ঘরে অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে আছে; তাই প্রতিবেশী বকুল আলীর ছেলে নাহিদকে উচ্চশব্দে গান বাজাতে নিষেধ করেছিলেন মুকুল আলী। তবে তার আগে থেকেই বকুল আলীর সাথে তার শত্রুতা চলছিল। সেই জেরেই খুন হতে হয় মুকুল আলীকে। ঘটনাটি রাজশাহীতে ঘটলেও হত্যাকাণ্ডের পর বকুল আলী সপরিবারে চট্টগ্রাম চলে আসেন। কিন্তু নিজেদের রক্ষা করতে পারেননি। র্যাব-৭, চট্টগ্রামের হাতে ধরা পড়তে হয় অভিযুক্ত ছেলে, বাবা ও মাকে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রাজশাহী মহানগরের শাহমখদুম থানার হরিষার ডাইং এলাকার আছের উদ্দিনের ছেলে মো. বকুল আলী (৪৫), তার স্ত্রী আমেনা (৪০) ও ছেলে মো. নাহিদ হোসেন (২০)।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, গত ১৫ থেকে ২০ বছর যাবত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মুকুল আলী ও বকুল আলীর পরিবারের মধ্যে বিরোধ ছিলো। ১ আগস্ট মুকুল আলীকে হত্যার পর বকুল আলী ও তার পরিবার রাজশাহীতে আত্মগোপনে ছিলো। তিনজন একসঙ্গে গত ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম আসে। পরে সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। বকুল ও নাহিদ পেশায় নির্মাণ শ্রমিক। চট্টগ্রামে এসে তারা একই পেশায় যুক্ত হন। উত্তর সলিমপুর এলাকায় দুই রুমের টিনশেড একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার (১৩ আগস্ট) বিকেলে সীতাকুণ্ড থানার মাদাম বিবিরহাট এবং উত্তর সলিমপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা পরিচয় গোপন করে বাসা ভাড়া নিয়েছিলো। বাসার মালিক ভাড়া দেওয়ার সময় কোনো ধরনের আইডি কার্ড নেননি, খোঁজ খবরও নেননি। তিনি আরও জানান, গত ১ আগস্ট সাড়ে নয়টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানার হরিষার এলাকায় নাহিদ তার বাড়িতে উচ্চশব্দে গান শুনছিলেন। প্রতিবেশী মুকুল আলীর মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় মুকুল আলী নাহিদকে উচ্চশব্দে গান বাজাতে নিষেধ করেন। নাহিদ তাৎক্ষণিক শব্দ কমিয়ে দিলেও মুকুল আলী সেখান থেকে চলে গেলে আবারও শব্দ বাড়িয়ে দেন। মুকুল আলী পুনরায় নাহিদের বাড়িতে গিয়ে উচ্চশব্দে গান বাজাতে নিষেধ করলে নাহিদ, তার বাবা বকুল আলী, মা ও তার বোন মিলে মুকুলকে গালিগালাজ করেন।
একপর্যায়ে নাহিদ ও তার পরিবারের সদস্যরা লোহার রড দিয়ে মুকুলের মাথায় আঘাত করেন। এ ছাড়া চাকু দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে গুরুতর জখম করেন। মুকুলের চিৎকার শুনে তার ছোট ছেলে শাহীন আলম ও জামাই আলমগীর সেখানে গেলে তাদেরকেও মারধর ও চাকু দিয়ে আঘাত করে জখম করা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা মুকুলকে উদ্ধারে এগিয়ে গেলে আসামিরা পালিয়ে যায়।
গুরুতর আহত মুকুলকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতেই তিনি মারা যান। মুকুল আলীর ছেলে মো.শামীম ইসলাম বাদী হয়ে রাজশাহীর শাহমখদুম থানায় ৮ জনের নাম উল্ল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ২ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। এরা হলেন- বকুল আলীর মেয়ে খাদিজা, ভাইয়ের ছেলে মিঠুন ও মোমিন এবং আত্মীয় সোহেল ও পলাশ। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার বকুল, আমেনা ও নাহিদকে নিতে এসেছে রাজশাহী পুলিশের একটি দল। তাদের কাছে আসামিদের হস্তান্তর করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, চট্টগ্রামবাসীকে অনুরোধ করবো বাসা ভাড়া বা চাকরি দেওয়ার আগে খোঁজখবর নিয়ে দেওয়ার জন্য। সামপ্রতিক সময়ে দেখা গেছে, অপরাধীরা অপরাধ করে চট্টগ্রামে এসে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছে। এতে চট্টগ্রামের বদনাম হচ্ছে। বাসা ভাড়া দিলে আইডি কার্ডের কপি জমা নিতে হবে।