জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ে দেশের বড় একটি অংশে সাত ঘণ্টার বিদ্যুৎ বিভ্রাটকে দৃশ্যত স্বাভাবিক কারিগরি ত্রুটি উল্লেখ করে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, এর পেছনে অন্য কোনো বিষয় রয়েছে কি না সেটা তদন্ত করা হচ্ছে। বিদ্যুতের জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গত মঙ্গলবারের বিপর্যয়ের প্রাথমিক অনুসন্ধানে তারা জানতে পেরেছেন, পূর্বাঞ্চলের ঘাটতি মেটাতে পশ্চিমাঞ্চল থেকে বাড়তি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল। ওই সময় আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জের দুটি সার্কিট এবং ঘোড়াশালের একটি সার্কিট ট্রিপ করার কারণেই সেদিন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শুরু হয়। এরপর একে একে বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হতে থাকলে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বলে প্রতিমন্ত্রী জানান। খবর বিডিনিউজের।
গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী; কীভাবে দুর্ঘটনার সূত্রপাত্র সেটির একটি প্রাথমিক ব্যাখ্যাও দেন তিনি। তবে সঞ্চালন লাইন ব্যর্থ হওয়ার এক ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে তা পুনঃস্থাপন শুরু করতে পারার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের বিশেষ একটি দক্ষতার দিক বলেও মনে করেন নসরুল হামিদ।
ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, ওই সময় পূর্বাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি ছিল এবং পশ্চিমাঞ্চালে চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বাড়তি ছিল। এর ফলে পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলে ১১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা হচ্ছিল। ঘটনার সময় আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ ২৩০ কেভি দুটি সার্কিট এবং ঘোড়াশাল এআইএস থেকে ঘোড়াশাল জিআইএস এলাকায় ২৩০ কেভি একটি সার্কিট ট্রিপ করায় পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের নিচে নেমে যায়। আন্ডার ফ্রিকোয়েন্সিজনিত কারণে গ্রিড আন স্ট্যাবল হয়ে যায়। পর্যায়ক্রমে পূর্বাঞ্চালের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ট্রিপ করে বিভ্রাটের সৃষ্টি করে।
গ্রিড বিপর্যয় হলেও সঞ্চালন লাইনের বড় ধরনের কোনো ক্ষতি না হওয়ায় সেটিকে অনেকটা স্বস্তির দিক হিসেবেই দেখছেন প্রতিমন্ত্রী। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের এ ঘটনা অস্বাভাবিক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, এরকম টেকনিক্যাল ফল্ট হতেই পারে। বিশেষ করে সাব স্টেশনগুলোতে হতে পারে। আমাদের অনেক পুরোনো সাব স্টেশন রয়েছে যেগুলো এখনও চলমান। কিছু সাব স্টেশনের আধুনিকায়ন হয়েছে। গ্রিড বিপর্যয় হলেও গ্রিড সিস্টেম ও বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহে কোনো ফিজিক্যাল ড্যামেজ পরিলক্ষিত হয়নি। সেজন্য কমিটি গ্রিড সিস্টেমের প্রটেকশন ডেটা, ট্রিপিং রেকর্ড এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পরিচালনা ডেটাগুলো পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। মঙ্গলবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সময় কী কারণে কোথায় বিদ্যুতের জাতীয় সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি দেখা দিয়েছিল, সেদিন যোগাযোগ করেও বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।







