‘শিল্প যখন সত্যকে ধারণ করে তখনই সে প্রকৃত হয়’

আলবেয়ার কামু

ভাষান্তর : এমদাদ রহমান | শুক্রবার , ২৮ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

আলবেয়ার কামুর জন্ম ১৯১৩ সালে, ফরাসি অধিকৃত আলজেরিয়ায়। তাঁর জন্মভূমি আলজেরিয়াকে বলা হত ‘ফরাসি আলজেরিয়া’। তিনি পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ লেখকদের একজন। জীবন আসলে কী, এ ব্যাপারে তিনিই সবচেয়ে বেশি কথা বলেছেন। নিরর্থকতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন। তাঁর সাহিত্যকীর্তির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘দি আউটসাইডার্থ (১৯৪২), ‘দ্য প্লেগ’ (১৯৪৭), ‘দ্য ফল’ (১৯৫৬) ইত্যাদি উপন্যাস; ভাবনাবিস্তারী প্রবন্ধ ‘দ্য রেবেল’ (১৯৫১), ‘দ্য মিথ অব সিসিফাস’ (১৯৪২); নাটক ‘ক্যালিগুলা’ (১৯৩৮), ‘দ্য পজেজসড’ (১৯৫৯); গল্পগ্রন্থ- ‘এক্সাইল অ্যান্ড দ্য কিংডম’ (১৯৫৭) এবং ‘নোটবুকস’(১৯৩৫-১৯৪২), ‘নোটবুকস’(১৯৪৩-১৯৫১), ‘নোটবুকস’ (১৯৫১-১৯৫৯)।

আলবেয়ার কামু স্কুলজীবনে পড়েছেন বাইবেল, কলেজজীবনে অগাস্টিন, কিয়ের্কেগার্ড। তাঁর ওপর কিয়ের্কেগার্ড গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন; শোপেনহাওয়ার ও নিটশেও তাঁর মানস গঠনে ভূমিকা রাখেন, এঁদের পাঠের ফলেই তাঁর ভেতর গভীর নৈরাশ্যের জন্ম হয়। দেকার্ত, স্পিনোজা, বার্গসনের সঙ্গে স্তাদাল, মেলভিল এবং ফিওদর দস্তয়েভস্কিও কামুকে প্রভাবিত করেন। কামুর নিরন্তর প্রেরণা হয়ে ওঠেন তাঁরা। ১৯৩৫ থেকে ১৯৫৯ পর্যন্ত সময়কালের ভেতরেই তিনি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলো লিখে ফেলেন। নোবেল পুরস্কার পান ১৯৫৭-য়। ১৯৬০-এর ৪ জানুয়ারি, সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি।

আলবেয়ার কামু তাঁর সময়কে সাহিত্যে চিহ্নিত করতে পেরেছিলেন। বিশ শতকের নিরর্থকতা যেন তাঁর আউটসাইডারের মাধ্যমে ফুটে উঠেছিল। ১৯৪২ সালে ফ্রান্স যখন জার্মানির দখলে, তখন তিনি প্রকাশ করেন তাঁর দার্শনিক প্রবন্ধ ‘দ্য মিথ অব সিসিফাস’ এবং উপন্যাস ‘দি আউটসাইডার’, যার মাধ্যমে তিনি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিজীবী সার্কেলের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। সবকিছু যুক্তিপূর্ণ নয়, সর্বত্রই অন্তঃসারশূন্যতা, অনর্থকতা, সমগ্র জীবনই যেন অর্থহীন। জন্ম কিংবা মৃত্যুর মধ্যেও কোনো অর্থ নেই, আবার এদের অস্বীকারও করা যায় না। এই হল কামুর অ্যাবসার্ডিটি। তাঁর দর্শন। তাঁর লেখায় জীবনের যে অর্থহীনতা ফুটে ওঠে, তা আমাদের আমূল কাঁপিয়ে দেয়। ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ তাঁর মেয়ে ক্যাথরিন কামু লেখেন- তিনি যা লিখে গেছেন তা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক।

এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন লেখক জে সি ব্রিসভ্যাল, তাঁর মৃত্যুর আগের বছর, ১৯৫৯-এ। পরবর্তীতে, এটা সহ মোট ৩টি সাক্ষাৎকার গ্রন্থভুক্ত হয় কামুর ‘লিরিক্যাল অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল এসেজ’, বইয়ের লেখাগুলো অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন ফিলিপ থডি এবং এলেন ক্যানোরি কেনেডি, নিউইয়র্কের ভিনটেজ বুকস থেকে বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৭০-এ।

জে সি ব্রিসভ্যাল: ঠিক কখন লেখক হওয়ার ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন?

আলবেয়ার কামু: লেখক হওয়ার জন্য অন্তর্গত প্রেরণা, আকুতি কিংবা লেখালেখিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা- এই ব্যাপারগুলো আমার ক্ষেত্রে ঠিক খাটে না, কারণ আমি সেই সতেরো বছর বয়স থেকেই লেখক হতে চেয়েছি! সে-সময় খুব স্পষ্টভাবে না হলেও বুঝতে পারছিলাম যে আমি লেখক হওয়ার পথেই হাঁটছি।

ব্রিসভ্যাল: পরে আর কোনো পেশা গ্রহণের কথা ভাবেননি?

কামু: হ্যাঁ, তা তো ভেবেছিলামই; তখন শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণের কথা ভাবছিলাম। লেখক হিসেবে স্বাধীনভাবে কাজ করবার জন্য, লেখক-জীবনকে নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য দ্বিতীয় পেশা হিসেবে শিক্ষকতার কথা সবসময় গুরুত্ব সহকারে ভেবেছি।

ব্রিসভ্যাল: তখন কি লেখক-জীবনের ভালো-মন্দ দিক নিয়ে কিছু চিন্তা করেছিলেন? লেখক হিসেবে সামনের দিনগুলি কেমন হবে, শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবেন কি না, জীবনের অসহনীয় ভার ইত্যাদি সম্পর্কে কোনো ধারণা করতে পেরেছিলেন?

কামু: লেখক-জীবন সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে সন্দেহে পড়ে গিয়েছিলাম, ভেতরে নানামুখী দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল, এমনকী একসময় লেখালেখি ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেছিলাম। তারপর হঠাৎ একদিন জীবন সম্পর্কে আচ্ছন্ন করে দেওয়ার মতো, অভিভূত করে দেওয়ার মতো এক দৃষ্টিভঙ্গি আমার মাধ্যমে প্রকাশের জন্য যেন উন্মুখ হয়ে উঠল। সে-ভাবনাগুলোকে একত্রিত করে একটি গদ্যের বই লিখে ফেললাম। ‘নোসেস’ বই হয়ে বের হল।

ব্রিসভ্যাল: লেখক হিসেবে, বিদ্যমান সামাজিক বিধিবিধানের সঙ্গে নিজের চিন্তাভাবনার সামঞ্জস্য করতে গিয়ে কি কোনো বিরূপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল? প্রচলিত বিধিগুলো মানতে বাধ্য হয়েছিলেন? এগুলো কি আপনার কাছে গুরুতর সমস্যা হিসেবে গণ্য হচ্ছিল?

কামু: অবশ্যই, কিন্তু আমাদের এই শতাব্দী এই পর্যায়ে তো উন্নীত হতে পেরেছে, যার ফলে অনড় সামাজিক বিধিগুলোকে উপহাস করার, হাস্যকর করে ফেলার মতো কিছু মানুষ আমরা পেয়েছি, যা কিছুকে ধাক্কা দেওয়ার পক্ষে, একটা স্বাধীন ক্ষেত্র তৈরি করার পক্ষে আমাদেরকে সাহায্য করেছে। আমরা দেখেছি, লেখালেখি যখন বিদ্রুপ হয়ে ওঠে, যখন প্রচণ্ড হয়ে ওঠে, কিছু লেখককে তখন মুখ বন্ধ করতে চাপ দেওয়া হয় কিংবা কারারুদ্ধ করা হয়, মনে করা হয় হয়তো এভাবেই তাদের দমিয়ে দেওয়া যাবে। আমাকে বিভিন্ন দিক নিয়ে ভাবতে হয়েছিল। আমি ভাবতে পেরেছিলাম লেখকরা তাঁদের লেখাতে টিকে থাকবেন, মত প্রকাশের পক্ষে লড়াই করবেন।

ব্রিসভ্যাল: লেখক হিসেবে আপনার যে পরিচিতি গড়ে উঠেছে তাকে কীভাবে দেখেন?
কামু: আসলে একান্ত ব্যক্তিজীবনে নিজের এই পরিচয় নিয়ে কোনো সমস্যাই হয় না, যেন এটা আদৌ কোনো পরিচয়ই নয়, কিন্তু বাইরের জগতে আমার যে বিশাল পরিচিতি, আমি যে একজন লেখক, এই ব্যাপারটি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না। পরিচয়টি দিনে দিনে যে মাত্রায় পৌঁছচ্ছে তা অসহনীয়।

ব্রিসভ্যাল: যদি লেখালেখি ছেড়ে দিতে হয়, কখনও কি ভেবে দেখেছেন তখন কীভাবে বেঁচে থাকবেন? লেখা ছেড়ে দিয়ে সুখী থাকতে পারবেন? সেই যে আপনার নাটকের ক্যালিগুলা, মাটির ওপর মানুষ পা দিয়ে যে দাঁড়ায় তাদের, অর্থাৎ পা ও মাটির মধ্যকার অলিখিত চুক্তিটি নিয়ে যে কথাগুলো ক্যালিগুলা উচ্চারণ করেছিল, সেই কথাগুলো কি আপনার নিজেরও চরম প্রকাশ নয়?

কামু: ছেলেবেলায় লেখালেখি ছাড়া কী সুখীই না ছিলাম, এমনকি আজও আমার ভেতরটা সেই নীরব আনন্দে পূর্ণ হয়ে আছে, জীবন সে আনন্দকে জীবনের পক্ষ থেকে পাওয়া বহুমূল্য উপহার হিসেবেই গ্রহণ করেছে। তবে যা-ই বলি না কেন, জীবনচর্যাকে আজীবন ধ্যান মনে করেছি বলেই এখন জানি, শিল্পকে বাদ দিয়ে আমি সম্ভবত একদিনও বেঁচে থাকতে পারব না।

ব্রিসভ্যাল: আপনার কি মনে হয় যে প্রধান লেখাগুলো লিখে ফেলেছেন?

কামু: আমার বয়স পঁয়তাল্লিশের কোঠায় আর কী ভীষণ বিরক্তিকর জীবনীশক্তি পেয়েছিলাম!

ব্রিসভ্যাল: আপনার লেখা যেভাবে এগোয়, তা কি আগে থেকে করে রাখা পরিকল্পনা অনুসরণ করেই হয়, না কি লেখাটি চলতে থাকা অবস্থাতে সব পরিকল্পনা করেন?

কামু: দুটোই। কখনও পরিস্থিতিই এমন হয়ে ওঠে যে লেখককে তখন সে অবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। প্রতিটি লেখায় এমন এক স্ট্রাকচার থাকে, যা একদিকে আগে থেকে ভেবে রাখা ঘটনাপ্রবাহ এমনকি লেখার শৈলীকেও পরিবর্তিত করতে পারে।

ব্রিসভ্যাল: লেখালেখির জন্য বিশেষ কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করেন?

কামু: নোট, কাগজের টুকরো আর ধ্যানমগ্নতা… বছরের শেষে এগুলোই বিশাল আকার ধারণ করে। তারপর ধীরে ধীরে এইসব আইডিয়া, কনসেপ্ট, বিচ্ছিন্নভাবে লিখে রাখা কাগজের টুকরোটাকরা, টুটাফাটা জুড়ে দেওয়ার দীর্ঘ আর যন্ত্রণাদায়ক এক কাজ শুরু হয় লেখাটিকে যুক্তিশৃঙ্খলে নিয়ে আসবার জন্য। আমার ভাবনার নৈরাজ্যকর অবস্থাকে অর্থপূর্ণ কিছু গড়ে তোলবার পক্ষে এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর।

ব্রিসভ্যাল: ধরুন একটি লেখায় হাত দিয়েছেন, লেখা চলছে, তখন কি লেখাটির বিষয়বস্তু নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেন?

