রাউজানে অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ তিন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

টাকার বিনিময়ে করতো ডাকাতি-খুন, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধ একজনের বিরুদ্ধে রয়েছে পুলিশ ক্যাম্প লুটসহ ১৭ মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৮ আগস্ট, ২০২২ at ৭:৪০ পূর্বাহ্ণ

রাউজানে অত্যাধুনিক বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রসহ তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় অভিযান টের পেয়ে আরও ৭-৮ জন পালিয়ে যায়। গতকাল বুধবার ভোরে উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের পলোয়ান পাড়া এলাকায় একটি বসতঘরে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন নুরুল আবছার (৪৩), কামরুল হাসান টিটু (৫৫) ও গিয়াসউদ্দিন বাবলু ওরফে সাদ্দাম (৩০)। এদের মধ্যে নুরুল আবছার ও কামরুলের বাড়ি রাউজান, সাদ্দামের বাড়ি হাটহাজারী।
অভিযানে উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি দুটি একে-২২ রাইফেল ও ৯৫ রাউন্ড বুলেট, ইতালিতে তৈরি একটি ৭ দশমিক ৬৫ সেমি অটোমেটিক পিস্তল ও ৮ রাউন্ড বুলেট, একটি দেশীয় রাইফেল ও এক নলা বন্দুক এবং ১০ রাউন্ড বুলেট ও ১০ রাউন্ড শটগানের কার্তুজ। এছাড়া একটি মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুজন মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ক্যাডার হিসেবে এক সময় পরিচিত ছিল। বর্তমানে তারা সাকার ভাই বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্যাডার হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিত। চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক গতকাল সকালে এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সন্ত্রাস কবলিত যে জনপদ এখন একটি শান্তির জনপদে পরিণত হয়েছে সেই শান্তির জনপদকে আবারও উত্তপ্ত করার একটি প্রচেষ্টা চলছে বলে আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে। এই বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর বিস্তারিত জানা যাবে। তাদের সঙ্গে কারা জড়িত তা তদন্ত করে বের করে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী গঠিত রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) মাধ্যমে রাউজানে কামরুলের উত্থান হয়েছিল। এনডিপি ক্যাডার ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ফজল হকের সহযোগী হিসেবে তার পরিচিতি ছিল। পরবর্তী সময়ে সাকা চৌধুরী এনডিপি বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিলে ফজল হকের সঙ্গে কামরুল এবং নুরুল আবছারও ওই দলে ভিড়ে যায়। এনডিপির ক্যাডার হিসেবে কামরুল ১৯৯৬ সালে নোয়াপাড়া পুলিশ ক্যাম্প লুট ও পুলিশ হত্যা, চাঞ্চল্যকর শ্রীকান্ত রক্ষিত হত্যা এবং নোয়াপাড়ার আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হত্যাসহ আটটি খুনের ঘটনায় সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে প্রায় ১৭টি মামলা আছে। কামরুল ও নুরুল আবছার পরবর্তী সময়ে গিয়াসউদ্দিন কাদেরের ক্যাডার হিসেবে স্থানীয়ভাবে পরিচিতি পায়। গ্রেপ্তার গিয়াসউদ্দিন বাবলু ওরফে সাদ্দাম টাকার বিনিময়ে ডাকাতি-খুন, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে অংশ নেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক জানান, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রগুলো তারা ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত করার জন্য রেখেছিল বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য অস্ত্রগুলো আনা হয়েছিলো কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, রাজনৈতিকভাবে দেশে অস্থিতিশীলতার বিষয়ে এখনও কোনো তথ্য পায়নি। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে রাউজান কেন্দ্রিক ঘটনা। আমরা সেগুলো তদন্ত করে সব বের করা হবে। যে তথ্য পাওয়া যাবে সেগুলো পরে জানানো হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বামীর মোটরসাইকেল থেকে পড়ে স্ত্রী আহত
পরবর্তী নিবন্ধপুকুর পাড়ে পড়েছিল সাবেক ইউপি সদস্যের মরদেহ