পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে লাখো পুণ্যার্থীর সমাগমে অনুষ্ঠিত হলো রাজবন বিহারের ৪৯তম দানোত্তম কঠিন চীবর দানোৎসব। আজ শুক্রবার (৪ নভেম্বর) বিকালে রাজবন বিহার মাঠ প্রাঙ্গণে কঠিন চীবর দানসহ নানাবিধ দান সম্পন্ন হয়।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতব্যাপী তুলা থেকে সুতা কেটে রংকরণ এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেইন (বিশেষ পরিধেয় বস্ত্র) বুনন করা হয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে পুণার্থীদের উদ্দেশ্য পঞ্চশীল পাঠ করেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশিষ রায়।
চীবরদানে বিশ্ব শান্তি কামনায় প্রার্থনা করেন, রাজবন বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির।
রাঙামাটির রাজবন বিহারের প্রধান পৃষ্ঠপোষক চাকমা সার্কেল ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়ের সভাপতিত্বে এ দান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি।
এছাড়াও সম্মানিত অতিথি ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্র্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীসহ গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সহ নানান উন্নয়নে তাঁর অবদান স্মরণীয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নেও তাঁর ইচ্ছের প্রকাশ ঘটেছে।
রাজবন বিহার উপাসক-উপাসিকা পরিষদ জানিয়েছে, ৪৯তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান উপলক্ষে সকালের প্রথম পর্বের ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষ করার পর বিকালে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে সকল প্রাণীর সুখ ও শান্তি কামনায় ধর্মীয় সমবেত সূত্রপাঠ সহ মঙ্গলাচারণ অনুষ্ঠিত হয়।
পরে রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির সহ ভিক্ষুসংঘকে চীবর দানের মধ্য দিয়ে মহৎ এ দান অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।
উল্লেখ্য, গৌতম বুদ্ধের জীবদ্দশায় মহাউপাসিকা বিশাখা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা এবং সুতা রঙ করে কাপড় বুনে তা সেলাই করে চীবর (ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্র) দান করে এই কঠিন চীবরদানের সূচনা করেন প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। এই পদ্ধতিতে দান করলে কায়িক, বাচনিক মানসিকভাবে অধিক পরিশ্রম হয় এবং অধিকতর পুণ্যলাভ হয় বলে বৌদ্ধ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু সাধনানন্দ মহাস্থবির (বনভান্তে) রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার তিনটিলা বন বিহারে ১৯৭৪ সালে কঠিন চীবর দানোৎসবের প্রবর্তন করেন।