আমেরিকার ব্যালট যুদ্ধ ৮ নভেম্বর

এমরান হোসাইন | মঙ্গলবার , ৮ নভেম্বর, ২০২২ at ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বজুড়ে সামরিক আধিপত্য রক্ষা- পারমাণবিক যুদ্ধের হুংকার-বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও সামাজিক অস্থিরতার মধ্যদিয়ে আজ আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচন। এ নির্বাচনকে ঘিরে ঘরে-বাইরে সবার নজর এখন আমেরিকায়। এতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দু’দলের প্রাথীরা কোমড় বেঁধে সিনেট নিয়ন্ত্রণে ‘ব্যালট যুদ্ধে’ নেমে পড়েছেন। নির্বাচনী দৌড়ে এ পর্যন্ত কংগ্রেসের দু’কক্ষই ডেমোক্রেটদের হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ নির্বাচনে সবার দৃষ্টি দশটি আসনে। অনেকের ধারণা, পরিশেষে এসব আসনে দুপক্ষের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নির্বাচনী হিসেব বদলে যেতে পারে।

জরিপে দেখা যায়- মধ্যবর্তী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল বরাবরে খারাপ রেজাল্ট করে আসছে। যদিও জিডিপি বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি স্থিতিশীল, ট্টাম্পের মহামারী অব্যবস্থাপনা সংশোধন করে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দল ডেমোক্রেট প্রাথীরা নির্বাচনী বৈতরণী পার করে আসতে পারবে বলে একাধিক জরিপে উঠে আসে।

জনগণের সরাসরি বা প্রত্যক্ষ ভোটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। ইলেকটোরাল কলেজ নামে পরিচিত একদল কর্মকর্তার পরোক্ষ ভোটেই নির্বাচিত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ইলেকটোরাল কলেজের মোট ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। এর অর্ধেক ২৬৯ এবং জয়ী হয়ে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার জন্যে আরও একটি ভোট এভাবেই ২৭০টি ভোট পেতে হবে একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার জন্য। একেক রাজ্যের হাতে একেক সংখ্যক ভোট থাকার কারণে প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী প্রচারণার ব্যাপারে এমনভাবে ছক তৈরি করেন যেখানে তারা বেশি ভোট আছে এমন রাজ্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। গত পাঁচটি নির্বাচনের মধ্যে দুটোতেই কম পপুলার ভোট পেয়েও ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জর্জ বুশ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ কম পপুলার ভোট পেয়েও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।

তবে এবারের ভোট যুদ্ধে বাইরের কাদা-ছোড়াছুড়িতে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছে হোয়াইট হাউসের মাকিন প্রশাসন। গর্ভপাত নিয়ে সুপ্রিমকোটের আদেশ, অস্ত্র আইন সংশোধন করে শিশুদের নিরাপদ করার নেতিবাচক উদ্যোগ উদারনৈতিক ভোটারদের সক্রিয় করে তুলেছে। এর সুফল ঘরে তুলতে পারলে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্রেটরা এগিয়ে যাবে বলে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে ফুটে উঠেছে। জর্জিয়া, নেভাদা, নিউহ্যামশায়ার, অ্যারিজোনা, পেনসেভেনিয়া, উইসকনসিন, মিশিগান, নিউজাসি, নাব্রাসকা, ক্যালিফোর্নিয়াসহ ১০ আসনের ফলাফল পাল্টে দিতে পারে ভোটের হিসেব নিকেশ। বিশ্লেষকদের মতে- কংগ্রেসের কোনো একটি বা উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হওয়ার মানে কার্যত: নভেম্বরের পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতাহীন হয়ে পড়া। এতে জো বাইডেনকে তাঁর মেয়াদের শেষ দুই বছর বেশ চাপে থাকতে হবে। পাশাপাশি নানা ইস্যুতে বাইডেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইন প্রণয়নে প্রচণ্ড বাঁধার মুখে পড়তে পারেন। এ অবস্থাতে বাইডেনের পাশে দাঁড়িয়েছেন নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী সামাজিক মাধ্যম টিকটক এর জনপ্রিয় ৮ টিকটকার (যাদের সবার রয়েছে ৬৭মিলিয়ন ফলোওয়ার)। তারা ২৫ অক্টোবর ওভাল অফিসে বাইডেনের সাথে একঘণ্টা সময় ব্যয় করেছেন।

এসময় প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাথেও টিকটক নির্মাতাদের একটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এবং ক্যাপিটল সফর করেছেন, এবং ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটি এবং ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেসনাল ক্যাম্পেইন কমিটির নেতাদের সাথে দেখা করেছেন। জনপ্রিয় এ নতুন প্রজন্মের টিকটকাররা ৮নভেম্বর তাঁদের অনুসারীদের ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিতে উদ্বুদ্ধ করতে প্রচারণা চালাবেন বলে জানান। এদিকে মধ্যবর্তী নির্বাচনকে ঘিরে আমেরিকায় সামাজিক যোগাযোগ বেশ সরগরম হয়ে উঠেছে- অনেকে বলেছেন- কেন মানুষ রাষ্ট্রদ্রোহি মানুষদের সমর্থন করতে চাই, যারা ক্যাপিটল হিলে হামলা করে সরকারকে উৎখাত করতে চেয়েছিল। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন-গণতন্ত্র রক্ষা করা কি শুধু গণতন্ত্রীদের কাজ। মধ্যবর্তী নির্বাচনের ব্যাপক তোড়জোরে কোনো আসনে কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়, অনেক রাজ্যে একটি আসনের ব্যবধানে রাজ্যে দলীয় আধিপত্য ম্লান হয়ে যেতে পারে।

লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রয়োজন মানবিক গুণ সম্পন্ন সৎ ও নৈতিক মানুষ
পরবর্তী নিবন্ধশ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় শ্রম আইনের ৩০৭ ধারা সংশোধন জরুরি