ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লি পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিন বছর পর তার এ দ্বিপক্ষীয় সফরে বাণিজ্য, জ্বালানি, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সহযোগিতার পাশাপাশি দুই দেশের অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো আলোচ্যসূচিতে প্রাধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীরা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় নয়া দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশ এবং ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার মুহাম্মদ ইমরান। বিমানবন্দরে শেখ হাসিনার
জন্য ছিল লাল গালিচা, একটি সাংস্কৃতিক দলের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়।
মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগা জিয়ারতের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে তার ৪ দিনের সফর শুরু করেছেন। তিনি সেখানে কিছু সময় অতিবাহিত এবং ফাতিহা পাঠ ও মোনাজাত করেন।
সফরের প্রথম দিন গতকাল দিল্লীতে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে আসেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্থল ও জলপথে যোগাযোগের উপর জোর দিয়েছেন।
গতকাল বিকালে আইটিসি মৌর্য্য হোটেলে তাদের ওই সাক্ষাতের পর এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন আলোচনার বিষয় সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। আঞ্চলিক যোগাযোগের উপর সফরে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, ভারতের যে সমস্ত চাওয়া রয়েছে বাংলাদেশের কাছে এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে সমস্ত পেন্ডিং ইস্যুজগুলো আছে, সেগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভারতসহ ভুটান, নেপাল ও বাংলাদেশ সব মিলিয়ে এই পুরো অঞ্চলের মানুষের কল্যাণের জন্য যে সমস্ত প্রজেক্টস হতে পারে, সেগুলো নিয়ে আমাদের প্রাইওরিটি হওয়া উচিত। বেশ কিছু প্রজেক্ট দেরি হচ্ছে, আমরা জানি। যেমন বিবিআইএন একটা; এবং আমাদের পোর্ট ভুটান ও নেপালের ব্যবহার করার বিষয় আছে।
‘ফিজিক্যাল কানেক্টিভিটির’ পাশাপাশি জ্বালানি সংযোগ এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়েও হাসিনা ও জয়শঙ্করের বৈঠকের আলোচনায় উঠে এসেছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ। আঞ্চলিক ইস্যুগুলোর মধ্যে মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সংঘাতের বিষয় প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে তুলে ধরেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেছেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে রাখাইনে যে অস্থিরতা আমরা দেখছি এটা কোনোভাবে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা বিরূপ প্রভাব ফেলবে কি না, এটা সবার মনে একটা শঙ্কা আছে। উনারা আমাদেরকে বলেছেন যে, ভারতও লক্ষ্য করছে যে এখানে কিছুটা অশান্তি বিরাজ করছে। তো, এটা কারও জন্য মঙ্গলজনক নয়।
পানি বন্টনের ইস্যুগুলোর কীভাবে আরও অগ্রগতি করা যায়, সে বিষয়ে বৈঠকে কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মূল আলোচনা আগামীকালকে (আজ) হবে। আজকে জাস্ট এগুলো ফ্ল্যাগ করার মত।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভারতের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়ী আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি। বৈঠকের বিষয়ে গৌতম আদানি টুইটারে বলেছেন, দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করা আমার জন্য গৌরবের বিষয়। বাংলাদেশের জন্য তার দৃষ্টিভঙ্গি অনুপ্রেরণাদায়ক এবং সাহসী। আমরা চলতি বছর ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৬০০ মেগাওয়াট গোড্ডা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ট্রান্সমিশন লাইন চালু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সফর সূচি : আজ মঙ্গলবার সকালেই ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন নরেন্দ্র মোদী। সেখানে শেখ হাসিনা গান স্যালুট গ্রহণ করবেন এবং আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার পরিদর্শন করবেন। এরপর রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে শেখ হাসিনা যাবেন হায়দ্রাবাদ হাউজে। সেখানে মোদীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন তিনি। তারা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন। এরপর দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। কর্মসূচি শেষে সেখানে মোদীর দেওয়া মধ্যাহ্ন ভোজে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। সেদিনই বিকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপ রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। আগামীকাল বুধবার সকালে ভারতের উন্নয়নমন্ত্রী কিষাণ রেড্ডি দেখা করবেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। এরপর বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসায়ী ফোরামের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্টুডেন্ট স্কলারশিপ’ প্রধান অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ঢাকা ফেরার আগে বৃহস্পতিবার বিমানে জয়পুর যাবেন শেখ হাসিনা; সেখান থেকে যাবেন আজমির শরিফ জিয়ারত করবেন।