কামু: সাধারণত এমন হয়নি কখনও, কিন্তু যখন নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলি, কেবল তখনই কারও সঙ্গে বিষয় নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে করে।

ব্রিসভ্যাল: লেখা শেষ হলে বন্ধুদের মতামত জানতে চান? লেখাটিকে নিজে নিজে ভেঙে দেখেন, বিশ্লেষণ করেন?

কামু: হ্যাঁ, আমার এমন কয়েকজন বন্ধু আছে, যাদেরকে পাণ্ডুলিপি পড়তে দিই, তাদের কথা শুনি, তারা কোথায় কী সমস্যা ধরছে তার নোট রাখি; দশ বারের মধ্যে ন-বারই তারা সঠিক সমালোচনাটি করে; তারপর, লেখাটির সংশোধন করতে বসি।

ব্রিসভ্যাল: আপনি কি খুব নিয়ম মেনে লেখালেখি করেন?

কামু: নিয়মিত লেখার চেষ্টা করি। যখন সবকিছু পক্ষে থাকে, তখন দিনে চার থেকে পাঁচঘণ্টা অবিরাম লিখতে পারি। যখন ছন্দটি কেটে যায়, তখন আর লিখতে পারি না, তখন সবকিছুই বাধা দেয়, মনও আড়ষ্ট হয়ে থাকে।

ব্রিসভ্যাল: ধরুন একটি লেখা অসমাপ্ত পড়ে আছে, পরের দিন লিখে শেষ করবেন বলে ভেবেছেন, এক্ষেত্রে কি অসমাপ্ত লেখাটি নিয়ে ভেতরে কোনো অনুভূতি জন্মায়?

কামু: হ্যাঁ, অসমাপ্ত লেখাটির জন্য নিজেকে অপরাধী লাগে, সেটা অনুভব করি; ভাবতে থাকি, কীভাবে এই কথাগুলো লিখতে পারলাম, আর তখনই নিজেকে নিজের কাছে অচেনা লাগতে থাকে।

ব্রিসভ্যাল: উপন্যাস, নাটক, ক্রিটিক্যাল গদ্য, লেখার কোন্‌ ধরনটি আপনাকে বেশি আনন্দ দেয়?

কামু: একটি লেখায় সব ক’টি টেকনিক যখন জোট বাঁধে, ঠিক তখনই আনন্দিত হয়ে উঠি।

ব্রিসভ্যাল: বিভিন্ন লেখায় আপনাকে আমরা ‘থিয়েটারই শিল্পসাধনার উপযুক্ত স্থান’ বলতে দেখি। কথাটিকে ব্যাখ্যা করতে বললে কী বলবেন?

কামু: এ ব্যাপারে কিছু বলতে হলে আমাকে অনেক কথাই বলতে হবে। মাঝে মাঝে মনে হয়, যদি কিছু না হয়ে শুধু অভিনেতা হতে পারতাম…

ব্রিসভ্যাল: সাহিত্য যখন শিল্পে রূপান্তরিত হয়, তখন সেটা আর মামুলি কিছু নয়, তা কি তখন অমূল্য নয়? কীভাবে আমরা তার মূল্য নিরূপণ করব? শিল্পের কোন্‌ দিকটির প্রতি আপনি বেশি সংবেদনশীল?

কামু: সেই দিকটিকে আমি ‘সত্য’ বলি। শিল্প যখন সত্যকে ধারণ করে তখনই সে প্রকৃত হয়। শিল্পের সত্য প্রকাশের ক্ষমতা এবং তার যে-গুণগুলো সত্যকে উন্মোচন করে, সেই আশ্চর্য ক্ষমতা ও গুণের প্রতি আমি সংবেদনশীল।

ব্রিসভ্যাল: আপনার লেখার বিশেষ কোনো থিম যা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু থিমটি বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে পড়ছে না, এমন কিছু সত্যিই কি আছে?

