বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) তিনটি জাহাজে দেশীয় জ্বালানি তেল পরিবহনে ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই উদ্যোগ সফল হলে বিএসসির বিপুল আর্থিক আয় ছাড়াও বিপিসির কয়েকশ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। বিএসসির তিনটি জাহাজে একসাথে ১ লাখ ১৭ হাজার টন জ্বালানি তেল পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর আগামী জানুয়ারি থেকে বিএসসির জাহাজে জ্বালানি তেল পরিবহন হতে পারে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশের জ্বালানি তেলের একমাত্র নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করে। বছরে ৫৫ লাখ টনের মতো জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়। এর মধ্যে ১৫ লাখ টন ক্রুড অয়েল। বাকি ৪০ লাখ টন রিফাইনড অয়েল। প্রতি বছর জ্বালানি তেলের ব্যবহার বাড়ছে। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৪ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয়। এই তেলের পুরো চালান বিদেশি শিপিং কোম্পানির মালিকানাধীন জাহাজের মাধ্যমে আনা হয়। এতে বিপিসির বছরে প্রায় ৮শ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এই টাকার পুরোটাই প্রদান করা হয় বৈদেশিক মুদ্রায়।
বিএসসির শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, ২০১৮-২০১৯ সালে বিএসসি তিনটি অয়েল ট্যাংকার ও তিনটি কার্গো ভ্যাসেল নিজেদের বহরে যুক্ত করে। তিনটি অয়েল ট্যাংকার বহরে আসার পর থেকেই বিপিসি তাদের জাহাজে জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য বিপিসিকে প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বিএসসির তিনটি জাহাজে প্রতি মাসে গড়ে ২ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিবহন সম্ভব। কিন্তু বিএসসির এই প্রস্তাবে বিপিসি তেমন আগ্রহ দেখায়নি।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ৪ জুন আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রথমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। ওই বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন হয়েছিল। কিন্তু ওই কমিটি কোনো প্রতিবেদন কিংবা সুপারিশ দেয়নি। ওই অবস্থায় বিএসসি প্রতিটি ৩৯ হাজার টন ধারণক্ষমতার নতুন তিনটি জাহাজ তিন বছর মেয়াদের চুক্তিতে বিদেশি একটি কোম্পানিকে ভাড়া দেয়। তিন বছরের চুক্তিতে দেয়া জাহাজগুলো ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বের নানা দেশে জ্বালানি তেল পরিবহন করে নিজেদের সক্ষমতা দেখিয়েছে। ইতোমধ্যে বিদেশি কোম্পানির সাথে বিএসসির করা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর তিন মাস করে মেয়াদ বাড়িয়ে জাহাজগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে।
এখন বিএসসি থেকে বলা হয়েছে, বিপিসি যদি তাদের জাহাজের মাধ্যমে জ্বালানি তেল পরিবহন করে তাহলে তারা আর চুক্তির মেয়াদ বাড়াবে না। বিপিসির জ্বালানি তেল পরিবহনেই জাহাজগুলো নিয়োজিত করা হবে। বিএসসির অয়েল ট্যাংকার এমটি বাংলার অগ্রযাত্রা, এমটি বাংলার অগ্রদূত ও এমটি বাংলার অগ্রগতি প্রতি মাসে অন্তত ২ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিবহনে সক্ষম।
বিএসসির জাহাজে বিপিসির জ্বালানি তেল পরিবহনের ব্যাপারে গত রোববার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিএসসি প্রতি মাসে দুই লাখ টন জ্বালানি তেল পরিবহন করতে পারবে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, এতে বছরে অন্তত ২৪ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিবহন সম্ভব হবে। বিপিসি থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেলে বিএসসি তাদের তিনটি জাহাজ আগামী জানুয়ারি থেকে এখানে মোতায়েন করতে পারবে। এই উদ্যোগ সফল হলে বিএসসির জাহাজগুলো নিজেদের ব্যবস্থাপনায় চলাচল করতে পারবে। বিপিসিরও কয়েকশ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। জ্বালানি তেল পরিবহনের খাতটি দেশীয় জাহাজের মাধ্যমে পরিচালিত হলে বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে বিপিসির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বিএসসির জাহাজে জ্বালানি তেল পরিবহনের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। ডলার সংকটের এই সময়ে এমন একটি ইস্যু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।