ইলিশের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে সাগরে মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুক্রবার মধ্যরাতে অতিবাহিত হলেও এখনও সাগরে যেতে পারেনি কক্সবাজারের এক-তৃতীয়াংশ ট্রলার। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই যাতে সাগরে রওয়ানা দেওয়া যায় তার জন্য শহর ও শহরতলীসহ জেলার সামুদ্রিক নৌঘাটগুলোতে গত কয়েকদিন ধরেই প্রস্তুতি নিয়েছিল জেলেরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বরফ সংকটের কারণে গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই-তৃতীয়াংশ ট্রলার সাগরে রওয়ানা দিতে পেরেছে বলে জানায় ফিশিং বোট মালিক সমিতি।
একই সঙ্গে শত শত ট্রলার সমুদ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ায় কক্সবাজারে বরফ সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী।
জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন জানান, কক্সবাজারে ছোট-বড় প্রায় ৮ হাজার ফিশিং বোট রয়েছে। এসব বোটের লক্ষাধিক জেলে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর সাগরে রওয়ানা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু বরফ কলগুলো চাহিদা মতো বরফ দিতে পারেনি। এমনকি চট্টগ্রাম থেকে বরফ এনেও চাহিদা পূরণ করা যায়নি। ফলে কক্সবাজারের এক-তৃতীয়াংশ ট্রলার এখনও সাগরে রওয়ানা দিতে পারেনি।
তিনি জানান, চাহিদা বেশি থাকায় বরফের দামও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি নেয়া হচ্ছে। এছাড়া মুদি দোকানগুলোতেও পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বাকিতে যারা পণ্য কিনছে তাদেরকে অনেক বেশি অতিরিক্ত মূল্য দিতে হচ্ছে।
তবে অতিরিক্ত দাম নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে কক্সবাজার বরফকল মালিক সমিতির সভাপতি মাসেদুল হক রাশেদ বলেন, বরফ কলগুলো কখনও অতিরিক্ত দামে বরফ বিক্রি করে না। কিন্তু বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কক্সবাজারে চাহিদা অনুযায়ী বরফ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে এর সুযোগ নিয়ে কিছু দালাল শ্রেণির মানুষ চট্টগ্রাম থেকে বরফ এনে অতিরিক্ত দামে কক্সবাজারে বিক্রি করছে। আর এর দায় চাপানো হচ্ছে না কক্সবাজারের বরফ কল মালিকদের ওপর। তিনি বলেন, কক্সবাজারের চাহিদা ও বিদ্যুৎ সংকটের কথা মাথায় রেখে বরফ কল গুলোকে দুয়েকদিন আগে থেকে বরফ উৎপাদনের সুযোগ দিলে এই সংকট হতো না।
কক্সবাজারের ট্রলার মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীরাও মনে করেন, সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার দুই-তিন দিন আগেই বরফ কলগুলোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা উচিত। তবে আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের আগে বরফ কলগুলোর বরফ উৎপাদনের সুযোগ নেই বলে জানান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান।
তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা মৎস্য বিভাগ সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে। যদি মন্ত্রণালয় সেই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তখনই কেবল বরফ কলগুলোকে সেই সুযোগ দেয়া সম্ভব।