কামু: হ্যাঁ, এমন কিছু আছে, যেমন, হিউমার। এটা খেয়াল করতে হবে।

ব্রিসভ্যাল: এ পর্যন্ত যা কিছু লিখেছেন, সেই লেখাকে আপনি নিজে কীভাবে দেখেন?

কামু: আমি কখনোই সেই লেখা পড়ি না, কারণ তখন লেখাগুলো আমার কাছে মৃত। আমি সব সময়ই চাই এমন কিছু লিখতে যে-কথাগুলো আমি লিখতে চেয়েছিলাম।

ব্রিসভ্যাল: লেখার প্রেরণা পেয়েছেন কোন্‌ লেখকদের কাছ থেকে আর যা কিছু বলতে চেয়েছেন সে ব্যাপারে কারা আপনাকে সচেতন করে তুলেছিলেন?

কামু: সে তো অনেক… অনেক নাম! আধুনিকদের মধ্যে আছেন গ্রেনার, ম্যালরোক্স, মোনতালে আর ধ্রুপদি লেখকদের মধ্যে তাঁদের নাম বলব, যাঁরা আমাকে নিরন্তর পথ দেখান, হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে নিয়ে চলেন, তাঁরা হলেন, পাসকাল, মলিয়ের, সেই সঙ্গে উনিশ শতকের রুশ সাহিত্য এবং হিস্পানি ভাষার লেখকরা।

ব্রিসভ্যাল: শিল্পকলার ক্ষেত্রে রূপকারী আর্টকে আপনি কতটা গুরুত্ব দেন?

কামু: আমি সবসময়ই ভাস্কর হতে চেয়েছি। ভাস্কর্যকে আমি শিল্পকলার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করি।

ব্রিসভ্যাল: আর সঙ্গীত?

কামু: তারুণ্যের দিনগুলিতে আমি কেবল সংগীতেই মাতাল হতে পারতাম, দিনরাত। এখন বয়সও বেড়েছে আর খুব কম সংগীতজ্ঞই আমাকে দোলাতে পারেন, কিন্তু সেই বিশেষ একজন, ভোল্ফগাঙ আমাদিয়ুস মোৎসার্ট, এখনও উন্মাদ করেন, এখনও!

ব্রিসভ্যাল: মানুষের চরিত্রের কোন্‌ দিকটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেন?
কামু: মানুষের চরিত্রে যখন বুদ্ধিমত্তা ও আত্মবিশ্বাসের সংমিশ্রণ দেখতে পাই, যা আসলে বিরল ঘটনা, তাকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি।

ব্রিসভ্যাল: কীভাবে একজন লেখককে চিহ্নিত করবেন?

কামু: পুননির্মাণের ক্ষমতার ভেতর থেকেই একজন লেখককে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়। লেখক অনবরত নিজেকে ভাঙবেন, গড়বেন, ভাঙাগড়ার নিরন্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তিনি এগিয়ে যাবেন। তিনি হয়তো একই কথা লিখছেন, জগতের সমস্ত লেখকই তো একটা কথাই লেখেন, তিনিও লিখবেন, তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু দেখতে হবে, লেখক যখন লিখছেন, তখন তিনি তাঁর ফর্মটিকে পুননির্মাণ করছেন তো? প্রতিটি লেখায় নিজেকে ভাঙছেন তো? প্রচলিত ফর্ম নিয়ে লেখকের ভেতরে শঙ্কা থাকে, তাই লেখক নিজের ছন্দকে বারবার আঘাত করবেন। প্রচলকে তিনি ভাঙবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকত উজির নাজিরের জীবন গেল, আড্ডা কিন্তু থামেনি
পরবর্তী নিবন্ধলায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং কর্ণফুলীর খাবার বিতরণ