‘অতি উৎসাহী’ পুলিশের তালিকা করবে বিএনপি

সংবাদ সম্মেলনে আমীর খসরুর ঘোষণা

আজাদী প্রতিবদেন | শুক্রবার , ১৪ অক্টোবর, ২০২২ at ৮:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশের আগেরদিন, সমাবেশে আসার পথে এবং সমাবেশ শেষে ফেরার সময় নগর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ করেছে বিএনপি। হামলায় আহতদের অনেকে বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে। এ ছাড়া পুলিশ গ্রেপ্তার করে বহু নেতাকর্মীকে। এর মধ্যে গণসমাবেশের প্রবেশমুখ থেকে ধৃত চারজনসহ ৫২ জনের নাম জানা গেছে। গতকাল সকালে নাসিমন ভবনস্থ নগর বিএনপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানানো হয়। বিভিন্ন স্থানে হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। সংবাদ সম্মেলন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সমাবেশে আসার পথে যে সব আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বাধা দিয়েছে, যেসব পুলিশ বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করছে তাদের নামের তালিকা করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার নগরের পলোগ্রাউন্ডে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সমাবেশের সার্বিক বিষয় তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, সি. যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ভিপি জয়নাল আবেদীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা.শাহাদাত হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাসেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীন, তরিকুল ইসলাম তেইনজিং।
দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে আমীর খসরু বলেন, পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীদের তালিকা করছে। পরিস্কারভাবে বলতে চাই- আওয়ামী সন্ত্রাসীরা এবং যারা এ কাজে থাকে, আমি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারাও তালিকা করেন এরা কারা। গতকাল যারা হামলা করেছে, আক্রমণ করেছে, আমাদের নেতাকর্মীদের আহত করেছে, বাধাগ্রস্ত করেছে, আপনারাও তাদের তালিকা করুন। অতি উৎসাহী পুলিশ যারা দেশ, সংবিধান ও পুলিশের আইন লঙ্ঘন করছে, তাদের বিষয়টিও আমাদের মাথায় রাখছি। কারণ, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বেশিদিন টিকে থাকা যায় না।
তিনি বলেন, কিছু কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে রাতে রেইড করেছে, অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী অনেক জায়গায় আক্রমণ চালিয়েছে। চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বারে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর আঘাত করেছে, পুলিশ গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে, মোবাইল কোর্ট বসিয়েছে, আক্রমণ করেছে, গাড়ি ভাঙচুর করেছে, আমাদের নেতাকর্মীদের অফিস ভাঙচুর করেছে-বাধাগ্রস্ত করার জন্য যা যা করা দরকার তারা কিন্তু কোনোটাই বাদ রাখেনি।
খসরু বলন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু কিছু অতি উৎসাহী সদস্যের দায় সমস্ত পুলিশ বাহিনী কেন নেবে ? র‌্যাবের কিছু সদস্যের কর্মকাণ্ডের জন্য র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলে এসেছে। ব্যক্তিগতভাবে এসেছে, প্রতিষ্ঠানের ওপর এসেছে। নিশ্চয় বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী চাইবে না, কিছু অতি উৎসাহী দলীয় আওয়ামী মার্কা সদস্যের দায় বহন করতে।
খসরু বলেন, পুলিশের কিছু অংশ যারা বাধাগ্রস্ত করছে, বাড়িতে-বাড়িতে রেইড দিয়েছে, বাসগুলোতে বাধা দিয়েছে, ভয়ভীতি দেখিয়েছে, তাদের উদ্দেশে বলতে চাই- বাংলাদেশের সংবিধানে সভা-সমিতিসহ যে অধিকার দেয়া হয়েছে চাকরিতে ঢোকার সময় যে ওয়াদা করে তারা ঢুকেছিল, তারা যেন সেই ওয়াদাগুলো আবার পড়ে দেখে। কারণ ওয়াদাগুলো তারা যদি পড়ে না দেখে, একই কাজ করতে থাকে, জনগণ সেটা মেনে নেবে না। সমস্ত পুলিশ বাহিনীর ওপর এ দায় এসে পড়বে।
গসমাবেশকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীরা ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে জানিয়ে খসরু বলেন, মহাসমাবেশে বিএনপির একজন নেতাকর্মী উচ্ছৃঙ্খলতা দেখিয়েছে কিংবা সহিংসতা করেছে তার উদাহারণ কেউ দিতে পারবে না। আমাদের নেতাকর্মীদের যে ধৈর্য্য সেটাকে স্যালুট করতে হবে। তারা পূর্ণমাত্রার ধৈর্য্য রেখে এই মহাসমাবেশকে সফল করেছে। কিন্তু সহিংসতা এসেছে কাদের কাছ থেকে? আওয়ামী সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে।
