এতোদিন ডেঙ্গু (এনএস-ওয়ান) টেস্ট বাবদ ৫০০ টাকা ফি আদায় করা হতো বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাবগুলোতে। তবে বেসরকারি ল্যাবগুলোকে ৩০০ টাকায় ডেঙ্গু টেস্ট করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে ৭ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্য মন্ত্রীর ঘোষণার পরপর ওই দিনই (৭ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. শেখ দাউদ আদনান স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় ডেঙ্গুর পাশাপাশি রক্তের সিবিসি টেস্টের ফিও নির্ধারণ করে দেয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, এনএস-ওয়ান ফর ডেঙ্গু এবং আইজিজি এন্ড আইজিএম ফর ডেঙ্গু উভয় পরীক্ষা ৩০০ টাকা করে নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এছাড়া রক্তের সিবিসি পরীক্ষা ফি ৪০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশনায় বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি পুনঃনির্ধারণ করার কথা উল্লেখ করে নির্দেশনায় বলা হয়, সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় মানবিক কারণে এই আদেশ অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত আদায় না করতে বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়।
চট্টগ্রামের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ল্যাবগুলোতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা কার্যকর হয়েছে কী না, আজাদীর পক্ষ থেকে খোঁজ নেয়া হয় গতকাল।
সরেজমিনে বেশকয়টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে ডেঙ্গু টেস্ট বাবদ ৩০০ টাকা ফি আদায় করতে দেখা যায়। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এন্ট্রি কাউন্টারে গিয়ে ডেঙ্গু টেস্ট ফি কত জানতে চান এই প্রতিবেদক। জবাবে ৩০০ টাকা বলে জানান এন্ট্রি কাউন্টারে দায়িত্বরত স্টাফ।
পরে জানতে চাইলে গত ৮ নভেম্বর (মঙ্গলবার) থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা কার্যকর করা হয়েছে বলে জানান পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজার ওয়ালী আশরাফ খান। তিনি আজাদীকে বলেন, আমরা নির্দেশনা মেনে ডেঙ্গু টেস্ট ফি বাবদ ৩০০ টাকা নিচ্ছি। এর বেশি নিচ্ছিনা। দৈনিক ২০টির মতো ডেঙ্গু টেস্ট হচ্ছে বলেও জানান ওয়ালী আশরাফ খান। একই চিত্র পাওয়া যায় এপিক হেলথ কেয়ার ও শেভরনে। এপিক হেলথ কেয়ারের নির্বাহী পরিচালক টিএম হান্নান জানান, একটি এনএস-ওয়ান টেস্ট করতে আমাদের সবমিলিয়ে ৩১২ টাকা খরচ পড়ে। সে হিসেবে ৩০০ টাকায় টেস্ট করালে আমাদের লস। তবে লস হলেও সরকারের নির্দেশনা মেনে ডেঙ্গু টেস্ট বাবদ ৩০০ টাকার বেশি নিচ্ছিনা। মঙ্গলবার থেকেই আমরা ৩০০ টাকায় ডেঙ্গু টেস্টের আদেশ কার্যকর করেছি।
এনএস-ওয়ান টেস্টে ততটা লস না হলেও আইজিজি এন্ড আইজিএম ফর ডেঙ্গু টেস্টে বেশি লস বলে জানান শেভরনের জেনারেল ম্যানেজার পুলক পাড়িয়াল।
তিনি আজাদীকে বলেন, আইজিজি এন্ড আইজিএম ফর ডেঙ্গু টেস্টে আমাদের ৪৭০ টাকা খরচ পড়ে। তাই ৩০০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দেয়ায় আমরা ক্ষতির শিকার হচ্ছি। তবে লস হলেও সরকারের নির্দেশনা আমরা মেনে চলছি। গত ৮ নভেম্বর থেকে ডেঙ্গু টেস্ট বাবদ ৩০০ টাকার বেশি নিচ্ছি না। ল্যাবে দৈনিক শতাধিক ডেঙ্গু টেস্ট হচ্ছে বলেও জানান জিএম পুলক পাড়িয়াল।
এদিকে, একই ভাবে সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু টেস্ট ফি ১০০ টাকা আদায়ের নির্দেশনা জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নির্দেশনার প্রেক্ষিতে সরকারি হাসপাতালে ১০০ টাকায় ডেঙ্গু টেস্ট করা যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনার পরপরই ডেঙ্গু টেস্ট ফি একশ টাকা কার্যকর করা হয়েছে বলে জানান চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান ও চট্টগ্রাম জেনারেল হসাপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে আরও ১০৬ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৭৭ জনে। আক্রান্তদের মাঝে এ পর্যন্ত ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শরীরে জ্বর দেখা দিলে প্রথম তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গু টেস্টের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।