বাঙালি জাতির মুক্তির দূত

মোহাম্মদ জহির | মঙ্গলবার , ১৬ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

আমি নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মনে করি এটা ভেবে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলাম। এই মহান নেতার সান্নিধ্য পাওয়ার দুটো স্মৃতি আমার জীবনের পরম পাওয়া। নিজেকে আরো সৌভাগ্যবান মনে হয় বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৯৮৪ সালে আমাদের রাউজানের বাড়িতে আগমণ ও রাত্রী যাপন করেন। সে সময় তারও সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছিল।
আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর প্রয়াত সম্পাদক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কার (মরণোত্তর) প্রদান করে। বাবার সাথে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠতার কারণে বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছিল।

১৯৭৪ সালে বাবা তখন গভর্নর। ঐ সময়কার দুটি ঘটনা আমার স্মৃতিপটে আজো ভেসে ওঠে। বঙ্গবন্ধু বেতবুনিয়া ভূ উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন করে ফেরার সময় রাউজানের এম পি হিসাবে আমার বাবা রাউজান কলেজ মাঠে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা প্রদান করেন। তখন স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে ফুল দিয়ে বরণের কর্মসূচি রাখেন। সে কর্মসূচিতে অংশ নিতে বাবা আমাকে রাউজান নিয়ে যান। সেদিন বঙ্গবন্ধুকে ফুল দিয়ে আমরা বরণ করেছিলাম।

সে সময় একবার বাবার সাথে ঢাকায় গিয়েছিলাম। বাবা আমাকে বঙ্গবন্ধুর কাছে নিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলে বঙ্গবন্ধু আমাকে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেন। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের হাতের স্পর্শ আজো আমি অনুভব করি। তখন রমজান মাস। ইফতারের সময় হয়ে এলে বঙ্গবন্ধু আমাদের সাথে নিয়ে ইফতার করতে বসেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে ইফতারি করতে গিয়ে খুব অবাক হয়ে গেলাম। আমার ধারণা ছিল বঙ্গবন্ধু দেশের রাজা। গল্পে পড়েছি আর শুনেছি রাজা বাদশাদের খাবারে থাকে শাহী আয়োজন। বঙ্গবন্ধুর ইফতারের মেনুতে তেমন আয়োজন থাকবে বলেই আমার ধারণা ছিল। কিন্তু দেখি তার ইফতারির মেনুতে আছে সাধারণ মানুষের মতোই ছোলা, পেঁয়াজু, মুড়ি। বঙ্গবন্ধুকে দেখলাম খুব তৃপ্তির সাথে সে সব খাচ্ছেন। সেদিন বঙ্গবন্ধুর সাথে ইফতার করতে করতে ছোট্ট আমি ভাবছিলাম বঙ্গবন্ধু এতো সাধারণ খাবার খান!

আজ ভাবলে অবাক লাগে ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও বঙ্গবন্ধু কত সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। যা আজকাল কল্পনায় করা যায় না। সারা জীবন তিনি সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করেছেন। ক্ষমতার শীর্ষে গিয়েও তিনি সাধারণ মানুষকে ভুলেননি। তাইতো তাঁর জীবন- যাপন, আচরণে কোন পরিবর্তন আসেনি। সাধারণ মানুষের মতোই তিনি জীবন যাপন করতেন। বাবার কারণে বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসা জন্মে ছোটবেলা থেকেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে এই মহান নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলে সেই বালকবেলায়ও খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। ক্ষোভে দুঃখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। যে সময় বঙ্গবন্ধুর নাম নিতেও মানুষ ভয় পাচ্ছিল ঠিক সে সময় আমার বাবা অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ প্রতি বছর ১৫ আগস্ট কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদে বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করতেন। আমি সে দোয়া মাহফিলে অংশ নিতাম। ১৯৮৫ সালে সমমনা বন্ধুদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ গঠন করি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে কিশোর যুবকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করি।এক সময় বাংলার মাটিতে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সদর্প বিচরণ দেখে হতাশ হতাম। ভাবতাম এতবড় পাপের বিচার কি এই মাটিতে হবে না। জাতি কি দায় মুক্ত হবে না? সুখের বিষয় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘাতকদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। এখনো দণ্ড মাথায় নিয়ে যারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের ধরে এনে দণ্ড কার্যকর করা হবে সে প্রত্যাশা গোটা জাতির।

বঙ্গবন্ধু বলেছেন ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই’। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করতে পারলে আমরা একেকজন সোনার মানুষে পরিণত হব। আগেকার নেতা কর্মীরা বঙ্গবন্ধুকে যে ভাবে ধারণ করতেন নতুন প্রজন্মকে সেভাব দেখিনা। নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দীক্ষিত করতে হবে। তারা যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করতে পারে তবে একেকজন সোনার মানুষে পরিণত হবে। আর সোনার মানুষেরাই গড়ে তুলতে পারবে বঙ্গবন্ধুর স্বাপ্নের সোনার বাংলা। তাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নবীনদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। কারণ তারাই আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দেবে। বাঙালি জাতির মুক্তির দূত এই মহান নেতার প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা।
লেখক : সম্পাদক, সাপ্তাহিক স্লোগান

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১৫ই আগস্ট ইতিহাস দেয় ডাক
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু : অবিনশ্বর ও অমর সত্তা