মাথা গোঁজার ঠাঁই হারালো ৯০ পরিবার

বাঁশখালীতে আগুন

বাঁশখালী প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় আগুনে পুড়ে ৫২টি বসতঘর পুড়ে গেছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে চাম্বল ইউনিয়নের পশ্চিম চাম্বল জলদাশ পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্তরা।

জানা যায়, ভোর সাড়ে তিনটা চারটা নাগাদ হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত হয়ে তা চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সবাই ঘুমে আছন্ন থাকায় তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে কোন রকমে নিজেদের পরনে থাকা কাপড় নিয়ে বের হওয়া সম্ভব হলেও কোন মালামাল বের করতে পারেনি কেউ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার চেষ্টায় বাঁশখালী ও পেকুয়া ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে ৫২টি বসতঘর একেবারে পুড়ে যায়, যেখানে ৯০টির মত পরিবার বসবাস করত বলে জানা যায়। এ সময় নিজেদের জীবন বাঁচাতে ও পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে গিয়ে প্রায় ৩০/৪০ জন আহত হয়। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। এ সময় সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে গৃহ হারা মানুষগুলো দিকবিদিক ছুটাছুটি করছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কয়জন সদস্য জানান, আগুনের লেলিহান শিখায় মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল, কীভাবে আমরা একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই পাব সে চিন্তায় আছি। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রতন দাশ জানান, আমি বিগত ৩/৪ মাস আগে নতুন করে বাড়ি তৈরি করে সব নতুন মালামাল এনে ঘর সাজিয়েছি। সবগুলো মুহুর্তের মধ্যে শেষ হয়ে গেল।

জলদাশ পাড়ার হিন্দু কমিউনিটির সভাপতি ও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত গুরুধন দাশ জানান, আগুনের ভয়াবহতা এত বেশি ছিল আর বিদ্যুৎ থাকায় কোন মালামাল কেউ বের করতে পারিনি। স্থানীয় জনগণ এগিয়ে আসায় কোন রকমে জীবন বাঁচানো গেল। তবে সব শেষ হয়ে গেছে। আমার বাড়িতে প্রায় ২/৩ লাখ টাকার মালামাল পুঁড়ে যায়।

চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরী বলেন, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে প্রাণহানি হয়নি তার জন্য খোদার কাছে কৃতজ্ঞ বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে সকাল দুপুর ও রাতে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন। যতদিন তাদের স্থায়ী কোনো সমাধান না হয় ততদিন তিনি সর্বাত্মকভাবে খাবারের ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মাঝে ৫ হাজার টাকা নগদ অর্থ প্রদান করেন এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। এ সময় বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী, সহকারি কমিশনার (ভূমি) খোন্দকার মাহমুদুল হাসান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রেহেনা আক্তার কাজেমী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, জলদাশ পাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫২টি বসতঘর ভস্মীভূত হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য খাবার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সম্মানিত জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রত্যেককে নগদ ৫ হাজার টাকা, ১ বান্ডিল করে ঢেউটিন ও গৃহ নির্মাণ বাবদ নগদ ৩ হাজার টাকা, ৩০ কেজি চাল, ১৫ কেজি শুকনো খাবার ও পরিবার প্রতি ৫টি করে কম্বল বিতরণ করেন।

এদিকে চাম্বল জলদাশ পাড়ার আগুনে পুঁড়ে ৫২টি বসতঘর নিঃস্ব হয়ে যাওয়া জনগণকে সার্বিক সহযোগিতা করছে স্থানীয় ব্যবসায়ী, বিভিন্ন সংগঠন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাড়ি ভিটা লিখে নিয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত বাবাকে বের করে দিল ছেলে
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের একটিসহ মেয়াদ বাড়ল ৪ কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের