ইয়াবা পাচারে নিত্য নতুন কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে পাচারকারীরা। মানুষের পায়ুপথ ও যৌনপথ থেকে শুরু করে গাড়ির গ্যাসের সিলিন্ডারসহ ইয়াবা পাচারে এমন কোনো কৌশল নেই যার আশ্রয় নিচ্ছে না পাচারকারীরা। আর এসব কৌশলের সঙ্গে পরিচিত হতে সময় লাগছে!
শারীরিক প্রতিবন্ধীকে দিয়ে ইয়াবা পাচার সাম্প্রতিক সময়ে মাদক ব্যবসায়ীদের নতুন কৌশল জানিয়ে নগর গোয়েন্দা শাখার সহকারী পুলিশ কমিশনার এ কে এম মহিউদ্দিন সেলিম আজাদীকে বলেন, এ ধরনের একাধিক ঘটনা বেশ আলোচিত হচ্ছে পুলিশ ও র্যাবের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঝে। কারণ সোর্সের সুনির্দিষ্ট তথ্য ব্যতীত প্রতিবন্ধীদের চ্যালেঞ্জ করা মানবিক বিষয়। আবার প্রতিবন্ধী মাত্রই যে মাদক পাচারকারী হবে; তাও সঠিক নয়। কিন্তু একথা সত্য যে, কঙবাজারের টেকনাফ সীমান্ত পথ দিয়ে ইয়াবা প্রবেশের পর সেগুলো চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিতে অন্যতম বাহক হিসেবে কাজ করছেন প্রতিবন্ধীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি এড়াতে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা কৌশল পাল্টে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের পাচারের কাজে ব্যবহার করছে। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ইয়াবা বিক্রিতে প্রতিবন্ধীদের ব্যবহারের বিষয়টি নজরে এসেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশের। রেলস্টেশনে, বস্তিতে, মাদক আখড়ায় যেসব প্রতিবন্ধী ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে জড়িত, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাদের একটি তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। অন্ধ, বোবা, শারীরিকভাবে অসুস্থ- এ ধরনের প্রতিবন্ধীদের দিয়ে ইয়াবা বিক্রি করানো হচ্ছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।
পুলিশ জানায়, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বিশেষ সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করেন সবাই। গাড়িতে বসার সুযোগ কিংবা উঠানামাসহ সবকিছুতে তারা বিশেষ সহানুভূতি পান। সাধারণত তাদের দেহ বা সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে না পুলিশ। সহানুভূতির সুযোগটি নিচ্ছে ইয়াবা পাচারকারীরা।
সূত্র মতে, বাকলিয়া থানায় ইয়াবাসহ প্রতিবন্ধী আবুল হোসেন গ্রেপ্তারের পর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে। প্রতিবন্ধী ইয়াবা
বিক্রেতাদের তালিকা তৈরির কাজে মাঠ পর্যায়ের অফিসারদের ইতোমধ্যে তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। সাধারণত রেলস্টেশনগুলোতেই প্রতিবন্ধীদের দিয়ে বেশি ইয়াবা বিক্রি করানো হচ্ছে। প্রতিবন্ধীদের পুলিশ সন্দেহ করে না। এ সুযোগটাই ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নেয়ার চেষ্টা করছে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহিদুল কবীর উল্লিখিত বিষয়ে সহমত পোষণ করে বলেন, পঙ্গু হামিদ জন্মগতভাবে কোমর থেকে দুই পা পর্যন্ত অচল, ক্র্যাচে ভর দিয়েই চলাফেরা করতে হয়। এরপরও ইয়াবা পাচারকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। গত সাত বছর ধরে এই কাজ করে চলছেন পঙ্গুত্বকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। তবে এবার আর শেষ রক্ষা হলো না। গত ২২ নভেম্বর রাতে নগরীর স্টেশন রোডের নতুন রেলওয়ে স্টেশনের সামনে থেকে প্রতিবন্ধী হামিদকে ২ হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। হামিদ পুলিশকে জানায়, সে স্টেশন রোড হয়ে কদমতলী যাচ্ছিল। সেখান থেকে বাসে করে ইয়াবা পাচারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো। দীর্ঘদিন ধরে সে টেকনাফ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা পাচার করে আসছে।
র্যাব কর্মকর্তা নুরুল আবছারও এ ব্যাপারে একমত যে, প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার করা ইয়াবা চক্রের নতুন কৌশল। বিনিময়ে তারা ৫/১০ হাজার টাকা পান। তিনি বলেন, ১৬ অক্টোবর ইয়াবার বিশাল চালানসহ মাদক চক্রটিকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, ইয়াবার বড় চালানগুলো টেকনাফ থেকে সাগরপথে মহেশখালী-কুতুবদিয়া হয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে নিয়ে আসা হয়। পায়ে জন্মগত ত্রুটি থাকা গ্রেপ্তারকৃত প্রতিবন্ধী হাসান মিয়া বেশির ভাগ সময় টেকনাফে থাকেন। ইয়াবার চালান আনার জন্য টেকনাফ থেকে তিনি সবকিছু গুছিয়ে দেন। প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে কেউ সন্দেহ করে না।
মীরসরাই পৌর সদরের বটতল এলাকার মাদক কারবারি এমরান হোসেনের কাছে ১৪শ পিস ইয়াবা পৌঁছে দিতে গিয়ে পুলিশের জালে আটকে গেছেন নজরুল ইসলাম আরাফাত নামে ৩৫ বছর বয়সী এক প্রতিবন্ধী যুবক। গত ৭ নভেম্বর রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপজেলার হাদি ফকিরহাট এলাকায় বাঁধন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে ইয়াবার চালানসহ পুলিশ তাকে আটক করে। আটক নজরুল এবারই প্রথম নয় ইতোপূর্বেও অসংখ্য চালান পৌঁছে দিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরাফাত জানায়, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে ইয়াবাগুলো নিয়ে মীরসরাই পৌরসভার বটতল এলাকার মাদক কারবারি এমরান হোসেনের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলো।
২৩ জানুয়ারি কঙবাজার জেলার টেকনাফ থানা মৌচনী পাড়া এলাকার মুহাম্মদ আবদুল আমিন প্রকাশ পেঠান (২৮) নামে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী তিন হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে যাত্রীবাহী বাসে টেকনাফ থেকে চট্টগ্রাম শহরে যাচ্ছিল। রাত সাড়ে ১১টার দিকে চুনতি ফরেস্ট রেঞ্জ কার্যালয় এলাকায় ওই যাত্রীবাহী বাসে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ পেঠানের শরীর তল্লাশি করে তিন হাজার ইয়াবা জব্দ করে।