শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় শ্রম আইনের ৩০৭ ধারা সংশোধন জরুরি

সৈয়দ আহমেদ বাদল | মঙ্গলবার , ৮ নভেম্বর, ২০২২ at ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ

নিয়োগকর্তা বা মালিকের শোষণের হাত থেকে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশ শ্রম আইন প্রণীত হয়েছে। ২০০৬ সালের ১১ অক্টোবর ৪২ নং আইন দ্বারা সরকার তদানিন্তন পাকিস্তান শাসকদের প্রণীত শ্রম আইন, ওজঙ-৬৯ আমূল পরিবর্তন করে একটি নতুন শ্রম আইন-২০০৬ প্রণয়ন করে। শ্রম আইনে পুঁজি বা শ্রম কোনটাই খাটো করে দেখা হয় না। ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্পক্ষেত্রে নিয়ামক শক্তি দুটি- মালিক ও শ্রমিক। একে অপরের পরিপূরক। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রায়ই মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। স্বার্থের যেখানে দন্ধ রয়েছে বিরোধ কিছুটা সেখানে থাকাই স্বাভাবিক। তবে বিরোধ মিটাতে হবেই। অনাকাঙ্ক্ষিত বিরোধ মিটাবার জন্যই দেশে দেশে প্রণয়ন করা হয়েছে শ্রম আইন। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর কয়েকটি ধারার অধিকতর সংশোধনী দিয়ে ২০১৮ সালের ৫৮ নং আইন দ্বারা সংশোধিত শ্রম আইন-২০১৮ প্রণয়ন করা হয়।

শ্রম আইন যদিও মালিক শ্রমিক উভয়ের স্বার্থ বিবেচনায় প্রণীত তবুও প্রায়ই মালিক পক্ষ দ্বারা শ্রমিকরাই নিগৃহীত হয়ে থাকে। মালিকের কাছে শ্রমিকের স্বার্থ হয়ে যায় গৌণ। অথচ আইএলও কর্তৃক গৃহীত মৌলিক ৩টি শ্রমমানের মধ্যে প্রথমটি হলো, ‘শ্রম পণ্য নহে’। শ্রম আইনের কোনো কোনো ধারার দুর্বলতায় মালিক পক্ষ পার পেয়ে যায়, শ্রমিকরা তার ন্যায্য অধিকার থেকে হয় বঞ্চিত। শ্রমিকের ন্যায্য মজুরী পরিশোধ এবং অতিঅল্প সময়ে অল্প ব্যয়ে শ্রমিক-মালিক বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করাই ছিলো শ্রম আইনের উদ্দেশ্য। কিন্তু সংশোধিত শ্রম আইনের ৩০৭ ধারা পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, কয়েক দফা ধারাটির সংশোধনী দিয়ে এটি মালিকের পক্ষে রাখা হয়েছে। যেমন, শ্রম আইন-২০০৬ এর ৩০৭ ধারাটিতে বলা ছিলো, এ আইন লঙ্গিত হলে শাস্তি হবে ৩ মাসের কারাদণ্ড। সংশোধিত শ্রম আইনে ৩০৭ ধারায় সংশোধনী দিয়ে বলা হয়েছে আইন লঙিত হলে শাস্তি ২৫ হাজার টাকা, কারাদণ্ডের বিধান এখানে বিলোপ করা হয়েছে। যা ধনশালী একজন মালিকের জন্য স্বস্তিদায়ক; কেননা অন্তত কারাভোগ করতে হবে না।

শ্রমিক যখন মালিক কতৃক প্রতারিত হয়ে ৩০৭ ধারায় ফৌজদারী মামলা করবে, ধারামতে আদালত কর্তৃক দণ্ডিত হয়ে মালিক ২৫ হাজার টাকা র্নিদ্বিধায় পরিশোধ করে দেবে। কিন্তু ৩ মাসের কারাদণ্ডের বিধান থাকলে কারাবাসকে মালিকপক্ষ মানহানিকর দণ্ড বিবেচনায় নিয়ে সর্বদা শ্রমিক বান্দব মনোভাব পোষণে সচেষ্ট থাকবে এবং শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার তথা পাওনা পরিশোধে যত্নবান হবে। ফলে শ্রমশান্তি বিরাজ করবে শিল্প এলাকায়। একজন মালিকের পক্ষে ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা ঠুনকো ব্যাপার। কিন্তু ৩ মাসের বা ৩ দিনের কারাভোগ করাটা একজন মালিকের জন্য সামাজিক মর্যাদায় মানহানিকর ব্যাপার। সেক্ষেত্রে মালিকের সতর্কতায় শ্রমিক সন্তুষ্ট থাকলে কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের কর্মোদ্দীপনা বৃদ্ধি পাবে, আরো বৃদ্ধি পাবে প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনশীলতা। সর্বোপরি বলা যায় শ্রম আইনের ৩০৭ ধারায় ৩ মাস কারাদন্ডের বিধান সমীচিন ছিলো।

উল্লেখ্য যে, শ্রমিকরা তার অধিকার আদায়ে আইনগত প্রদক্ষেপ নিতে প্রথমেই যেতে হয় শ্রম আদালতে। শ্রম আদালত একটা দেওয়ানী আদলত। সেক্ষেত্রে শ্রম আইনের ৩০৭ ধারায় মামলার সুরাহা শ্রম আদালতে পাওয়া যায় না। কারন, ৩০৭ ধারাটি একটি ফৌজদারী টাইপের আইন, যা শ্রম আদালতে মামলা খারিজযোগ্য। ন্যায্য অধিকার আদায়ে ৩০৭ ধারা শ্রমিক স্বার্থ পরিপন্থী। এক্ষেত্রে শ্রম আইনের ৩০৭ ধারার অধিকতর সংশোধনীর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বন্দর শাখা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমেরিকার ব্যালট যুদ্ধ ৮ নভেম্বর
পরবর্তী নিবন্ধসুরের আকাশে শুকতারা