দূষণমুক্ত নগরী গড়তে চাই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

জাহেদ কায়সার | শুক্রবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত এই চট্টগ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাধিক জনবহুল শহর। আর এই শহরে দিন দিন অপরিকল্পিত নগরায়ণ প্রক্রিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠছে ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানা। তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বজ্যের্র পরিমাণও। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বর্জ্য নিষ্কাশনের আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেই। ফলে বিপুল মানুষের গৃহস্থালির বর্জ্যের পাশাপাশি লাখ লাখ মেবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর, ওয়াশিং মেশিন, এয়ারকন্ডিশনার, ফটোকপি মেশিনসহ নানা ইলেকট্রনিক সামগ্রী নষ্ট হয়ে প্রতিদিন যত্রতত্র নিক্ষিপ্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের মধ্যে সিসা, সিলিকন, টিন, ক্যাডমিয়াম, পারদ, দস্তা, ক্রোমিয়াম, নাইট্রাস অঙাইড ইত্যাদি রাসায়নিক থাকে, যেগুলো দেশের মাটি ও পানিকে দূষিত করছে। বিভিন্নভাবে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে নানা রোগের জন্ম দিচ্ছে, বিশেষ করে গর্ভবতী মা ও শিশুদের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। তা ছাড়া বর্জ্যগুলো পরিকল্পিত ভাবে নিষ্কাশন না করার ফলে কর্ণফুলি নদী সহ দূষিত হছে নগর জীবন। বর্ষা মৌসুমে এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে। ডাস্টবিন উপচে কঠিন বর্জ্য রাস্তার পাশে ড্রেনে পড়ে পয়ঃনিষ্কাশনব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অচল করে দেয়। বর্ষাকালে খাল যেখানে পানিতে টইটুম্বুর থাকার কথা, সেখানে পানির পরিবর্তে থাকে আবর্জনার স্তূপ! ফলে জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামে নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই শহরে বর্জ্য সংগ্রহ করে তা আবর্জনার স্তূপে পাঠানোর পরিবর্তে প্রয়োজন পরিকল্পিত সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন ৮৭ লাখ মানুষ ৩০০ টন বর্জ্য সৃষ্টি করে। যার মধ্যে ২৪৯ টন প্লাস্টিক বর্জ্য। এর ৫৬ শতাংশ (১৪০টন) রিসাইক্লিংয়ের জন্য সংগ্রহ না করায় নগরীর খাল নালা ও পরিবেশের সাথে মিশে পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে। এই প্লাস্টিক পলিথিনের কারণে বাড়ছে জলাবন্ধতা। পানি দূষণ, দূর্গন্ধযুক্ত আবহাওয়া, রাস্তার পাশের ময়লা আবর্জনা মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যার একটি বড় কারণ। এছাড়া প্লাস্টিক পলিথিন নদী ও সাগরে মিশে ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য সম্পদ। গত ১০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সোলতান আহমদ হলে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ও বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম আয়োজিত গবেষণা প্রবন্ধে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়, যত্রতত্র প্লাস্টিক ছুড়ে ফেলা, পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকা, প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের অভাব, প্লাস্টিক পুড়ানো, প্লাস্টিক দূষণের কারণ সম্পর্কে অজ্ঞতা, অপচনশীলতা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্লাস্টিক বর্জ্যে দূষণ দিন দিন বাড়ছে। চট্টগ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার। এ বিবেচনায় চট্টগ্রামকে আধুনিক বিশ্বমানের নগরীতে পরিণত করতে হবে। আর তা করতে হলে চাই টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা গ্রহণ। বর্তমানে পৃথিবী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বিশ্বসহ বাংলাদেশ আজ ভারসাম্যহীন অবস্থানে আছে। এ কারণে টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে চট্টগ্রাম নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিগত উৎকর্য সাধন করতে হবে। সারাদিনের জমাকৃত শুধু স্তুপ করে বা ডাম্পিং ইয়ার্ডে ফেলে রাখলে হবে না , এর বিকল্প ব্যবহারের প্রক্রিয়া খুঁজে কার্যকর ব্যবস্‌হা গ্রহন করতে হবে। তা হলেই চট্টগ্রাম শহর কে একটি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন দূষণমুক্ত নগরী গড়ে তোলা করা সম্ভব হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকাজকে কখনো ছোট বড় হিসেবে দেখতে নেই
পরবর্তী নিবন্ধজুম্’আর খুতবা