সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা গর্বাচেভের মৃত্যু

| বৃহস্পতিবার , ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

তিন দশক আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান, আর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বিশ্বের একক কর্তৃত্ব চলে যাওয়ার কালে যে কয়েকটি আলোচিত চরিত্রের ওপর বিশ্বের প্রায় সবার চোখ ছিল, তার অন্যতম মিখাইল গর্বাচেভের জীবনাবসান হয়েছে।
কিনি ছিলেন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা। ৯১ বছর বয়সে গত মঙ্গলবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রাশিয়ার সেন্ট্রাল ক্লিনিকাল হাসপাতাল এক বিবৃতিতে বলে, ‘গুরুতর ও দীর্ঘকালীন অসুখে ভুগে এক সময়ের কমিউনিস্ট নেতা মিখাইল গর্বাচেভ মারা যান। বিশ্বে এক পক্ষের কাছে তিনি নন্দিত স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য, আরেক পক্ষের কাছে নিন্দিত রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের পতন ঘটানোর জন্য। ১৯৮৫ সালে রুশ কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নেতা ও রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া গর্বাচেভ পেরেস্ত্রোইকা ও গ্লাসনস্ত নামে উদারীকরণের যে দুই কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন, তাই রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের পতন ত্বরান্বিত করেছিল বলে তার সমালোচকরা বলে থাকেন।
পশ্চিমাদের কাছে তিনি ছিলেন ‘সোভিয়েতের কারাগারে বন্দি কোটি কোটি মানুষের মুক্তিদাতা’, অন্যদিকে রাশিয়ার নবীন-প্রবীণ অনেকের কাছে তিনি খলনায়ক, যিনি পরাশক্তি থেকে রাশিয়াকে দুর্দশাগ্রস্ত দেশের কাতারে নিয়ে আসেন। প্রবাদপ্রতীম কমিউনিস্ট নেতা ভ্লদিমির ইলিচ লেনিনের গড়া সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৯১ সালে ভেঙে পড়লে আলাদা আলাদা ১৫টি জাতিরাষ্ট্র গড়ে ওঠে, তার মধ্যে বড়টি হল আজকের রাশিয়া।
গর্বাচেভ উঠে এসেছিলেন এক কৃষক পরিবার থেকে; কৌশল, বুদ্ধিমত্তা আর পরিশ্রম তাকে নিয়ে যায় সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বে। স্নায়ু যুদ্ধের উত্তেজনাকর সময়ে পৃথিবীর অন্যতম ক্ষমতাধর জোটের দায়িত্ব পাওয়া এ ব্যক্তি সোভিয়েত শাসনকাঠামো আমূল বদলে ফেলার মিশনে নামেন; তার ওই মিশন, খোলা হাওয়া আর উদারীকরণের একের পর এক ঝটকা মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে পূর্ব ইউরোপের মানচিত্র বদলে দেয়। বাঁক বদল ঘটে ইতিহাসেরও। রক্তপাতহীনভাবে স্নায়ু যুদ্ধের অবসান ঘটালেও সোভিয়েত পতন ঠেকাতে ব্যর্থ গর্বাচেভ পরবর্তীতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ এ প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি করেছিলেন, পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে বাড়িয়েছিলেন ঘনিষ্ঠতা, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের দ্বিধাবিভক্তি ঘুচিয়ে দিতে এবং জার্মানিকে এক করতে মূল ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু তার অভ্যন্তরীণ সংস্কার সোভিয়েত ইউনিয়নকে দুর্বল করে দেয় এবং এর পতন ত্বরান্বিত করে, যাকে পরে ভ্লাদিমির পুতিন বিংশ শতাব্দীর ‘সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বিপর্যয়’ অ্যাখ্যা দিয়েছিলেন। রুশ এ প্রেসিডেন্ট একবার ২০১৮ সালে বলেছিলেন, সুযোগ থাকলে তিনি সোভিয়েত পতন উল্টে দিতেন। তার মৃত্যুতে পুতিন ‘গভীর শোক’ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন। আজ গর্বাচেভের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি টেলিগ্রাম করবেন।
গর্বাচেভের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শোক জানিয়ে বলেছেন, ‘মিখাইল গর্বাচেভ একজন অসাধারণ দূরদর্শী মানুষ ছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়েনের নেতা হিসাবে তিনি আমাদের দুই দেশের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার কমাতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগ্যানের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। কয়েক দশকের নিষ্ঠুর রাজনৈতিক দমন-পীড়নের পর (সোভিয়েত ইউনিয়নকে) তিনি গণতান্ত্রিক পথ নিয়ে এসেছিলেন। তার এই সংস্কার একটি নিরাপদ বিশ্ব ও লাখ লাখ মানুষের জন্য বৃহত্তর স্বাধীনতা এনেছিল। বাইডেন বলেন, ‘এগুলো ছিল একজন বিরল নেতার কাজ- যার কল্পনায় ছিল একটি ভিন্ন রকমের ভবিষ্যত, যা অর্জনে পুরো ক্যারিয়ারকে ঝুঁকিতে ফেলার সাহস ছিল তার।’ খবর বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৮ ব্যবসায়ীকে ৮৭ হাজার টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধইতিহাস সবসময় সত্যকে ধারণ করে