বাসায় না জানিয়ে বন্ধুদের সাথে গেল ঘুরতে, ঝরনায় ডুবে মৃত্যু

চবি প্রতিনিধি | সোমবার , ১৭ অক্টোবর, ২০২২ at ৪:০৩ পূর্বাহ্ণ

রাকিবুর রশিদ জিসান। চট্টগ্রাম রেলওয়ে পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে সদ্য এসএসসি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে জিসান বড়। শিক্ষার্থী হিসেবেও খুব নাম আছে তার। বাবা হারুনুর রশিদ চাকরি করেন মেটলাইফ ব্যাংকে। পরীক্ষা শেষ হওয়ায় বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করতে প্রায়ই বের হয় জিসান। প্রতিদিন খেলাধুলা শেষে বাসায় ফিরলেও এবার জিসান বাসায় ফিরবে ভিন্নভাবে। প্রাণহীন নিথর দেহে শেষ বিদায় জানাতে। গতকাল রোববার ভোরেই বন্ধুদের সাথে বের হয়েছিলো জিসান। তাদের ভ্রমণের জায়গা ছিলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা জায়গায় ঘুরে ১১টার দিকে তারা যায় চবির ঝরনায়। গতবছর ঝরনায় ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর ঝরনা ঘিরে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাঁটাতারের বাধা পেরিয়েই জিসান ও তার বন্ধুরা কয়েকজন সাঁতার কাটতে ঝরনায় নামে। এর মধ্যে জিসানসহ দুজন সাঁতার কাটতে জানতো না। একজনকে ডুবে যেতে দেখে বন্ধুরা টেনে তুললেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না জিসানকে। এরপর বেলা একটার দিকে হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিস ইউনিট এসে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।
জিসানের বাবা বলেন, আমি প্রতিদিন সাড়ে ৫টায় উঠে আগে ছেলেকে দেখতাম। আজ (রোববার) সাড়ে ছয়টায় উঠে দেখি আমার ছেলে নাই। তার মা বলল হয়ত খেলতে গেছে, চলে আসবে। আমিও ভাবছি সে বাইরে গেছে, চলে আসবে। এরকম হবে ভাবিনি। আমার কথা বলার মতো শক্তি নাই। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সে বেরিয়েছে। সে সাঁতার জানতো না। মৃতদেহ উদ্ধারের পর তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের নেওয়া হয়। সেখানে মৃত বলে ঘোষণা করেন মেডিকেলের প্রধান কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবু তৈয়ব। তিনি বলেন, রাকিবুরের মরদেহ বাবার কাছে হস্তান্তর ও অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রাকিবুরের সঙ্গে থাকা বন্ধু ইবনে নেওয়াজ জানায়, পরীক্ষা শেষ হওয়ায় তারা ৭ বন্ধু রোববার সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরতে যায়। বেলা ১১টায় ঝরনায় গোসল করতে নামে। সে সময় জিসান স্রোতে তলিয়ে যায়। সে সাঁতার জানত না।
হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র সেকশন অফিসার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সাড় বারোটার দিকে খবর আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই পাহাড়ের মাঝের ঝুঁকিপূর্ণ ঝরনায় একজন তলিয়ে গেছে। হাটহাজারী ফায়ার সার্ভিসের প্রাইমারি ইউনিট গিয়ে ১টার দিকে ঝরনার ১৫ ফুটের মধ্যে ভাসমান অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে।
রাত সাড়ে নয়টার দিকে জিসানের বাবা হারুনুর রশিদের সাথে কথা হয় আজাদীর। তিনি বলেন, মৃতদেহ নেওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে। তিনি অনুমতি দিলে মৃতদেহ নিতে পারবো। আমি এতক্ষণ অজ্ঞান ছিলাম। স্যালাইন লাগানো হয়েছে আমাকে। চট্টগ্রাম মেডিকেল পড়ে আছি ছেলেকে নেওয়ার জন্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনাইট গার্ডের নেতৃত্বে ইয়াবা সিন্ডিকেট !
পরবর্তী নিবন্ধটিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু আজ