পেকুয়ায় দায়ের কোপে ‘দা বাহিনীর’ প্রধান নাছির উদ্দিন নিহত হয়েছে। গত রোববার রাত ৯টার দিকে উপজেলার টইটং ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড সোনাইয়াকাটা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। নাছির একই ইউনিয়নের নতুন পাড়া এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, চাঁদাবাজিসহ অন্তত ১২টি মামলা রয়েছে।
জানা যায়, চাচাত ভাই আসহাব উদ্দীনের দায়ের কোপে গুরুতর আহত হবার পর তাকে প্রথমে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আলোচিত দা বাহিনীর প্রধান নাছির নিহত হয়েছে বলে তার পরিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশ কয়েকদিন ধরে নিহত নাছির উদ্দিনের চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম ও অপর চাচাত ভাই রাজমিস্ত্রি আসহাব উদ্দিনের মধ্যে প্রবাসি জামাল উদ্দিনের বাড়ি নির্মাণের বিষয় নিয়ে ঝগড়াঝাটি হয়। এর একপর্যায়ে রোববার দুপুরে সাইফুল ও আসহাব উদ্দিনের পরিবারের সদস্যরা মারমুখী অবস্থান নেয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে নাছির উদ্দিন উভয় পক্ষকে শান্ত করে টইটং বাজার চলে আসে।
রাত ৯ টার দিকে চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম নিহত নাছিরকে আবারো টেলিফোন করে আসহাব উদ্দিন তার মা বাবার নাম ধরে গালি গালাজ করছে বলে জানালে নাছির উত্তেজিত হয়ে সিএনজি যোগে দুজন সঙ্গীসহ আসহাব উদ্দিনের বাড়িতে যায়। এ সময় আসহাব উদ্দিন তার পিতা মোজাফ্ফর ও বোন হাজেরা বেগম নাছির উদ্দিনের সাথে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। বাক বিতণ্ডার এক পর্যায়ে নাছির উদ্দিন তার চাচা বৃদ্ধ মোজাফ্ফরকে টচ লাইট দিয়ে সজোরে আঘাত করে। এ সময় বৃদ্ধ মোজাফ্ফর মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার পুত্র আসহাব উদ্দিন উত্তেজিত হয়ে ঘরের ভিতর থেকে দা এনে নাছির উদ্দিনকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় নাছির উদ্দিন রক্তাক্ত জখম হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ভর্তি করালে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় চমেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই রাতে মারা যান নাছির।
টইটং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি নিজ চোখে দেখে এসেছি, নাছিরের শরীরে ১১টি দায়ের কোপ রয়েছে। চাচাত ভাই আসহাব উদ্দিনের দায়ের কোপে মারাত্মক জখম হয়ে চমেক হাসপাতালে নাছির মারা যায়। আলোচিত নাছির কয়েক বছর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফরহাদ আলী বলেন, নাছির উদ্দিন হত্যার ঘটনায় আমরা এখনো কোনো লিখিত অভিযোগপত্র পাইনি। তবে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় এবং সারারাত ধরে ঘটনার সাথে জড়িতদের আটক করার চেষ্টা করে। এখনো চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে আসহাব উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির দায়ের কোপে সে নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছি। অভিযোগ পেলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে টইটং ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনজুর আলমকে দিন দুপুরে দা দিয়ে কুপিয়ে হাত কেটে নেয়ার পর থেকে ‘দা বাহিনীর’ প্রধান হিসেবে পরিচিত পায় নিহত নাছির উদ্দিন। পরবর্তীতে নাছির একটি বাহিনী সৃষ্টি করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। চাঞ্চল্যকর বৃদ্ধ উকিল আহমদ ও বদিউজ্জামান হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নাছির উদ্দিনকে ঠেকাতে টইটং এলাকায় ‘বোরখা বাহিনী’ নামে আরো একটি বাহিনী সৃষ্টি হয়।
বিভিন্ন মামলায় দীর্ঘদিন জেলে থাকার পর নাছির উদ্দিন ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর র্যাবের মধ্যস্থতায় বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে তার বাহিনীর ৪ সদস্য ও অস্ত্রসহ আত্মসমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।