দোকান উচ্ছেদের প্রতিবাদে দেড় ঘণ্টা নগর ভবন ঘেরাও

পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতিতে শান্ত বিক্ষোভকারীরা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

দোকান উচ্ছেদের প্রতিবাদে টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবন ঘেরাও করেছে স্থানীয় বস্তিবাসীরা। দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় অবস্থান করে বিক্ষোভ করে তারা। গতকাল বুধবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মেয়র নগর ভবনে ছিলেন না। মেয়র আসার পর তার পক্ষে জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন এবং মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম এসে বিকল্প জায়গায় পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিলে শান্ত হন বিক্ষোভকারীরা।
জানা গেছে, গতকাল টাইগারপাস মোড় থেকে নেভি কনভেনশন হল হয়ে নগর ভবন পর্যন্ত রাস্তা ও ফুটপাত দখলে নিয়ে গড়ে তোলা প্রায় ৬০ টি দোকান ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। এর মধ্যে নগর ভবনের সামনে ১০-১৫টি দোকানও রয়েছে। এ সব দোকানের মালিক স্থানীয় বস্তিবাসীরা। মূলত এ সব দোকানদারের পক্ষে বিক্ষোভ হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ফ্ল্যাট দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৩ সালে বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। প্রতিটি ফ্ল্যাটের মূল্য ধরা হয় ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। এ সময় ৩৩ পরিবার থেকে টোকেন মানি হিসেবে ১০ হাজার টাকা করে নেয় চসিক। বাকি টাকা ফ্ল্যাট বুঝে পাওয়ার পর কিস্তিতে পরিশোধ করার কথা ছিল। পরে উচ্ছেদ হওয়া জায়গায় সাততলা ভবন নির্মাণ করে চসিক। কিন্তু বস্তিবাসীদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। উল্টো ২০১৯ সালের জুনে নগরের আন্দরকিল্লা থেকে নগর ভবন সেখানে স্থানান্তর করা হয়। এখনো চসিকের কার্যক্রম চলমান আছে। ফ্ল্যাটের প্রতিশ্রুতি পাওয়া সেই ৩৩ পরিবারের সদস্যরা আশেপাশে দোকান নির্মাণ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। গতকাল দোকান উচ্ছেদের পর তারা নগর ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় প্রতিশ্রুত ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেয়ারও দাবি জানায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিক্ষোভ চলাকালে বিকেল ৩ টার দিকে নগর ভবনে আসেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় তিনি তাদের সঙ্গে কথা না বলে তার দপ্তরে চলে যান। পরে শৈবাল দাশ সুমন ও মুহাম্মদ আবুল হাশেম এসে মেয়রের পক্ষে কথা বলেন।
আন্দোলনকারী ও টাইগারপাস গৃহহীন মাতৃছায়া কমিটির আহ্বায়ক রমজান আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, ফ্ল্যাটের জন্য যারা কর্পোরেশনকে টাকা দিয়েছে তারাই ছোট ছোট দোকান করে কোনোমতে চলছিল। আজ (গতকাল) হঠাৎ করে কোনো কথাবার্তা না বলে এবং সময় না দিয়ে দোকানগুলো কর্পোরেশন ভাঙা শুরু করল। যাদের দোকান ভাঙল তারা এবং আশেপাশের লোক এসে কর্পোরেশনের সামনে বসে যায়। আমরা তো কর্পোরেশনকে ১০ বছর সময় দিয়েছি, কিন্তু তারা মাত্র এক ঘণ্টা সময় দিয়ে উচ্ছেদ করল। ২০-২৫টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এরা সবাই সমিতির সদস্য। সময় না দিয়ে ভাঙায় সবাই বেকায়দায় পড়ে গেছে। সপ্তাহ-১০ দিন সময় দিলেও তো হতো।
রমজান আলী বলেন, শৈবাল দাদা ( শৈবাল দাশ সুমন) এসে বলছে সবাইকে ছিন্নমূলে পুনর্বাসন করা হবে। এটা শুনে সবাই তো আরো ক্ষেপে গেল। পরে বলছে বাটালি হিলের রিটেইনিং দেয়ালের ওইদিকে করবে। তখন ওখানকার যারা বাসিন্দা তার প্রতিবাদ করছে।
এ বিষয়ে চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম দৈনিক আজাদীকে বলেন, তারা রাস্তার উপর খুপরির মত করে দোকান করে। এখানে পার্কিং সমস্যা হচ্ছিল। তাছাড়া বিদেশি কোনো মেহমান আসলেও দেখতে দৃষ্টিকটূ লাগে। তাই উচ্ছেদ করা হয়েছে। পরে অবশ্য তাদেরকে জায়গা দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। যেখানে বসলে আমাদের আপত্তি থাকবে না। এরপর তারা শান্ত হয়েছে। বস্তিবাসীদের পুনর্বাসনের জন্য নগরের পাহাড়তলী এলাকায় ২৮ শতক জায়গার ওপর বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি। গতকালকের অভিযানে নেভি কনভেনশন হলের আগে রেল লাইন সড়ক থেকে ১৫/২০ টিসহ মোট ৬০ টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় বলেও জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৩শ বস্তা চালসহ ট্রাক জব্দ, যুবক আটক
পরবর্তী নিবন্ধচবি ছাত্রলীগ : পদবঞ্চিতদের গণস্বাক্ষর কর্মসূচি