সেইফটি ইঞ্জিনিয়ার এসএসসি পাস

গার্ডার দুর্ঘটনা ক্রেন চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী ঠিকাদারের শাস্তি হলে মেনে নেবে চীন

| শুক্রবার , ১৯ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

বিআরটি প্রকল্পের ঠিকাদারি কোম্পানি চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ কর্পোরেশনে (সিজিজিসি) সেইফটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গত বছর নিয়োগ পান জুলফিকার আলী শাহ। বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা থেকে উত্তরার আজমপুর পর্যন্ত নির্মাণকাজে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব ছিল তার। গার্ডার চাপায় পাঁচজনের মৃত্যুর মামলায় জুলফিকারকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব জানাচ্ছে, তার কোনো কারিগরি শিক্ষা নেই, তিনি এসএসসি পাস করেই এতো বড় প্রকল্পের সেইফটি ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব পান। এদিকে ক্রেন দুর্ঘটনায় গাফিলতির জন্য চীনা ঠিকাদারের শাস্তি হলে চীন তা মেনে নেবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে সে দেশের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। খবর বিডিনিউজের।
দুদিন আগের ওই ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করার পর গতকাল বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলছেন, সিজিজিসির সেইফটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ৩৯ বছর বয়সী জুলফিকার ২০২১ সালে নিয়োগ পান। অথচ তিনি এসএসসি পাস। এত বড় প্রকল্পের সেইফটি ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার মত কোনোরকম প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা বা প্রশিক্ষণ তার নেই। প্রকল্পের বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা থেকে উত্তরার আজমপুর এলাকা পর্যন্ত নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার দিনে ভারী গার্ডার স্থাপনের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিনি কোনো ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী বসাননি। গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত লোকও নিয়োগ করেননি। পাঁচ বছরের এ প্রকল্প ১০ বছরেও শেষ না হওয়ায় তা চরম গণভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঙ্গে ব্যয় বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। প্রকল্পের আকার এখন ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকায় দাঁড়ালেও র‌্যাবের তথ্য বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঝুঁকি নিয়েই খরচ কমানোর চেষ্টা করে গেছে। দুর্ঘটনাস্থলে যে ক্রেনটি ব্যবহার করা হচ্ছিল, সেটির বয়স অন্তত ২৬ বছর। র‌্যাবের কর্মকর্তা আল মঈনের ভাষ্য, তারা আনুমানিকভাবে বলেছে যে ক্রেনটি ৯৬-৯৭ সাল থেকে ব্যবহার করা হচ্ছিল, এটি মেয়াদোত্তীর্ণ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বক্তব্য অনুযায়ী ওই ক্রেন দিয়ে সর্বোচ্চ ৪৫ থেকে ৫০ টন ওজন কম্ফোর্টেবলি তোলা যায়। আর ওই ক্রেনটি দিয়ে যখন সোজাসুজিভাবে না তুলে তেরছাভাবে তোলা হয়, তখন সেটির ভার বহন সক্ষমতা আরও কমে যায়। সেখানে যে গার্ডারটি ছিল সেটির আনুমানিক ওজন ৬০ থেকে ৭০ টন। যার কারণে যিনি ক্রেনটি চালাচ্ছিলেন, সেই হেলপার রাকিব নিয়ন্ত্রণ হারান।
জুলফিকারের তত্ত্বাবধানে দুর্ঘটনাস্থলে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক ম্যান হিসেবে রুবেল ও আফরোজ নামে দুজন নিয়োজিত ছিলেন। তারাও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেননি। রুবেল ও আফরোজকে নেওয়া হয়েছে ফোর ব্রাদার্স গার্ড নামের একটি নাম সর্বস্ব কোম্পানি থেকে। র‌্যাব জানিয়েছে, এ কোম্পানির কোনো লাইসেন্স নেই। রুবেল তিন মাস আগে এবং আফরোজ গত মাসে ফোর ব্রাদার্স গার্ডে যোগ দেন। যোগদানের পর তাদের নিরাপত্তা বা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ না দিয়েই কাজে পাঠানো হয়।
মঈন বলেন, এখানে কমপক্ষে দুজন সিগন্যাল অপারেটর থাকার কথা ছিল, যারা মূলত ক্রেনকে গাইড করে। কিন্তু ঘটনার সময় এ ধরনের কোনো সিগন্যাল অপারেটর সেখানে ছিল না। এই গার্ডার তোলার ক্ষেত্রে কাউন্টার লোড ব্যবহার করা উচিৎ ছিল, যেটা হয়নি। আরেকটি ক্রেইন স্ট্যান্ডবাই রাখা উচিৎ ছিল, সেটিও রাখা হয়নি।
এদিকে উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন দুর্ঘটনায় গাফিলতির জন্য চীনা ঠিকাদারের শাস্তি হলে চীন তা মেনে নেবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে সে দেশের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তিনি এই বার্তা দিয়েছেন বলে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শেখ ওয়ালিদ ফয়েজ জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, চীনের রাষ্ট্রদূত গার্ডার দুর্ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো আপত্তি থাকবে না বলে জানান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমোবাইল চোর চক্রের হোতা ও দুই দালাল আটক
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে আগুনে পুড়েছে তিন বসতঘর