কষ্টে থাকা কষ্টে পড়া মানুষের আশার প্রতীক সিআরপি

অকুপেশনাল থেরাপি সেবার নতুন দিগন্তের উন্মোচন

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:১৮ পূর্বাহ্ণ

কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার সমন্বিত উদ্যোগে পাল্টে যাচ্ছে কালুরঘাটস্থ সিআরপি। এ কে খান শিল্প গ্রুপের দান করা ভূমিতে গড়ে তোলা বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠানটি সমাজের বহু মানুষের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির বেশ কিছু সমস্যা কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা নিজস্ব অর্থায়নে সমাধান করে দেয়ার ঘটনা সংশ্লিষ্টদের মাঝে বেশ আশার সঞ্চার করেছে। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এই সেন্টারের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।

সূত্র জানিয়েছে, নগরীর কালুরঘাটে অবস্থিত সিআরপি (সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন প্যারালাইজড) স্থাপিত হয়েছে এ কে খান শিল্প গ্রুপের দান করা জায়গার উপর। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন যাবত প্যারালাইসিসের রোগী, বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অঙ্গহানি হওয়া ব্যক্তি, অটিজম ও সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত শিশুদের প্রয়োজনীয় থেরাপি সেবা অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে বা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। এরা রোগীদের চার রকমের সেবা দিয়ে থাকে। অঙ্গহানি হওয়া ব্যক্তিদের কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন, ফিজিওথেরাপি, শিশুদের অকুপেশনাল থেরাপি এবং স্পিচ থেরাপি। অকুপেশনাল থেরাপির জন্য বেশ কিছু অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। চট্টগ্রামে এরূপ সমন্বিত চিকিৎসা কার্যক্রম কিংবা সেবা প্রদানের আর কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এতে করে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এই প্রতিষ্ঠানে সেবা নেয়ার জন্য জড়ো হন। অপরদিকে অটিজম আক্রান্তসহ বিভিন্ন ধরনের বহু শিশুও এই প্রতিষ্ঠানে জড়ো হন চিকিৎসা সেবার জন্য। শিশুদের থেরাপি প্রদানের ক্ষেত্রে যন্ত্রপাতির সাথে সাথে সামগ্রিক পরিবেশও সুন্দর হতে হয়। কিন্তু অত্যন্ত ছোট্ট পরিসরের কয়েকটি স্থাপনায় বিশাল এক সেবাযজ্ঞ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিল সিআরপি।

চট্টগ্রামের কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা বিষয়টি উপলদ্ধি করে এক্ষেত্রে এগিয়ে আসেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদের নেতৃত্বে উক্ত সরকারি কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দেয়া অর্থে একটি ফান্ড গঠন করেন এবং সিআরপির উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন। সিআরপি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে, শিশুদের থেরাপিসহ এখানকার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির দাম খুব বেশি নয়। কিন্তু সব যন্ত্রপাতি বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনে এনে একত্রিত করা আর সেবার পর্যায়ক্রমিক ধাপে তা সাজানো ও সমন্বয় করাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য বেশ কিছু স্পেসের প্রয়োজন। সিআরপির সংকট ঘুচানোর জন্য সরকারি কর্মকর্তারা আলাদা করে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করেছেন। এরমধ্যে অকুপেশনাল থেরাপি সেন্টারের কাজ শেষ পর্যায়ে। এতে যুক্ত হয়েছে রক ক্লাইম্বিং ওয়াল, মাল্টি লেডার ফ্রেম, রোলার কোস্টার, বল পুল, সেন্সরিং হুইল, ক্রাস প্যাড, টানেল রোপ লেডারসহ অন্তত ৩০ টি ছোট বড় যন্ত্রপাতি। শিশুদের চোখের উদ্দীপনা সংক্রান্ত সমস্যা নিরুপণে করা হয়েছে ভিজুয়্যাল সেন্সরিং রুম। যাতে রয়েছে বাবল টিউব, সেন্সরিং লাইট, অপটিক্যাল ফাইবার, ইনফিনিটি মিররসহ আধুনিক সব যন্ত্রপাতি।

সিআরপি ম্যানেজার খলিলুর রহমান বলেন, এ সেন্টারটি হবে চট্টগ্রামের অকুপেশনাল থেরাপির জন্য সবচেয়ে বড়, অত্যাধুনিক ও মনোমুগ্ধকর। অটিজম ও সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত শিশুরা এখানে খেলার ছলে থেরাপি গ্রহণ করবে। তিনি আরো জানান, সেন্টারের জন্য পাওয়া যন্ত্রপাতিসমূহ সম্পূর্ণ দেশেই তৈরি হয়েছে, ফলে তা ব্যয়বহুল নয়। সেন্টারটি নির্মাণে প্রায় ৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর পুরোটাই বহন করেছেন ঐ সরকারি কর্মকর্তারা। এই সেন্টারের মাধ্যমে চট্টগ্রামে অকুপেশনাল থেরাপি সেবার নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ বলেন, সিআরপি সমাজের জন্য অনেক বড় একটি কাজ করছে। তারা কষ্টে থাকা এবং কষ্টে পড়া শত শত মানুষের আশা ভরসার প্রতীক হয়ে উঠেছে। কিন্তু বেশ কিছু সমস্যা ছিল তাদের। ছিল সংকটও। আমরা উদ্যোগ নিয়ে একটি তহবিল গড়ি এবং হাত লাগিয়ে কল্যাণমুখী এই প্রতিষ্ঠানটিকে একটু সাজিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি। চট্টগ্রামের অটিজম আক্রান্ত শিশু কিংবা স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হওয়া বা দুর্ঘটনায় অঙ্গ হারানো মানুষগুলো এর সুফল পাবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলোহাগাড়ার সাবেক ওসি শাহজাহানের স্ত্রীর দেড় কোটি টাকার সম্পদ ক্রোকের আদেশ
পরবর্তী নিবন্ধমাধ্যমিকের ৭ স্কুলে পাইলটিং চলছে চট্টগ্রামে