টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারের লোভে পাশের বাসার গৃহবধূকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে মো. কিবরিয়া প্রকাশ জাফর (২৮) নামে এক ব্যক্তি। তবে এ হত্যাকাণ্ডের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে লুট করা স্বর্ণের দুল, আংটি ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। গত শনিবার রাতে নগরীর ইপিজেড থানার নিউমুরিং এলাকার একটি বাসায় এ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে। রোববার বিকালে খুন হওয়া গৃহবধূ শামীমা আক্তারের (৪৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গতকাল সোমবার ইপিজেড থানায় সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) শাকিলা সুলতানা।
তিনি বলেন, টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারের লোভে একাই খুন করার কথা স্বীকার করেছেন গ্রেপ্তারকৃত জাফর। রোববার বিকালে খুন হওয়া গৃহবধূর লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ প্রতিবেশী জাফরকে সন্দেহজনকভাবে আটক করে। জাফরের হাতে কামড়ের দাগ দেখে তাকে সন্দেহ করা হয়। পরে তাকে টানা ১০ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ চলে। এ সময় প্রথমে তদন্ত বিভ্রান্ত করতে জাফর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও দুজন সম্পৃক্ত বলে জানিয়েছিলেন। পরে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে স্বর্ণালঙ্কার ও টাকার লোভে জাফর নিজেই রাতের বেলা শামীমাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছে।
ইপিজেড থানা পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত জাফরের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম কুধুরখীল এলাকায়। স্ত্রীকে নিয়ে নিউমুরিং তক্তারপুল আজিজ শাহ রোডের আবুল ফয়েসের বাড়িতে তিনি ভাড়া থাকেন। মাবিয়া ভিলা নামের ওই ভবনটির পঞ্চম তলাতেই পাশের বাসায় একা ভাড়া থাকতেন শামীমা আক্তার। তার স্বামী জামাল উদ্দিন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সুবেদার হিসেবে রাঙামাটিতে কর্মরত আছেন। শামীমাকে আপা বলে ডাকতেন জাফর। আর শামীমাও ছোট ভাইয়ের মত দেখতেন তাকে। শনিবার রাতে জাফর দরজায় নাড়া দিলে ভেতর থেকে শামীমা খুলে দেয়। এ সময় সে ঘরে ঢুকেই শামীমার মুখ চেপে ধরে। ধস্তাাধস্তির এক পর্যায়ে সে শামীমাকে জখম করে মুখ-হাত-পা বেঁধে ফেলে এবং শ্বাসরোধ করে খুন করে।
পুলিশ জানায়, শামীমার স্বামী তাকে ফোনে না পেয়ে বাড়ির মালিককে ফোন করেন। পরে স্বজনরা ওই বাসায় যান। শামীমার ছোট বোন বাসায় গিয়ে তার হাত, পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পান। খাঁটে উপুড় করে শোয়ানো অবস্থায় এবং ঘরের কাপড় চোপড় এলোমেলো অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় তিনি জীবিত ভেবে হাত-পা ও মুখের বাঁধন খুলে দেন।
পুলিশ আরো জানায়, ৯৯৯ এ সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শামীমার লাশ উদ্ধার করে। শামীমার ছোট বোন পুলিশকে জানায়, তার বোন অপরিচিত কারও ডাকে ঘরের দরজা খোলেন না। এই রহস্য ধরেই পুলিশ ক্লু লেস এই হত্যাকান্ডের প্রকৃত আসামিকে গ্রেপ্তার করে।
জাফর পুলিশকে জানিয়েছে, দীর্ঘদিন বেকার থাকায় আর্থিক টানাপড়েনে ছিলেন তিনি। তার ধারণা ছিল শামীমার কাছে অনেক টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার আছে। মূলত সে লোভেই শনিবার রাত ১২টার দিকে ঘরের দরজায় নাড়া দেন তিনি। আর তাকে দেখেই মূলত ভেতর থেকে দরজা খুলে দেন শামীমা। ঘরে ঢুকেই শামীমাকে মুখ চেপে ধরলে হাতে কামড় দেয়। তখন সে শামীমাকে মারধর করে হাত-পা- মুখ বেঁধে ফেলে এবং শ্বাসরোধ করে খুন করে।
এই ঘটনায় রোববার গভীর রাতে শামীমার ছোট ভাই মো. আজম বাদী হয়ে জাফরকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছে বলে জানান ইপিজেড থানার ওসি আব্দুল করিম।












