সাবেক কাউন্সিলর মানিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

দোকান বরাদ্দের নামে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৭ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

মসজিদের দোকান বরাদ্দের নাম করে ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন লালখান বাজার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এ এফ কবির আহমেদ মানিক ও তার ভাই এ এন ফারুক আহমেদ। বরাদ্দ প্রত্যাশীদের দায়ের করা মামলার তদন্তে গিয়ে এমন অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছে পিবিআই। গত ৬ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে তদন্তকারী সংস্থাটি। এরই ধারাবাহিকতায় দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে সমন জারি করলেও আদালতে হাজির হননি তারা। এ জন্য গত ১৬ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। বাদীর আইনজীবী স্বপন রায় আজাদীকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গত ১৬ অক্টোবর মেট্রোপলিটন ম্যজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালত কর্তৃক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও তা ডেসপাস শাখায় পাঠায়নি আদালতের সংশ্লিষ্টরা। প্রসেস ফি দেয় নি এমন অভিযোগে পরোয়ানাটি এতদিন আটকে ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে আমরা আদালতে গিয়ে প্রসেস ফি জমা দিলে আজকে (গতকাল) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ডেসপাস শাখায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে এটি থানায় যাবে। তিনি আরো বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে আমার মক্কেল থেকে দোকান বরাদ্দের নাম করে টাকা গ্রহণ করে আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে শুরুতে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার চেষ্টা করেও আমার মক্কেল ব্যর্থ হয়। তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়া হয়। একপর্যায়ে কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে তিনি মামলাটি দায়ের করেন।
গত বছরের ২১ নভেম্বর রাজন দত্ত নামের লালখান বাজার এলাকার এক ফার্মেসি ব্যবসায়ী এ এফ কবির আহমেদ মানিক ও তার ভাই এ এন ফারুক আহমদের বিরুদ্ধে আদালতে নালিশী মামলাটি করেন।
মামলার আর্জিতে বলা হয়, লালখান বাজার জামে মসজিদের ১৫ টি দোকানের মধ্য থেকে চারটি দোকান বরাদ্দ দেয়ার নাম করে ৪০ লাখ টাকা গ্রহণ করেন আসামিরা। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও দোকান বরাদ্দ দেননি তারা। বরং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। আদালতসূত্র জানায়, নালিশী মামলাটি দায়ের করলে আদালত অভিযোগ তদন্ত করতে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্ত শেষে গত ৬ এপ্রিল পিবিআই চট্ট মেট্রোর উপ-পরিদর্শক মো. মনিরুল ইসলাম আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে লালখান বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মসজিদের মালিকানাধীন দোকান ডেভলপারের মাধ্যমে পুনঃনির্মাণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দোকান নির্মাণের জন্য এ এফ কবির আহমেদ মানিককে ডেভলপার হিসেবে নিযুক্ত করা হয় এবং এ সংক্রান্তে একটি যৌথ উন্নয়ন চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয়। তখন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তার ভাই এ এন ফারুক আহমদে। চুক্তিপত্র অনুযায়ী মসজিদের নিচ তলায় ১৫ টি দোকান নির্মাণের সিদ্ধান্ত এবং নির্মাণ কাজ চলাকালীন নগদ অর্থের ঘাটতি মেটোনোর জন্য কয়েকটি দোকান সালামিতে ভাড়া লাগিয়তের সিদ্ধান্ত নেন মানিক। এ বিষয়ে খবর পেয়ে মামলার বাদী রাজন দত্ত তার ভাইদের জন্যসহ মোট চারটি দোকান ভাড়া নিতে আগ্রহ দেখান এবং প্রতিটি দোকান বাবদ ১০ লাখ টাকা করে চুক্তিমূলে মোট ৪০ লাখ টাকা এ এন ফারুকের উপস্থিতিতে এ এফ মানিকের কাছে প্রদান করেন। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও ঐ দোকান বাদী ও তার ভাইদেরকে বুঝিয়ে না দিয়ে টাকাগুলো আত্মসাৎ করেন আসামিরা। যা দণ্ডবিধির ৪১৭/৪২০/৪০৬/৫০৬/৩৪ ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
উল্লেখ্য, লালখান বাজার মসজিদের দোকান বরাদ্দের নাম করে বরাদ্দ প্রত্যাশীর কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা গ্রহণ করে আত্মসাৎসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বছরের ৯ নভেম্বর এ এফ কবির মানিকের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করে দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশ ও জনগণের কথা ভাবুন
পরবর্তী নিবন্ধদক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিলে বাধা, সংঘর্ষ