চালের বাজারেও উত্তাপ

প্রতি বস্তায় সর্বোচ্চ বেড়েছে ৫০০ টাকা ।। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি সিন্ডিকেটও দায়ী!

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৫ আগস্ট, ২০২২ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে চালের রেকর্ড দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের চালের মূল্য বস্তায় সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের চাল উৎপাদন খুব একটা খারাপ হয়নি। এছাড়া ভারত থেকেও প্রচুর পরিমাণে চাল আমদানি হয়েছে। এই সময়ে কেবল পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে এভাবে দাম বাড়ানো অযৌক্তিক।

চালের আড়তদাররা বলছেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর দেশের উত্তরাঞ্চলীয় মোকামগুলো থেকে চাল পরিবহনে ৪-৫ হাজার টাকা বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। এই বাড়তি ভাড়া চালের দামের সাথে যোগ হচ্ছে। নগরীর দুই প্রধান চালের আড়ত চাক্তাইয়ের চালপট্টি ও পাহাড়তলীতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে জিরাশাইল সিদ্ধ, নাজিরশাইল সিদ্ধ, স্বর্ণা সিদ্ধ, পাইজাম সিদ্ধ, মিনিকেট সিদ্ধ, মিনিকেট আতপ, কাটারিভোগ সিদ্ধ, কাটারিভোগ আতপ, বেতি আতপ ও মোটা সিদ্ধের দাম বস্তায় সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালের আড়তদাররা জানান, বর্তমানে পাইকারিতে জিরাশাইল সিদ্ধ বস্তায় ৪০০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়। এছাড়া মিনিকেট সিদ্ধ ৫০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৮০০ টাকা এবং মিনিকেট আতপ ২৫০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকায়। অন্যদিকে পাইজাম সিদ্ধ ৪০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৮০০ টাকা, স্বর্ণা সিদ্ধ ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা, বেতি আতপ ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা, পাইজাম আতপ ২০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৭০০ টাকা, মোটা সিদ্ধ প্রতি বস্তা ৪০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৩০০ টাকা, নাজিরশাইল সিদ্ধ ৪০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৯০০ টাকা, কাটারিভোগ আতপ ৪০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ৯০০ টাকা এবং কাটারিভোগ সিদ্ধ ৪০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ৩ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রাম রাইচ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক উল্লাহ বলেন, পরিবহন ভাড়া বাড়ার পাশাপাশি বর্তমানে ধানের দামও বেড়েছে। ফলে চালের বাজার বাড়ছে। বর্তমানে ধানের মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৫০ টাকায়।

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, ডিজেলের কারণে স্বাভাবিকভাবে পরিবহন ভাড়া বেড়ে গেছে। তবে পরিবহন ভাড়া বাড়ার চেয়েও উত্তরাঞ্চলের চালের মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে দাম সর্বোচ্চ বৃদ্ধি করেছেন। মিল মালিকদের সাথে যুক্ত হয়েছে কিছু মধ্যস্বত্বভোগী এবং কিছু শিল্পগ্রুপ, যারা কৃষকের কাছ থেকে ধান-চাল কিনে মজুদ করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নাম দিয়ে বাজারজাত করছে। এদের বিভিন্ন বিক্রয়কর্মী বাজার ঘুরে ঘুরে বলছেন, সামনে বাজার আরো বেড়ে যাবে। আপনি আরো চাল কিনে রাখুন।

চট্টগ্রাম চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম আজাদীকে বলেন, ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন ভাড়া বেড়েছে। এটার সরাসরি প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। এছাড়া ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে ভারত থেকে চাল আমদানিতেও ব্যয় বেড়েছে। কম দামে চাল আমদানি হলে দেশীয় চালের দামও কমে যেত।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন আজাদীকে বলেন, ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাতে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে থাকেন। পরিবহন ব্যয় যত বেড়েছে, সেই হিসেব দ্বিগুণ করে তারা দাম বৃদ্ধি করেন। আসলে আমাদের দেশে বাজার মনিটরিংটা খুব দুর্বল, যার সুযোগ সবসময় ব্যবসায়ীরা নিয়ে থাকেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতারা আন্দোলন করুক, কাউকে যেন গ্রেপ্তার করা না হয় : প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধডলার কেনা-বেচায় দামের ব্যবধান হতে পারবে ১ টাকা