১ কোটি ৩৯ লাখ টাকার গাড়ির দর উঠল আড়াই লাখ টাকা

কাস্টমসে বিলাসবহুল গাড়ির নিলাম

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৩ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দরে কার্নেট ডি প্যাসেজ বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় আসা বিলাসবহুল একটি মিতসুবিশি জিপের সর্বোচ্চ দর উঠেছে মাত্র ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নিলামে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জাপানের তৈরি নেভি ব্লু কালারের জিপটির দর হাঁকে ১ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৯২৪ টাকা। নগরীর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরের মেসার্স এসএস ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ দরদাতা হয়। শুধু তাই নয়, জার্মানির তৈরি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৫ লাখ ১২ হাজার টাকা। নিলামে গাড়িটির দাম ধরা হয়েছিল ১ কোটি ২৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮৭১ টাকা। মোহরার হাসান আলী সর্বোচ্চ দরদাতা হন। সদ্য সমাপ্ত নিলামে কোটি টাকার বেশি মূল্যের অন্তত ১০টি গাড়ির দাম ১০ লাখ টাকা করেও উঠেনি।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখা সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ১ কোটি ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ২১৯ টাকার গাড়ির দর উঠেছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা। রাজধানীর গুলশানের আহমেদ ইসমাইল হোসেন নামে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন। এছাড়া জাপানের তৈরি মিতসুবিশি পাজেরোর দর উঠেছে ৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। গাড়িটির মূল্য ধরা হয় ১ কোটি ১০ লাখ ৪২ হাজার ৯৩০ টাকা।
অপরদিকে আরেকটি মিতসুবিশি গাড়ির দর উঠেছে ৬ লাখ টাকা। কাস্টমস গাড়িটির মূল্য হাঁকে ১ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৯২৪ টাকা। ভাটিয়ারীর এসএস গ্রিন শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রিসাইক্লিং নামে একটি প্রতিষ্ঠান এই গাড়ির সর্বোচ্চ দরদাতা হয়। ২ কোটি ৭৮ লাখ ৬৪ হাজার ৫৯৩ টাকা মূল্যের জার্মানির তৈরি বিএমডব্লিউ গাড়ির সর্বোচ্চ দর উঠেছে ১১ লাখ ৮ হাজার ৯০০ টাকা। বন্দর পোর্ট কলোনি আবাসিক এলাকার সুমালিকা সুফিন নামে একজন সর্বোচ্চ দরদাতা হন।
এছাড়া মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের আরেকটি গাড়ির দর উঠে ৮ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। নিলামে কাস্টমস গাড়িটির মূল্য ধরেছিল ১ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৯২৪ টাকা। এছাড়া ৪ কোটি ৫ লাখ ১৩ লাখ ৩১৩ টাকা মূল্যের ল্যান্ড রোভার গাড়ির সর্বোচ্চ দর উঠেছে ৩০ লাখ টাকা। যুক্তরাজ্যের তৈরি নীল রঙের গাড়িটির সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হয় নগরীর দেওয়ানহাটের ফারজানা ট্রেডিং।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার উপ-কমিশনার সন্তোষ সরেন আজাদীকে বলেন, কার্নেট সুবিধার বিলাসবহুল গাড়ির বিক্রি অনুমোদনের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সংরক্ষিত মূল্যের তুলনায় সর্বোচ্চ দরের অস্বাভাবিক পার্থক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আগামীকাল (আজ) নিলাম কমিটির একটি মিটিং আছে। সেখানে চূড়ান্ত হবে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২২ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ই-অকশন ও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ৭৮টি গাড়ির নিলাম হয়। নিলামে ৩৭৪টি দরপত্র জমা পড়ে। এর মধ্যে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ৩৬০ ও ই-অকশনে (অনলাইন নিলাম) জমা পড়েছে ১৪টি দরপত্র। এর আগে ২০১৬ সালের আগস্টে ৮৫টি, ২০১৭ সালের মে মাসে ১১৩টি, ২০১৮ সালের মে মাসে ১১১টি গাড়ি এবং ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল চতুর্থবারের মতো ২২টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়। কিন্তু প্রতিবারই দামে অসামঞ্জস্য থাকায় দরদাতাদের কাছে গাড়ি বিক্রি করতে পারেনি কাস্টমস। পরে ২০২১ সালের ৩ ও ৪ নভেম্বর ই-অকশন ও ম্যানুয়াল নিলামে ১১২টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়। সে সময় মাত্র ৩টি গাড়ি বিক্রির অনুমোদন দেয়া হয়। এছাড়া গত ১২ ও ১৩ জুন অনলাইন ও ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ১০৮টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়। সেই নিলামে ৩৪টি গাড়ির বিক্রির অনুমোদন দেয় কাস্টমস।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্নেট সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুবিধা দেয়া হয়। তবে নির্দিষ্ট সময় পর আবার সেগুলো ফিরিয়ে নিতে হয়। বাংলাদেশে যারা শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে এসব গাড়ি এনেছেন তাদের বেশিরভাগই প্রবাসী বাংলাদেশি, যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের অনেকেই এসব গাড়ি কার্নেট সুবিধায় এনে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব গাড়ি আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হলে আমদানিকারকরা গাড়িগুলো খালাস করেননি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১২ কেজি এলপিজিতে দাম কমল ৩৫ টাকা
পরবর্তী নিবন্ধভরা মৌসুমে ইলিশের দাম কেন বেশি