপনার বিপরীত, সেটা বলা সহজ। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানোই যে এর একমাত্র সমাধান, সেটা ভাবলেও ভুল হবে। বেশি সম্পদ ব্যবহার এবং এর ফলে হওয়া দূষণের পথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেয়েও অনেক বেশি অবদান রাখছে আয় বেড়ে যাওয়া। গ্লোবাল ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্কের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীর সবাই যদি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মতো করে বাস করতে চায়, তাহলে আমাদের অন্তত ৫টি পৃথিবীর সম্পদ লাগবে। আর যদি নাইজেরিয়ার নাগরিকদের মতো বাস করতে চাই, তাহলে পৃথিবীর এখন যে সম্পদ আছে তার ৩০ শতাংশই বেঁচে যাবে। একই কথা সত্য ভারতের ক্ষেত্রেও। ১৩০ কোটির বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশটির নাগরিকদের মতো করে যদি পৃথিবীর সবাই বাস করতে চান, তাহলে পৃথিবীর মাত্র ৮০ শতাংশ সম্পদ ব্যবহৃত হবে।
বিশ্বের এখনকার জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে টেকসই ব্যবস্থাপনার বিপরীতে প্রতিবছর আমাদের পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদের ১৭৫ শতাংশ দরকার, অর্থ্যাৎ এখন যা আছে তার চেয়েও ৭৫ শতাংশ বেশি, বলছে গ্লোবাল ফুটপ্রিন্ট নেটওয়ার্ক। মানে দাঁড়াচ্ছে, আমাদের এখনই দরকার পড়ছে পৌনে ২টা পৃথিবীর।
জনসংখ্যায় নয়, সমাধান সম্পদ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে : জনসংখ্যা ৮০০ কোটিতে পৌঁছানো আমাদের বৈচিত্র ও অগ্রগতিকে উদ্যাপনের উপলক্ষ এনে দিয়েছে, সঙ্গে মনে করতে বলছে ধরিত্রীর প্রতি আমাদের যৌথ দায়িত্বের কথাও, এক বিবৃতিতে একথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। খাদ্য হোক বা পানি, ব্যাটারি কিংবা জ্বালানি গ্যাস, জনসংখ্যা যত বাড়বে এসব সম্পদে আমাদের ভাগও ততই কমতে থাকবে। তবে এর সঙ্গে, প্রতিটি মানুষ কী পরিমাণ সম্পদ ব্যবহার করছে তাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, বলছেন নীতিনির্ধারকরা। সম্পদ ব্যবহারের ধরনে পরিবর্তন আনলে তা এখনকার তুলনায় বড় পার্থক্য সৃষ্টি করবে, ভাষ্য তাদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীর কাছে এখন যে সম্পদ আছে তা ৮০০ কোটি মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট। আমরা যদি ভূমি ব্যবহারের এখনকার চর্চায় বদল আনি, তাহলে সম্ভবত এই সম্পদ অতিরিক্ত আরও কয়েকশ কোটি মানুষের চাহিদা মেটাতে পারবে। খুঁজতে হবে কম সম্পদ ব্যবহারে ভালো থাকার উপায়। আমাদের অবশ্যই আমাদের সম্পদ ব্যবহারের ধরনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে। কম সম্পদে ভালো থাকার উপায় শেখার মানে এই নয় যে সবার জীবনযাত্রা একই হবে। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এটা দেখানো যে, অধিক সম্পদ ব্যবহার না করেই জীবনযাত্রার মান ‘আশাবাদী ও আকর্ষণীয়’ রাখা সম্ভব।