অর্ডার কম, বেড়েছে উৎপাদন খরচ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১২ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

জ্বালানি তেল ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি, লোডশেডিং ও অর্ডার কমে যাওয়াসহ নানামুখী সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প খাত। দেশের পোশাক খাতে প্রথম ধাক্কা আসে করোনা শুরু পর পর। সেই সময় ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতারা প্রচুর পরিমাণ অর্ডার বাতিল করে দেন। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে বাতিল হওয়া প্রায় অর্ডার ফেরত আসে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। ফলে ইউরোপ-আমেরিকায় পোশাক বিক্রির কোনো শো-রুম কিংবা আউটলেট বন্ধ না হলেও অস্বাভাবিকভাবে বিক্রি কমে গেছে। অপরদিকে আমাদের দেশে বছর না ঘুরতে দুই দফায় ডিজেলের দাম লিটারে ৪৯ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে পণ্য পরিবহনের ব্যয় আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে পোশাক কারখানার উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত পোশাক কারখানা ছিল ৬৯৯টি, চালু ছিল ৬১০টি। বাকি ৮৯টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। সে বছর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ৩৯ শতাংশ। ২০১৫ সালে নিবন্ধিত পোশাক কারখানা ছিল ৭৬৫টি, চালু ছিল ৪৫৫টি। বাকি ৩১০টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয় ১৪ শতাংশ। গত ২০২০ সালে নিবন্ধিত পোশাক কারখানা ছিল ৬৯৩টি, চালু ছিল ২৯৩টি। বাকি ৪০০টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। সে বছর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫শতাংশ। অন্যদিকে গত ২০২১ সালে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত পোশাক কারখানা ছিল ৬৯৮টি, চালু ছিল ৩০৯টি। বাকি ৩৮৯টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তখন রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশ।
জানতে চাইলে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র পরিচালক গাজী মো. শহীদুল্লাহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, পোশাক শিল্প মালিকরা বর্তমানে বহুমুখী সংকট পার করছেন। ইউরোপ-আমেরিকায় অর্ডার কমছে। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কারখানায় উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এ ছাড়া এখন লোডশেডিং বেড়ে গেছে। জেনারেটর চালিয়ে কাজ করতে হয়। কারখানা চালু না রাখলে তো পরবর্তী অর্ডার পাওয়া যাবে না।
বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, বর্তমানে একদিকে লোডশেডিং এবং অপরদিকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পোশাক শিল্প কারখানা মালিকরা খুব খারাপ সময় পার করছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর পর ইউরোপে পোশাকের বাজারে খুব মন্দাবস্থা চলছে। ইউরোপের বাজারে অর্ডারের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। এমনিতেই আমরা যে সব অর্ডার নিচ্ছিলাম, যাতে সেগুলোতে বেশি লোকসান না হয় সেই হিসাবই করছি। লাভ তো দূরের কথা। এ ছাড়া বর্তমানে চীনের প্রতিবেশি দেশ তাইওয়ানের সাথে উষ্ণ সম্পর্কও পোশাক কারখানা মালিকদের চিন্তা বাড়িয়েছে। কারণ আমাদের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কাঁচামাল আসে চীন থেকে। এখন চীন থেকে কাঁচামাল আসতেও সময় লাগছে। আগে যে কাঁচামাল ১৫ দিনে আসতো, সেটি ক্ষেত্রবিশেষে মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। এ ভাবে চলতে থাকলে পোশাক শিল্প মালিকদের টিকে থাকাটাও বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাইড্রোজেন পারঅক্সাইড পরিবহনে সিঙ্গাপুরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার
পরবর্তী নিবন্ধ১০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে নোটিশ দিয়েছেন সেই জজ মিয়া