চট্টগ্রামে বিনিয়োগ পরিবেশ ও পর্যটন অবকাঠামোর উন্নয়নে প্রকল্প

১৯১৪ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন ।। সন্দ্বীপে জেটির কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ প্রকল্প

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ৯ নভেম্বর, ২০২২ at ৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ

বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিনিয়োগ পরিবেশ এবং পর্যটন অবকাঠামোর উন্নয়নে প্রায় ১ হাজার ৯১৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ‘চট্টগ্রামের মীরসরাই ও সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ ও টেকনাফ (সাবরাং ও জালিয়া দ্বীপ) অংশের জেটিসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনাদি নির্মাণ’ শীর্ষক এ প্রকল্প সবুজ সংকেত পায়।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএ। প্রকল্পটির মাধ্যমে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ৩০ হাজার একরের ওপর নির্মাণাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে সন্দ্বীপের পূর্ব উপকূলে তিনটি ফেরিঘাটের উন্নয়নকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সন্দ্বীপ অংশে জেটি নির্মাণের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুরু করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।

মন্ত্রী জানান, মোট ব্যয়ের প্রায় অর্ধেক ব্যয় করা হবে সন্দ্বীপের সঙ্গে সহজ নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে। এছাড়া কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে, টেকনাফের সাবরাং পর্যটন কেন্দ্র ও জালিয়া দ্বীপের সঙ্গে উন্নত নৌ যোগাযোগ চালু করতে ল্যান্ডিং স্টেশন ও প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা সচিব মো. মামুন-আল-রশীদ বলেন, মীরসরাইয়ের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্মাণ কাজ দ্রুত এগোচ্ছে। কিছু কোম্পানি এখানে উন্নত নৌ যোগাযোগের জন্য নিজেদের মতো করে স্থাপনা করার আগ্রহ প্রকাশ করছে। এ রকম কিছু হলে পুরো অর্থনৈতিক অঞ্চলের নৌ যোগাযোগ প্রক্রিয়াটি বিশৃঙ্খলায় পড়তে পারে। তাই শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এবং সন্দ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগ অবকাঠামোকে গুরুত্ব দিয়ে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন।

ওই অর্থনৈতিক অঞ্চলে যাত্রীদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করা এবং নৌ-পর্যটন সুবিধাসহ আধুনিক ল্যান্ডিং সুবিধা দেওয়া এবং বাল্ক কার্গো, পণ্য ও মালামাল লোডিং-আনলোডিংয়ের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি। বৈঠকের জন্য প্রস্তুত করা কার্যপত্রে দেখা যায়, এ প্রকল্পের অধীনে মীসরাইয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল, সন্দ্বীপের পূর্ব উপকূলে তিনটি ফেরিঘাটের উন্নয়ন, কঙবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের জন্য জেটিসহ ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া টেকনাফের সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক ও নাফ নদীর জালিয়া দ্বীপে পর্যটক যাতায়াতের জন্য ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে।
মীরসরাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল : বেজা ৩০ হাজার একর জমির ওপর এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি নির্মাণ করছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব দিকে এই অঞ্চলটির পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল, উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ পূর্ব ম্যানগ্রোভ বন ও জলাভূমি এবং ফেনী নদী।

এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চর উন্নয়ন ও পুনর্বাসন প্রকল্প (সিডিএসপি) এবং পাউবোর নির্মিত দুটি সড়ক বাঁধ দুটি মূল সড়কের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল করছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে আরও সহজে প্রবেশের জন্য আবু তোরাব জংশনের বিদ্যমান বাঁধ থেকে প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত ৫ মিটার প্রস্থের ৬ কিলোমিটারের একটি সড়ক নির্মাণ করা হবে। বুয়েটের ব্যুরো অব রিসার্চ টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশনের (বিআরটিসি) মাধ্যমে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে। সন্দ্বীপের পূর্ব উপকূল বরাবর মাঝিরহাট ঘাট, সন্দ্বীপ পূর্ব এবং গুপ্তছড়াসহ তিনটি ফেরিঘাট রয়েছে। মীরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হলে অনেক শ্রমিক মীরসরাইয়ে বসবাস করবে এবং দ্বীপটি থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত করবে। এ কারণে উপকূল ও সমুদ্রবর্তী ল্যান্ডিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে।

কঙবাজার থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সোনাদিয়া দ্বীপ প্রায় ৯ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এর পাশেই মাতারবাড়িতে নির্মিত হচ্ছে জাপানের অর্থায়নে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র। এই দ্বীপটি ঘিরে পর্যটনের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। তাই দ্বীপটিতে সমুদ্রপথে যাত্রী ওঠানামায় উন্নত জেটি নির্মাণ করা হবে।
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে এবং মূল ভূখণ্ডের একেবারে শেষ প্রান্তে টেকনাফের সাবরাংয়ে ১ হাজার ২৭ একর এলাকা জুড়ে সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক তৈরি করা হচ্ছে। সম্ভাবনাময় এই পার্কটি সমুদ্র সৈকতের লাগোয়া। তাছাড়া এই পার্ক থেকে মাত্র ৩০ মিনিটে সাগর পথে যাওয়া যাবে সেন্টমার্টিনে। তাই এ প্রকল্পের মাধ্যমে একটি আধুনিক ল্যান্ডিং স্টেশন তৈরি করা হবে।

টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নে ২৭১ একরের জালিয়ার দ্বীপে নাফ ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। পার্কটিতে পর্যটনের সব আধুনিক সুবিধা থাকবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে এই পার্কে যাতায়াতের জন্য জেটিসহ ল্যান্ডিং সুবিধা নির্মাণ করা হবে।

এদিন একনেক সভায় এ প্রকল্পসহ মোট ১০টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ছয়টি প্রকল্প সংশোধনের প্রস্তাব ছিল। মোট ব্যয় হবে প্রায় ৩ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা। অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পের মধ্যে আছে, বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ; (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্প; ব্যয় বেড়েছে ২৬১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সমপ্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প; ব্যয় ৫০২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআয়েশি প্রকল্প নিতে প্রধানমন্ত্রীর বারণ
পরবর্তী নিবন্ধসড়ক দুর্ঘটনায় আহত এসআইয়ের মৃত্যু