ছুরিকাহত শ্রমিকের মৃত্যু খাতুনগঞ্জ উত্তাল

সন্ধ্যায় জানাজা শেষে কাজে ফিরেছেন শ্রমিকেরা আজ প্রতিবাদ সমাবেশে থাকবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২০ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৫১ পূর্বাহ্ণ

দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত মো. মাসুদ (৪১) নামের খাতুনগঞ্জের সেই শ্রমিক গতকাল বুধবার সকাল ৬টায় চমেক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ খবর খাতুনগঞ্জে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন শ্রমিকেরা। সকাল থেকে খাতুনগঞ্জের অলিগলিতে শ্রমিকেরা কাজ না করার জন্য মাইকিং করতে থাকেন। এছাড়া দুপুরে কয়েক দফায় হামলাকারীদের ফাঁসির দাবিতে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা খাতুনগঞ্জের আশপাশে প্রদক্ষিণ করে।

বিকেল ৩টার দিকে বৃহত্তর চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জ ও কোরবানিগঞ্জ শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা ফয়েজ উল্লাহ চৌধুরী বাহাদুরের নেতৃত্বে শ্রমিকেরা মিছিল নিয়ে খাতুনগঞ্জের শ্রমিকদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মফিজউল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ। এর আগে গত মঙ্গলবার খাতুনগঞ্জের শ্রমিকরা দিনভর ধর্মঘট করে। এতে পুরো খাতুনগঞ্জের বেচাকেনা থমকে যায়। তবে প্রশাসনের সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাসে গতকাল সন্ধ্যায় নিহত মাসুদের জানাজা শেষে তারা কাজে যোগ দেন।

গতকাল বুধবার দুপুরে সরেজমিনে খাতুনগঞ্জে ঘুরে দেখা গেছে, পুরো খাতুনগঞ্জের আশেপাশে কোনো কোলাহল ছিল না। সবার মুখ ছিল থমথমে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে পুলিশ ছিল সতর্ক অবস্থানে। শ্রমিকেরা মঙ্গলবারের মতো গতকালও খাতুনগঞ্জের প্রবেশমুখ ও বিভিন্ন গলিতে ঠেলাগাড়ি দিয়ে প্রতিবন্ধতা তৈরি করে। ফিরোজ মিয়া নামের এক শ্রমিক বলেন, আমরা শ্রমিকেরা রাতদিন পরিশ্রম করে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রেখেছি। সন্ত্রাসীরা আজকে মাসুদকে খুন করেছে, কালকে আমি অথবা আমার আরেক ভাইকে খুন করবে। আমরা এখানে পরিশ্রম করে টাকা আয় করতে এসেছি, লাশ হয়ে বাড়িতে যাওয়ার জন্য আসিনি। নিহত মাসুদ ছিল তার পরিবারের একমাত্র অর্থ উপার্জনকারী। এখন তার পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে? আমরা কাজের সুন্দর পরিবেশ চাই।

ইলিয়াছ উদ্দিন নামের অপর এক শ্রমিক বলেন, অনেকে মাসুদের খুনের বিষয়টিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। এটিকে বিচ্ছিন্ন বলার কোনো সুযোগ নেই। সামান্য কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে এভাবে একজন মানুষকে খুন করা হবে এটি মেনে নেয়া যায় না।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, শ্রমিকেরা আমাদের খাতুনগঞ্জের প্রাণ। তারা যদি কাজ না করে তাহলে আমাদের খাতুনগঞ্জে ব্যবসা-বাণিজ্য থেমে যাবে। শ্রমিকদের দুঃখ আমরা বুঝি। তবে পুলিশ প্রশাসনের প্রতিও আমাদের আস্থা রাখতে হবে। আমরা আশা করি পুলিশ দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনবে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, খাতুনগঞ্জকে সন্ত্রাসমুক্ত এবং কিশোর গ্যাংমুক্ত রাখার দায়িত্ব প্রশাসনের। একজন শ্রমিকের মৃত্যু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা আজ কতটা নিরাপত্তাহীন। চলার পথে আমাদের কারো সাথে মতপার্থক্য থাকতে পারে, তর্ক-বিতর্ক হতে পারে, তবে সেটিকে কেন্দ্র করে খুনাখুনির মত ঘটনা কাম্য হতে পারে না।

জানতে চাইলে জাতীয় শ্রমিক লীগ সিবিএ-নন সিবিএ সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব আবুল হোসেন আবু বলেন, ঘটনার পর থেকে আমি শ্রমিকদের সাথে আছি। তাদেরকে বলেছি যেন কোনো ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালানো না হয়। মাগরিবের পরে নিহত শ্রমিকের জানাজা শেষে প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছে দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। তাই সন্ধ্যার পর থেকে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দিয়েছেন। আগামীকাল (আজ) বিকেল ৫টায় মাসুদের খুনের প্রতিবাদে খাতুনগঞ্জে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সেই সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির দৈনিক আজাদীকে বলেন, খাতুনগঞ্জের খুনের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আমরা আসামিদের ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছি। মাসুদের জানাজায় আমরা শ্রমিকদের আশ্বস্ত করেছি, আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। এর পরপরই তারা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে ফিরে যায়।

উল্লেখ্য, গত সোমবার সন্ধ্যায় খাতুনগঞ্জের চাঁন মিয়া গলিতে সামান্য কথা কাটাকাটির জেরে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন শ্রমিক মাসুদ। পরে তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ২৭ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে কয়েক দফা অস্ত্রোপচার শেষে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল ভোরে তিনি মারা যান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাবুল আক্তার ও ইলিয়াসসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে অগ্রগতির খবর দিল র‌্যাব