ক্ষমতাসীনদের রাজনীতি হচ্ছে বাধা দেয়া; এমন মন্তব্য করে খসরু বলেন, যে রেজিম ক্ষমতা দখল করে বসে আছে, গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করার যে সংস্কৃতি এই রেজিমের আছে সেটা যে আমরা প্রত্যাশা করিনি তা নয়। নিজেরা কিছু করতে পারে না, জনগণের কাছে যাওয়ার তো তাদের সুযোগ নেই, তারা তো জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, সুতরাং বাধাগ্রস্ত করেই তাদের ক্ষমতায় থাকতে হবে। গতকাল যার প্রতিফলন ঘটেছে , তার আগেরদিনও হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কোনো সময় সহিংস রাজনীতির দিকে যাব না। এই ফাঁদে পা দেয়া যাবে না। তারা দেশকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে, আমরা দেশকে গণতন্ত্রের দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছি। আমরা গণতন্ত্রের পথে থাকব, যারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, তারা সহিংসতার দিকে থাকবে, জয় হবে গণতন্ত্রের। জয় হবে বাংলাদেশের মানুষের। মানুষ যদি সিদ্ধান্ত নেয়, দেশের জনগণ যদি সিদ্ধান্ত নেয়, কোনো শক্তি যে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না, গতকালের মহাসমাবেশ সেটা প্রমাণ করেছে।
খসরু বলেন, পলোগ্রাউন্ডের গণসমাবেশটি চট্টগ্রামে এই সময়ে সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ। সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের জনগণের মধ্যে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনার জন্ম নিয়েছিল, সাথে সাথে প্রতিপক্ষ গণবিরোধী শক্তি যারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে সেই রেজিম এবং রেজিমের শক্তিকে বাধাগ্রস্ত করার অব্যাহতভাবে চেষ্টা করেছে।
গণসমাবেশ বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করেছে দাবি করে খসরু বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বে সাড়া জেগেছে গতকাল।
ফেসবুকে কোটি কোটি মানুষ মহাসমাবেশ চলাকালীন শেয়ার করেছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গতকাল ফোন করে আমাকে বলতে বলেছেন, প্রত্যেকটা নেতাকর্মীর প্রতি উনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবীর রিজভী বলেন, স্বৈরাচারের যে এত শৃঙ্খল, এত বেড়া, সেই শৃঙ্খল ভেঙে চট্টগ্রামের জনগণ পলোগ্রাউন্ডের সমাবেশে উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু এই শৃঙ্খল ভাঙতে গিয়ে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আমাদের অনেক নেতাকর্মীর রক্ত ঝরেছে। অনেকে নিজের জীবন বিপন্ন করে এই সমাবেশকে সফল করেছেন। একটি বিষয়- মীরসরাইয়ের এক চেয়ারম্যান বলেছেন, যারা এই সমাবেশে যাবে তারা বাড়ি ফিরতে পারবে না। আওয়ামী লীগের সময়ে কখনোই মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা সুরক্ষিত হয়নি। পৃথিবীর যে কোনো দেশ, যেখানে ন্যূনতম গণতন্ত্র আছে, সেখানে এমন ঘটনা হলে সাথে সাথে গ্রেপ্তার করা হতো। এটা হিংসাশ্রয়ী ঘটনা, কে এই চেয়ারম্যান, এত ঔদ্ধত্য ! তাকে সরকার প্রশ্রয় দিয়েছে।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে- যারা আমাদের গণতান্ত্রিক মিটিং-মিছিলে বিনা কারণে, বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করব।
তিনি জানান, গণসমাবেশের আগের রাতে ঘরে ঘরে অভিযান চালিয়ে পুলিশ বহু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। বাকলিয়া থানা পাঁচজন, কোতোয়ালী থানা পুলিশ একজন, হোটেল থেকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ১৪ জন, বাঁশখালী থেকে তিনজন, সমাবেশে আসার পথে রাঙ্গুনিয়া থেকে ১৭ জন এবং সমাবেশের গেট থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করে।
শাহাদাত বলেন, খুলশী থানা এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যুবদলের সদস্য মো. সজিবের দোকান ভাঙচুর করে ওর মায়ের হাত ভেঙে দেয়। আকবরশাহ থানা যুবদলের সদস্য জাহিদুল ইসলামকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। রাঙ্গুনিয়ায় ৯ জনকে গুরুতর জখম করেছে। সমাবেশ শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে লালখান বাজার ও টাইগার পাস এলাকায় হামলা চালিয়ে গাড়ি ভাঙচুর করে।
আমিরবাগে বিএনপির সাবেক শিল্প সম্পাদক শহিদুল ইসলাম চৌধুরীর অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। খাগড়াছড়ির আলুটিলা, গাড়িটানা ও মহামুনি এলাকায় সমাবেশে আসতে বাধা দেয়। মীরসরাই দারোগাহাট এলাকায় গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। আগের দিন রাতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ও নেতারা মাইকে ঘোষণা দিয়ে সমাবেশে আসতে বাধা দেয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধধর্ষণের পর শিশু সুরমাকে হত্যা করে মিন্টু
পরবর্তী নিবন্ধউপহারের স্বর্ণালংকার পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বিয়ের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন