দেশব্যাপী রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের জন্য বর্তমান সরকার রেল খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় দিনদিন রেলের উন্নয়ন খাতে বাড়ছে বরাদ্দ। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিকায়নে বড় বড় মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে নতুন নতুন ইঞ্জিন ও বগি।
পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম-ঢাকা ও চট্টগ্রাম-সিলেট, ময়মনসিংহ রুট ছাড়া পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন ট্রেন। যাত্রী সেবার মান উন্নয়নে আধুনিক ইঞ্জিন ও বগি বিদেশ থেকে আসলেও বিড়ম্বনা যেন পিছু ছাড়ছে না রেলওয়ের। প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা পাচ্ছে না যাত্রীরা। নতুন-নতুন ইঞ্জিন আর বগিতে চড়ে ভ্রমণের সময় পথে পথে বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। শত শত কোটি টাকায় কেনা আধুনিক ইঞ্জিন যাত্রা পথে বিকল হয়ে পড়ছে। দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। বাদ যাচ্ছেন না রেলের কর্মকর্তারাও। কারণ বর্তমান সরকার রেল খাতের আধুনিকায়নে অগ্রাধিকার দেয়ায় সরকারের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিমান কিংবা নিজস্ব গাড়ির পরিবর্তে রেলকেই নিরাপদ বা স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণের জন্য বেছে নেন। তবে নতুন নতুন কেনা ইঞ্জিন যখন পথিমধ্যে যাত্রী নিয়ে বিকল হয়ে পড়ে তখন যাত্রীদের কাছে সেই স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণ বিড়ম্বনা কিংবা আতঙ্কের হয়ে পড়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে যাত্রী নিয়ে পথের মধ্যে ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়া কিংবা নতুন কোচসহ বগি লাইনচ্যুত হওয়া বা গেটকিপারের অবহেলায় ক্রসিং এলাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার ঘটনা প্রায় সময় ঘটছে। গত ১৪ আগস্ট সকালে যাত্রী নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর ছেড়ে যাচ্ছিল সাগরিকা এক্সপ্রেস। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ট্রেনটি লাকসাম স্টেশনে পৌঁছালে ৩০১০ মডেলের ইঞ্জিনটি বিকল হয়ে পড়ে। ৩০১০ মডেলের সেই ‘ডেড ইঞ্জিন’ টেনে চট্টগ্রাম আনতে গিয়ে বিকেলে আগুন ধরে যায় নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনে। সকালে ইঞ্জিন বিকল আর বিকেলে ইঞ্জিনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে লোকোমাস্টার, সহকারী লোকোমাস্টার ও গার্ডের তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তায় এতে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রায় এক ঘণ্টা পর অন্য একটি ইঞ্জিন লাগিয়ে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ট্রেনটি। চট্টগ্রামে আসার পথে কুমিল্লা নাঙ্গলকোট স্টেশনের আউটারে নাসিরাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনে আগুন ধরে গেলে ট্রেনে থাকা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। শুধু এই ঘটনাই শেষ নয়, চলতি পথে ‘৩০০০ সিরিজের’ লোকোমোটিভ গুলো যাত্রাপথে হরহামেশা বিকল হয়ে পড়ে। এ নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষও বেশ অস্বস্তিতে আছেন। এর আগে গত ২৫ জুলাই রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন ও ১০-১২ জন রেলওয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিকল হয়ে যায় ট্রেনের সেই ৩০০০ সিরিজের ৩০০৫ মডেলের ইঞ্জিনটি। এ কারণে সেদিন ট্রেনটির গন্তব্যে পৌঁছাতে দেড় ঘণ্টা দেরি হয়।
একইভাবে ২৬ জুলাই ৩০০৬ সিরিজের ইঞ্জিন নিয়ে যাত্রা পথে বিকল হয়ে পড়ে সাগরিকা এক্সপ্রেস। এর আগে ১ মার্চ ঢাকা-চট্টগাম রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের ৩০১৬ সিরিয়ালের ইঞ্জিনটি হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ে। অপরদিকে ২৫ ফেব্রুয়ারি সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের ৩০১১ সিরিজের ইঞ্জিনটি যাত্রাপথে বিকল হয়ে পড়ে। ৩০০০ সিরিজের নতুন ইঞ্জিন বিকলের কথা স্বীকার করেছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন কর্মকর্তা এবং মেকানিক্যাল বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
৩০০০ সিরিজের ইঞ্জিন গুলো কেনা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি থেকে ইতোমধ্যে যে সব ইঞ্জিন দেশে এসেছে সে গুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের ৭০টি মিটার গেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ সংগ্রহ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (যে প্রকল্পটি ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে) প্রকৌশলী আহমেদ মাহবুব চৌধুরী।