মানুষ বড় বিচিত্র প্রাণী। সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও সে প্রতিনিয়ত করে যায় নানা রকম আচরণ, যা মানব জগতের জন্যে মনে রাখার মতো কাহিনী। জীবন চলার পথে এইসব ঘটনা আমাদের মনে দাগ কেটে যায়। আমার এই ছোট জীবনে আমার সৌভাগ্য হয়েছে বেশকিছু দেশ ঘুরে দেখার। সেই সুবাদে আমি এখন আছি কানাডাতে। বর্তমানে আমি মন্ট্রিয়েল শহরে আছি। বেশ কিছুদিন আছি বলে কিছু ভলান্টিয়ার কাজ করার সুযোগ আমার হয়েছে। আজকে একটা ছোট অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে চাই। ভলান্টিয়ার করার সুবাদে আমার প্রতিদিন বাস আর মেট্রো করে যাওয়া আসা করতে হয়। প্রতিদিন আমি যেই বাস করে যাই, সেই বাসে এক মহিলা একটা ২/৩ বছরের বাচ্চা নিয়ে কাজে যান। মেক্সিকান হবে। প্রতিদিন দেখা হতেই হাই হ্যালো হয়। একদিন কথা প্রসঙ্গে জানলাম- বাচ্চাটা তাঁর বোনের। বোন আর বোনের স্বামী এক ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন সকালের শিফটে। এই মহিলাও একই ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন ইভনিং শিফটে। বোন আর বোনের স্বামী ভোর ৫ টায় বড় বোনের কাছেই বাচ্চাটাকে রেখে কাজে চলে যান। ঘরে এর কেউই না থাকা তে বড় বোনের কাছে রেখে আসেন। বড় বোন নাইট শিফট এ কাজে যান বাচ্চাটা কে নিয়ে যান। কাজে পৌঁছেই ছোট বোনকে বাঁচা হ্যান্ডওভার করে ফ্যাক্টরিতে কাজে ঢুকে যান। মজার ব্যাপার হচ্ছে,আমি যতক্ষণ বাস এ থাকি শিশুটাকে খুবই উচ্ছল আর প্রাণবন্ত দেখতে পাই। দিন যেতে যেতে আমারও একটা অভ্যাস হয়েই গেল প্রতিদিন বাস উঠে আমি শিশুটাকে খুঁজে নিতাম। এভাবে বেশ কিছুদিন পর একদিন দেখলাম শিশুরটির বড় খালা শিশুটির হাতের আঙুলে সুই ফুটিয়ে ব্লাড সুগার টেস্ট করছেন। আমি তো অবাক। একে? বাসে বসেই টেস্ট করে মহিলা শিশুটিকে ইন্সুলিন দিচ্ছেন। পরে জানতে পারলাম শিশুটির হাই সুগার। দিনে ৩ বার ইন্সুলিন নিতে হয়। আমার মনটা হুহু করে উঠলো। শিশুটির জন্যে মন থেকে কেমন যেন একটা দোয়া আসলো। আল্লাহ যেন তাকে সব সময়েই ভালো রাখে। সুদূর কানাডার মন্ট্রিয়েলে এমন একটা বিষয়ে মনে দাগ কেটে যাবে ভাবিনি। বেশ কিছুদিন পর দেখলাম সেই মেক্সিকান মহিলা একা। শিশুটি সাথে নেই।আমি কৌতূহলী হয়েই তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম শিশুটি কোথায়? তিনি বলেন, ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার উপর নিষাধাজ্ঞা দিয়েছেন। শুনে মনটা কেমন যেন হয়েই গেল। কিছুক্ষণ চুপ হয়েই গেলাম। ভাবলাম পৃথিবী বড় কঠিন। মানুষ আরো কঠিন। পরে জানলাম শিশুটির মা কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। ভাবলাম পৃথিবীর সব মা যেন এক রকম। বিভিন্ন দেশ জাতি যা’ই বলো না কোনো সব মা কে সালাম।